Sahitya Academy Award: শীর্ষেন্দু থেকে রাস্কিন বন্ড, ‘২১-এ সাহিত্যে সেরার শিরোপা পেলেন যাঁরা…
Literature: ২০০৯ সালে ভারত সরকার পুরস্কারের মূল্যমান ১ লক্ষ টাকা বলে ঘোষণা করা হয়েছে। সাহিত্য অকাদেমী ফেলোশিপের পর এটি ভারত সরকার প্রদত্ত দ্বিতীয় সর্বোচ্চ সাহিত্য সম্মাননা।
কলকাতা: বাংলায় ‘সাহিত্য়’ শব্দটি এসেছে ‘সহিত’ থেকে। সঙ্গে করে নিয়ে যায় যে, তাই সাহিত্য। সহজ সংজ্ঞার্থে এমনটা বলাই যায় বটে। সেই সাহিত্যের জগতে একের পর এক বিনিসুতোর মালা গেঁথে এক প্রকাণ্ড দুনিয়াকে কলমের আঁচড়ে মনোবন্দি করতে পারেন যাঁরা তাঁরা সাহিত্যিক। তাঁদের সম্মানার্থে তাই বিশেষ পুরস্কারও রয়েছে ভারত সরকারের ঝুলিতে। ভারতবর্ষে সাহিত্য়ের দ্বিতীয় সর্বোত্তম সম্মান সাহিত্য অকাদেমি পুরস্কার (Sahitya Academy Award)। কোভিড আবহেও যে সকল সাহিত্যিকরা সেই তালিকা ছিনিয়ে নিলেন তাঁদের মধ্য়ে রয়েছেন বাংলার শীর্ষেন্দু থেকে শুরু করে জনপ্রিয় শিশু সাহিত্যিক রাস্কিন বন্ড।
২০২১-এ সেরার তালিকায় যাঁরা উঠে এলেন
১. শীর্ষেন্দু মুখোপাধ্যায় (বাংলা)
জনপ্রিয় কথাসাহিত্য়িক শীর্ষেন্দু মুখোপাধ্যায় শিক্ষকতা দিয়ে তাঁর কর্মজীবন শুরু করেন। পরবর্তীতে তিনি আনন্দবাজার পত্রিকায় সাংবাদিকতাও করেছেন। সেই সময় থেকেই লেখার শুরু। সাহিত্য় অকাদেমি ছাড়াও শীর্ষেন্দুর ঝুলিতে রয়েছে আনন্দ পুরস্কার, শরত্চন্দ্র পুরস্কার, বিদ্যাসাগর পুরস্কার ইত্যাদি।
২. রাস্কিন বন্ড (ইংরেজি)
জনপ্রিয় ইংরেজি শিশু-কিশোর সাহিত্য়িক যিনি তাঁর লেখনীর সারল্যে ও ‘হিউমর’-এ মন ভরিয়েছেন অগণিত পাঠকের সেই রাস্কিন বন্ডের (Ruskin Bond) লেখার শুরু তাঁর স্মৃতিগ্রন্থ ‘দ্য রুম অন দ্য রুফ’-এর মাধ্যমে। রাস্কিনের ঝুলিতে সাহিত্য অকাদেমি ছাড়াও রয়েছে পদ্মশ্রী পদ্মভূষণ-সহ একাধিক খেতাব।
৩. বিনোদ কুমার শুক্ল (হিন্দি)
হিন্দি সাহিত্যে থিয়েটার, একাঙ্ক নাটক, ফিচার ছবি-সহ একাধিক বিষয়ে সমৃদ্ধকরণ এবং ছোটগল্প, কবিতা উপন্যাস রচনার মাধ্যমে হিন্দি ভাষার পুনরুদ্ধার ও জনপ্রিয়তা প্রদানের নেপথ্য়ে সার্থকনামা বিনোদ শুক্ল। অধ্যাপক শুক্ল কেবল হিন্দিতেই নয়, অন্য়ান্য় ভাষাতেও বেশ কিছু বই লিখেছেন। তাঁর প্রথম কবিতা সংকলন ‘লগভগ জয় হিন্দ’প্রকাশিত হয় ১৯৭১-এ। মধ্য প্রদেশ সরকারের শিখর সম্মান, হিন্দি গৌরব সম্মানের মতো সম্মানে ভূষিত হয়েছেন বিনোদ।
৪. শ্রীমতি এম. লীলাবতী (মালয়ালম)
অধ্যাপিকা এম লীলাবতীর লেখনী যাত্রা শুরু ১৯৪৯। শিক্ষকতা দিয়ে জীবন শুরু করে পরে অধ্য়াপনাও করেছেন। সামলেছেন একাধিক পদও। প্রকাশিত বইয়ের সংখ্যা ২০ পার। সাহিত্য সমালোচক, বিদগ্ধ এই লেখিকা ভূষিত হয়েছেন পদ্মশ্রীতেও।
