Supreme Court: কেন মানিক অপসারণে স্থগিতাদেশ? হাইকোর্টের সঙ্গে কোথায় ভিন্নমত? কী যুক্তি সুপ্রিম কোর্টের?
Manik Bhattacharya: শীর্ষ আদালত জানিয়েছে, প্রাথমিক শিক্ষা পর্ষদের সভাপতির ক্ষেত্রে হাইকোর্ট থেকে তাঁকে অপসারণের যে নির্দেশটি দেওয়া হয়েছিল, সেটি ত্রুটিপূর্ণ ছিল।

কলকাতা: প্রাথমিক শিক্ষা পর্ষদের সভাপতির পদ থেকে মানিক ভট্টাচার্যকে (Manik Bhattacharya) অপসারণের নির্দেশ দিয়েছিল কলকাতা হাইকোর্টের একক বেঞ্চ। সেই নির্দেশে মান্যতা দিয়েছে ডিভিশন বেঞ্চও। সেই মামলা পরবর্তী সময়ে সুপ্রিম কোর্ট পর্যন্ত গড়ায়। মঙ্গলবার ওই মামলায় শীর্ষ আদালত মানিক ভট্টাচার্যের অপসারণের উপর স্থগিতাদেশ জারি করেছে। এক্ষেত্রে যে যে যুক্তি দিয়েছে সুপ্রিম কোর্ট –
অপসারণের ক্ষেত্রে পদ্ধতিগত দিকগুলি পূরণ হয়নি
শীর্ষ আদালত জানিয়েছে, প্রাথমিক শিক্ষা পর্ষদের সভাপতির ক্ষেত্রে হাইকোর্ট থেকে তাঁকে অপসারণের যে নির্দেশটি দেওয়া হয়েছিল, সেটি ত্রুটিপূর্ণ ছিল। একটি সরকারি পদ থেকে একজন ব্যক্তিকে সরাসরি অপসারণের জন্য যে সব পদ্ধতিগত দিকগুলি প্রয়োজন ছিল, তা পূরণ করেনি। সুুপ্রিম কোর্ট জানিয়েছে, হাইকোর্ট কোনও ব্যক্তিকে কোনও সরকারি পদ থেকে সরাসরি অপসারণ করতে পারে না। সঙ্গে অবশ্য এও জানিয়েছে, হাইকোর্ট কোনও সরকারি পদ থেকে কাউকে অপসারণ করতে পারে না, এই কথা বলা হচ্ছে না। তবে হাইকোর্টের অপসারণের ক্ষমতা থাকলেও, শীর্ষ আদালত জানিয়েছে, এই ধরনের ক্ষেত্রে একটি নির্দিষ্ট প্রক্রিয়া অবলম্বন করা দরকার।
পর্ষদ সভাপতিকে তাঁর বক্তব্য জানানোর সুযোগ দেওয়া উচিত ছিল
সুপ্রিম কোর্ট আরও জানায়, আদালত যদি দেখে একজন ব্যক্তিকে কোনও সরকারি পদকে অপব্যবহার করছে, আদালত তাঁকে এই পদের জন্য অযোগ্য বলে ধরতে পারে। সেক্ষেত্রে তাঁকে ওই দায়িত্বপালন থেকে সাময়িকভাবে সরিয়ে রাখার নির্দেশ দিতে পারে। কিন্তু এই ক্ষেত্রে হাইকোর্টে ভুল তথ্য এবং আদালতের সামনে সন্দেহজনক নথি পেশ করার জন্য মানিক ভট্টাচার্যকে দায়ী বলে মনে করে। এমন ক্ষেত্রে তাঁকে (পর্ষদ সভাপতিকে) তাঁর বক্তব্য জানানোর উপযুক্ত সুযোগ দেওয়া উচিত ছিল। সবথেকে ভাল হত, আদালত তাঁকে নির্দেশ দিতে পারত, ওই পদে রেখে তাঁর ব্যাখ্যা দেওয়ার জন্য। একক বেঞ্চের নির্দেশ অনুযায়ী তাঁকে অপসারণের নির্দেশ এবং সেই সঙ্গে ডিভিশন বেঞ্চের মান্যতা স্থগিত রেখেছে সুপ্রিম কোর্ট।
যে কারণে মানিককে পুনর্বহালের নির্দেশ দিল না আদালত
সুপ্রিম কোর্ট রায়ে জানিয়েছে, অপসারণের যেমন স্থগিতাদেশ দেওয়া হচ্ছে, তবে ওই পদে পুনর্বহালের নির্দেশ দেওয়া হচ্ছে না। রাজ্য সরকার নিজে থেকেই ইতিমধ্যে কাউকে বোর্ডের সভাপতি হিসাবে নিযুক্ত করেছে। শীর্ষ আদালত জানিয়েছে, পশ্চিমবঙ্গ প্রাথমিক শিক্ষা বোর্ডের সভাপতির পদে বর্তমানে যিনি দায়িত্বে রয়েছেন, একক বিচারপতির বেঞ্চের কাছে রিট পিটিশনের চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত না হওয়া পর্যন্ত ওই পদে তিনি বহাল থাকতে পারবেন।
রিট পিটিশনে ওঠা অভিযোগের প্রেক্ষিতে হলফনামা দিতে পারবেন মানিক
সুপ্রিম কোর্ট আরও জানিয়েছে, মানিক ভট্টাচার্য তাঁর বিরুদ্ধে ওঠা রিট পিটিশনের ক্ষেত্রে হলফনামা দাখিল করতে পারবেন। একক বিচারপতির বেঞ্চ সব দিক বিবেচনা করে সিদ্ধান্ত নেবেন এবং ততক্ষণ পর্যন্ত প্রাথমিক শিক্ষা পর্ষদের সভাপতির পদে বর্তমান দায়িত্বপ্রাপ্ত ব্যক্তি নিজের দায়িত্ব পালন চালিয়ে যাবেন। মানিক ভট্টাচার্যের পদ থেকে অপসারণের বিষয়ে সিদ্ধান্ত রিট পিটিশনের চূড়ান্ত সিদ্ধান্তের উপর নির্ভর করবে।
মানিক মামলায় নির্দেশে ২০০৮ সালের উদাহরণ তুলে আনে সুপ্রিম কোর্ট
সুপ্রিম কোর্ট এই মামলার নির্দেশ জানানোর সময় ২০০৮ সালের ডিভাইন রিট্রিট সেন্টার বনাম কেরল রাজ্যের মামলার কথা উল্লেখ করেছে। বিচারব্যবস্থার কর্তব্য কী, তার নীতির কথা উল্লেখ করতে গিয়ে ওই মামলার কথা উল্লেখ করেছে শীর্ষ আদালত। শীর্ষ আদালত ওই নির্দেশে উল্লেখ করেছে, এই ধরনের নির্দেশের মাধ্যমে প্রভাবিত হতে পারে এমন ব্যক্তিকে শুনানির যুক্তিসঙ্গত সুযোগ না দিয়ে কোনও আদালত কখনোই কোনও বিচারবিভাগীয় নির্দেশ দিতে পারে না। বিশেষ করে যখন এই ধরনের নির্দেশের ফলে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তির বদনাম হয়।
