কলকাতা: করোনা পরিস্থিতিতে সবরকম ফি মকুবের দাবিতে ছাত্র বিক্ষোভের ঘটনা ঘটল বেহালা কলেজে। পড়ুয়াদের অভিযোগ, লকডাউন-অতিমারি পরিস্থিতিতে অনেকের অভিভাবকই কর্মহীন। বাড়িতে ঠিকমতো খাওয়া পরারই সংস্থান হচ্ছে না কারও কারও। তার মধ্যে আবার কলেজ বলছে ফি দিতেই হবে। এরই প্রতিবাদে শুক্রবার কলেজে বিক্ষোভ দেখাতে শুরু করেন তাঁরা। যদিও এ নিয়ে সংবাদমাধ্যমের সঙ্গে কোনও রকম কথা বলতে চাননি কলেজের অধ্যক্ষ শর্মিলা মিত্র।
অতিমারির কারণে গত প্রায় দেড় বছর হতে চলল বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের গেটে তালা ঝোলানো। স্কুল, কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয় সমস্তই বন্ধ। বেহালার পর্ণশ্রী এলাকায় অবস্থিত বেহালা কলেজও বন্ধ। পড়ুয়াদের অভিযোগ, কলেজ বন্ধ থাকলেও ফি মকুবে কোনও রকম সহানুভূতি দেখাতে রাজি নয় কলেজ কর্তৃপক্ষ। তারা সাফ জানিয়ে দিয়েছে, টাকা না দিলে পঠনপাঠন সম্ভব নয়। এই পরিস্থিতিতে নিজেদের শিক্ষার অধিকারের দাবিতে সরব হয়েছেন পড়ুয়ারা।
শুক্রবার সকাল থেকেই বেহালা কলেজের সামনে প্রতিবাদে শামিল হন এখানকার ছাত্র ছাত্রীরা। মূল গেটের সামনে বসে হাতে প্ল্যাকার্ড নিয়ে স্লোগান দিতে থাকেন। তাঁদের বক্তব্য, “করোনা পরিস্থিতি কলেজের সমস্ত সেমেস্টারের সমস্ত ফি মকুব করতে হবে কলেজ কর্তৃপক্ষকে। ছাত্র ছাত্রীদের কাছ থেকে জোর করে অস্বাভাবিক হারে সেমেস্টার ফি নেওয়া কখনওই মেনে নেওয়া হবে না।”
অভিযোগ, সকালে কলেজের মূল ফটকের সামনে নিরাপত্তা রক্ষী ও অন্যান্য কলেজ কর্মীরা সেখানকার পড়ুয়াদের আটকে দেয়। এ নিয়ে এক চোট কথা কাটাকাটি শুরু হয়। ছাত্র ছাত্রীদের দাবি, তাঁরা এই কলেজে পড়েন। সুতরাং নিজের শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে এ ভাবে তাঁদের কেউ বাধা দিতে পারেন না।
বেহালা কলেজের দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্র পীযূষ কামিল্যার অভিযোগ,”আমার থার্ড সেমেস্টার। করোনা পরিস্থিতিতে এ ভাবে সেমেস্টারের ফি দেওয়া বাড়ির লোকের জন্য খুবই কঠিন হয়ে দাঁড়াচ্ছে। আমাদের একটাই দাবি, এই ফি মকুব করতে হবে কলেজকে। যে কোনও পরিস্থিতিতেই এই সিদ্ধান্ত নিতে হবে কলেজকে।” পীযূষ জানান, তিনি বাংলা অনার্সের ছাত্র। তাঁর সেমেস্টার ফি ৩ হাজার ৬১০ টাকা। দশ শতাংশ ছাড় দেওয়া হয়েছে করোনা পরিস্থিতির জন্য।
পীযূষ বলেন, “এই ছাড়ে আমার সেমেস্টারের ফি হচ্ছে ৩ হাজার ২৪৯ টাকা। আমি প্রিন্সিপাল ম্যাডামকে বলি, ‘ম্যাডাম এই টাকা আমি দিতে পারছি না। তখন উনি আমাকে বলেন, ‘বাবা কী করে?’ বললাম বাবা রাজমিস্ত্রির কাজ করেন। তা শুনে উনি বলেন, ‘তোমার বাবা যেখানে কাজ করেন তার একটা কাগজ কিছু নিয়ে এসো।’ আমি বললাম, বাবা তো কোনও সংস্থায় কাজ করেন না। যেমন কাজ পান, লোকের বাড়ি বাড়ি গিয়ে কাজ! এ ভাবে কার কাছ থেকে আমি সই নিয়ে আসব? তখন উনি বলেন, এত কিছু আমি জানি না। এমনকী ম্যাডাম বলেন, আমার বাবা কলেজে এসে রাজমিস্ত্রির কাজ করবেন কি না। আমি তাতেও বলেছি, কেন করবে না। এখন বাবার কাজ নেই। আপনি লিখিত দিন তা হলেই করবে।”
অন্যদিকে কলেজেরই ছাত্রী অঙ্কিতা কয়ালের দাবি, “বহু বার আবেদন করেও এই ফি মকুবের দাবি মানতে চাননি ম্যাডাম। উনি বলেন, এই কলেজের যা উন্নতি সে আমাদের টাকাতেই তো হয়। এমনকী উনি বলেন, আমাদের মা-বাবা কেউ কোভিডে মারা গেলে তবে ফি মকুব করা হবে।” যদিও এই সমস্ত অভিযোগ নিয়ে কোনও রকম মন্তব্য করতে চাননি কলেজের অধ্যক্ষ। আরও পড়ুন: TET মামলা: বোর্ড প্রেসিডেন্টকে পকেট থেকে মামলাকারীদের ২০ হাজার টাকা দেওয়ার নির্দেশ হাইকোর্টের