৫. ড. বালচন্দ্র নামড়ে (মারাঠি)
মারাঠি সাহিত্যিকে বালচন্দ্রের প্রকাশিত বইয়ের সংখ্যা ১৫। সাহিত্য সমালোচক, ঔপন্যাসিক বালচন্দ্র মহারাষ্ট্রে ‘লিটল ম্যাগাজিন আন্দোলন’-এর অন্যতম কাণ্ডারী। সাহিত্য অকাদেমি ছাড়াও তাঁর ঝুলিতে রয়েছে জ্ঞানপীঠ পুরস্কার, এইচ এন আপ্তে পুরস্কার ইত্যাদি
৬. ড. তেজওয়ান্ত সিং গিল (পাঞ্জাবী)
লেখক, গবেষক তেজওয়ান্ত সিং তাঁর রচনায় পঞ্জাবি ভাষাকে জনপ্রিয় করে তোলার নেপথ্যে বিশেষ নজির তৈরি করেছেন। প্রকাশিত বইয়েক সংখ্যা ছাড়িয়েছে প্রায় ২৫। গাবরিয়েল গার্তসিয়া মার্কেজ়ের ‘ওয়ান হান্ড্র্রেড ইয়ারস অব সলিচিউড’-এর পঞ্জাবি ভাষায় অনুবাদও করেছেন তেজওয়ান্ত।
৭. শ্রী স্বামী রামভদ্রচার্য (সংস্কৃত)
তুলসীদাস পরবর্তী তাঁর ধারার ধারক, সংস্কৃত পণ্ডিত, দার্শনিক, শিক্ষক স্বামী রামভদ্রচার্য্যের প্রকাশিত বইয়ের তালিকা ১০০। আধ্য়াত্মিক ভারতীয় সনাতনী রচয়িতা ও সংস্কৃতজ্ঞ এই লেখক ২২ টি ভাষায় পারদর্শী। বিখ্যাত ‘তুলসীপীঠ’-এর প্রতিষ্ঠাতা রামভদ্রচার্য্যের ঝুলিতে রয়েছে সর্বভারতীয় সংস্ক্ত সম্মেলনের পাঁচটি সোনার পদক, বাচস্পতি সম্মান, তুলসী সম্মান, দেবভূমি সম্মান ইত্যাদি।
৮. শ্রী ইন্দিরা পার্থসারথী (তামিল)
ভারতের প্রাক্তন সংস্কৃতি মন্ত্রী শ্রীযুক্ত ইন্দিরা পার্থসারথীর মূলত চিত্রকলা, শিল্প ও সংস্কৃতি বিষয়ক রচনার জন্য় বিখ্য়াত। তাঁর প্রকাশিত বইয়ের সংখ্যা ৪০ ছাড়িয়েছে। পদ্মশ্রী, সরস্বতী সম্মান, সঙ্গীত নাটক অকাদেমি পুরস্কার-সহ একাধিক পুরস্কার রয়েছে তাঁর ঝুলিতে।
ভারতে জাতীয় সারস্বত প্রতিষ্ঠান সাহিত্য অকাদেমী কর্তৃক ১৯৫৪ সাল থেকে ভারতের রাষ্ট্রভাষাগুলিতে রচিত অসামান্য সাহিত্যকীর্তিগুলির স্বীকৃতিস্বরূপ এই পুরস্কার প্রদত্ত হয়ে আসছে। এই পুরস্কারে (Sahitya Academy Award) অর্থমূল্য ৫০,০০০ টাকা। ২০০৯ সালে ভারত সরকার পুরস্কারের মূল্যমান ১ লক্ষ টাকা বলে ঘোষণা করা হয়েছে। সাহিত্য অকাদেমী ফেলোশিপের পর এটি ভারত সরকার প্রদত্ত দ্বিতীয় সর্বোচ্চ সাহিত্য সম্মাননা।
যেসকল ভাষা গুলি ভারতীয় সংবিধান দ্বারা অনুমোদিত সেই সব ভাষায় সাহিত্য অকাদেমী পুরস্কার প্রদত্ত হয় এবং সেগুলি হল – অসমীয়া, বাংলা, ডোগরি, ইংরেজি, গুজরাতি, হিন্দি, কন্নড়, কাশ্মিরি, কোঙ্কণি, মৈথিলি, মলায়লাম, মইথেই, মরাঠি, নেপালি, ওড়িয়া, পঞ্জাবি, রাজস্থানী, সংস্কৃত, সিন্ধি, তামিল, তেলুগু ও উর্দু।
এই পুরস্কারগুলি ভারতীয় সাহিত্য-মণীষার স্বীকৃতি এবং ভারতীয় সাহিত্যের পৃষ্ঠপোষক। ভারতীয় সাহিত্যের নতুন নতুন ধারা ও আন্দোলনকেও এই পুরস্কারগুলি স্বীকৃতি জানায়। এগুলি সমকালীন সাহিত্যরুচির প্রতিফলক এবং এগুলি ভারতীয় বোধের জন্মদাতা।