ঝাড়গ্রাম: ছ’য়ের দশকে রাজনীতির আঙিনায় পা। সাতের দশকে ভোটে লড়াই, জেতা। সেই কলেজ জীবনে রাজনীতির ময়দানে পা ফেলেছিলেন। শেষ দিন অবধি ক্রিজ ছাড়েননি সুব্রত মুখোপাধ্যায় (Subrata Mukherjee)। ‘এভারগ্রিন’ সুব্রত। যে সকল রাজনীতিকদের সঙ্গে তাঁর প্রথম জীবন থেকে পরিচিতি, তার মধ্যে অন্যতম নাম সিপিএমের বিমান বসু। বর্ষীয়ান এই বাম নেতা তখন তারুণ্যের লালচে আভায় রাঙা, সুব্রতও সবুজ। রাজনৈতিক আদর্শে মত পার্থক্য থাকলেও কোনও দিনই সৌজন্যে সুব্রত কার্পণ্য করেননি। ঝাড়গ্রামে বসে সে সব দিনের কথা আজ বার বার চোখের সামনে ভেসে উঠছে বিমানের।
শুক্রবার দলীয় কাজে যোগ দিতে ঝাড়গ্রামে যান রাজ্য বামফ্রন্টের চেয়ারম্যান বিমান বসু। সেখানেই বিমান বসু বলেন, সুব্রত মুখোপাধ্যায় ছিলেন একেবারে ভিন্ন ধাঁচের নেতা। আজ বিমান বসুর মনে পড়ছে সেই ছাত্র রাজনীতির উত্তাল দশকের কথা। বিমান বসু বলেন, “সুব্রত মুখোপাধ্যায় যখন ছাত্র আন্দোলনে ছিলেন, তখন আমিও ছাত্র আন্দোলন করছি। সুব্রত বালিগঞ্জ বিধানসভা নির্বাচনে ১৯৭২ সালে যখন দাঁড়িয়ে ছিলেন, সেই সময় আমি ওই বিধানসভা এলাকার ভোটার ছিলাম। উনি আমার বাড়ির পাশেই একটি বাড়িতে থাকতেন। দেখা হলে কথা বলতেন সৌজন্য বিনিময় করতেন।”
এই সৌজন্য প্রসঙ্গে বলতে গিয়েই বিমান বসুর মুখে শোনা গেল, “সুব্রত মুখোপাধ্যায়ের একটা বিশেষত্ব ছিল। বিরোধী রাজনৈতিক দলগুলির সঙ্গেও তাঁর যোগাযোগ ছিল। রাজনীতির আদর্শে বিরোধিতা থাকলেও, কখনও কাউকে অসম্মান করেননি। বিরোধী দলের নেতাদের সঙ্গে যখন কথা বলতেন, কোথাও একটুকু সৌজন্য ব্যাহত হতো না। উনি যে দল করতেন তার নীতি আদর্শ আলাদা। আমাদের দলের নীতি আদর্শ আলাদা। তা সত্ত্বেও কোথাও দেখা হলে ওনার যে সৌজন্য বোধ, তা কিন্তু খর্ব হয়নি কোনওদিন।”
বিমানবাবুকে একবার যাত্রা দেখার টিকিট পাঠিয়েছিলেন সুব্রত মুখোপাধ্যায়। আজও সেই দিনটা স্পষ্ট মনে আছে বামফ্রন্ট চেয়ারম্যানের। বয়সের ভারে যে চোখজোড়া খানিকটা ঘোলাটে হয়েছে, সেদিনের কথা মনে পড়তেই কেমন যেমন চকচকে হয়ে উঠল। বিমান বসু জানালেন, “তখন ছাত্রনেতা। সেই সময় ৩০ দিন ধরে যাত্রা উৎসব হয়েছিল। মনে আছে, আমি তখন এসএফআইয়ের নেতা। যাত্রা দেখতে যাওয়ার জন্য আমাকে একটা টিকিট পাঠিয়েছিলেন উনি।”
রাজনীতির ভোল বদলেছে। এখন কোন নেতা কী ভাবে প্রচার করবেন, কোথায় কতটা কী বলবেন, কী পরবেন, কী বলবেন না সে সব দেখাশোনার জন্যও সংস্থা রয়েছে। কিন্তু সুব্রত মুখোপাধ্যায়দের মতো মানুষেরা যখন রাজনীতিতে আসেন, তখন রাজনৈতিক দূরদর্শিতাই ছিল শেষ কথা। বিমান বসুর কথায়, সুব্রত মুখোপাধ্যায়ের এই দূরদর্শিতাই ৭৫ বছর বয়সেও সুব্রতবাবুকে এতটা সমসাময়িক, প্রাসঙ্গিক করে রেখেছিল। আগামী প্রজন্মের মনেও থেকে যাবেন ‘এভারগ্রিন’ সুব্রত মুখোপাধ্যায়।