কলকাতা : এক দিন নয়, অত্যাচার হয়েছে দিনের পর দিন। কিশোরীর গোপনাঙ্গ মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে, এমনকী ক্ষুদ্রান্ত্রও পর্যন্ত ছিন্ন ভিন্ন হয়ে গিয়েছে। অত্যাচারের মাত্রা এত বেশি ছিল যে, মাটিয়ার কিশোরীর ধর্ষণকে কেউ কেউ নির্ভয়া-কাণ্ডের সঙ্গে তুলনা করছেন। একদিকে শারীরিক অবস্থা সঙ্কটজনক, অন্যদিকে মানসিকভাবে আতঙ্ক এখনও কাটিয়ে উঠতে পারেনি কিশোরী। তাই তার মন ভাল করার জন্য বিশেষ ব্যবস্থা করা হয়েছে আরজিকর হাসপাতালে। তাকে স্বাভাবিক জীবনে ফিরিয়ে আনাটাই এখন চিকিৎসকদের সামনে সবথেকে বড় চ্যালেঞ্জ। তাই মনের লড়াইতে যাতে সে জিতে যায়, সেই ব্যবস্থাই করা হচ্ছে।
অত্যাচারের স্মৃতি ভুলিয়ে নির্যাতিতার মন ভাল করতে তৎপর হয়েছে আরজিকর কর্তৃপক্ষ। পেডিয়াট্রিক ইনটেনসিভ কেয়ার ইউনিটের বিপ সাউন্ড যাতে ১১ বছরের কচিমনকে আর না ভয় ধরায়, সে জন্য পিকুতে -কে সাজানো হয়েছে ঘরোয়া পরিবেশের আদলে সাজ। নির্যাতিতার বেডের চারপাশে রাখা হয়েছে পুতুল। ঘরে যে ভাবে তাকে চুল বেঁধে দেওয়া হত, পরিচর্যা করা হত, সে ভাবেই ওয়ার্ডে পরিচর্যা করা হচ্ছে ছাত্রীর।
মাটিয়ার নির্যাতিতার মা হল তার পরম বন্ধু। স্কুলের, বন্ধুদের গল্প বলা হচ্ছে পঞ্চম শ্রেনির ওই ছাত্রীকে। সেই সব গল্পের হাত ধরে কিশোরীকে স্বাভাবিক জীবনে ফিরিয়ে আনতে আইসিইউ ওয়ার্ড হলেও সর্বক্ষণ মেয়ের বেডের পাশে থাকছেন মা। স্বাস্থ্য ভবন সূত্রের খবর, নির্যাতিতাকে ট্রমা থেকে বের করে আনা জরুরি বলে মনে করছেন চিকিৎসকেরা।
রক্তের বিভিন্ন মাপকাঠি, নাড়ির স্পন্দন, দেহে অক্সিজেনের মাত্রা আগের তুলনায় অনেকখানি স্বাভাবিক হলেও অস্থিরতা এখনও কাটেনি। পাশবিক অত্যাচারে শিশুমনে যে মানসিক চাপ পড়েছে তা থেকে বার করে আনা জরুরি। আর সে জন্যই হাসপাতালের ওয়ার্ডের পরিবেশ বদলে ফেলা হয়েছে। এমনকি, নির্যাতিতার বয়ান রেকর্ড করার জন্য মঙ্গলবার পুলিশ এলে তাঁদেরও ফিরিয়ে দেওয়া হয়েছে।
কলকাতা হাইকোর্টে মাটিয়া কাণ্ডে একটি জনস্বার্থ মামলা দায়ের হয়েছে। সেই সূত্রে ডিএসপি পদমর্যাদার এক আধিকারিক এবং এই কেসের তদন্তকারী অফিসার নির্যাতিতার বয়ান রেকর্ডের জন্য আরজিকরে গিয়েছিলেন। কিন্তু কিশোরীর মানসিক পরিস্থিতির কথা বিচার করে তা যে সম্ভব নয়, সে কথা পুলিশ আধিকারিকদের জানিয়ে দেওয়া হয়েছে। স্বাস্থ্য ভবন সূত্রের খবর, এখন ছাত্রীর সুস্থতাকে অগ্রাধিকার দেওয়া হচ্ছে। সে জন্য ইতিমধ্যে পাঁচ থেকে মেডিক্যাল বোর্ডের সদস্য সংখ্যা বাড়িয়ে ১০ করা হয়েছে। জেনারেল সার্জারি, পেডিয়াট্রিক সার্জারি, সাইকিয়াট্রি, মেডিসিন, পিকু, স্ত্রীরোগ, নেফ্রোলজি, প্লাস্টিক সার্জারি, চেস্ট মেডিসিন-সহ একাধিক বিভাগকে যুক্ত করা হয়েছে।
উত্তর ২৪ পরগনার মাটিয়া থানা এলাকার বাসিন্দা ওই নাবালিকাকে বৃহস্পতিবার রাত থেকেই খুঁজে পাওয়া যাচ্ছিল না। মেয়ে সারারাত বাড়ি না ফেরায় নির্যাতিতা নাবালিকার বাবা মাটিয়া থানায় অভিযোগও দায়ের করেন। পরে শুক্রবার রাতে মাটি থানা এলাকা থেকেই রক্তাক্ত, অচৈতন্য অবস্থায় উদ্ধার করা হয় কিশোরীকে। তাঁকে স্থানান্তরিত করা হয় কলকাতায়। কলকাতায় আর জি কর মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালে প্রায় দু ঘণ্টা ধরে তার গোপনাঙ্গে অস্ত্রোপচার করা হয়।