‘ওঁ আমার ভাই, ওঁর বাড়িতে খাই’, সৌমিত্রর আক্রমণকে ‘সিরিয়াসলি’ নিলেন না শুভেন্দু
Suvendu Adhikari Saumitra Khan: শুভেন্দু পষ্টাপষ্টি জানিয়ে দেন, এই ফেসবুক লাইভকে তিনি 'সিরিয়াসলি' নেন না। একই সঙ্গে সৌমিত্রকে নিজের 'ভাই' বলেও অ্যাখ্যা দিয়েছেন শুভেন্দু।
কলকাতা: সৌমিত্র খাঁ-এর ক্ষোভকে পাত্তাই দিলেন না শুভেন্দু অধিকারী। ফেসবুক লাইভে এসে বিরোধী দলনেতার ভূমিকার দিকে আঙুল তুলে রীতিমতো তুলোধোনা করেছিলেন সৌমিত্র। এই নিয়ে বুধবার যখন শুভেন্দুকে প্রশ্ন করা হয় তখন তিনি স্পষ্টা জানিয়ে দেন, এই ফেসবুক লাইভকে তিনি ‘সিরিয়াসলি’ নেন না। একই সঙ্গে সৌমিত্রকে নিজের ‘ভাই’ বলেও অ্যাখ্যা দিয়েছেন শুভেন্দু।
বিধানসভায় বুধবার এই নিয়ে প্রশ্ন করা হলে শুভেন্দু বলেন, “আমি এ সম্পর্কে কোনও মন্তব্য করব না। অনেকেরই এমন অভ্যাস রয়েছে, এগুলো খুব একটা সিরিসায়লি না নেওয়াই ভাল। রাজ্য মন্ত্রিসভাও যেদিন গঠন হয়েছিল সেদিনও আমি দেখেছিলাম তৃণমূলের অনেককে ফেসবুক করতে। আজকের মন্তব্যটাও আমি সিরিয়াসলি নিচ্ছি না। সৌমিত্র খাঁ আমার ভাই। ওঁকে নিজের রাজনৈতিক সতীর্থ বলে মনে করি। আমি দিল্লি গেলে সৌমিত্রর বাড়িতে খাওয়া দাওয়া করি। অতএব, সৌমিত্র কী বলেছে, না বলেছে, তা নিয়ে আমি কোনও মন্তব্য করব না।” তাঁর আরও সংযোজন, “কারোর কারোর ফেসবুক লাইভ করার অভ্যাস আছে। এটা ভাল দিকও বলতে পারেন। অনেকের স্বভাব চাপা, অনেকে প্রকাশ্যে বলে দেয়। আমি এটা খারাপভাবে নিচ্ছি না।”
যদিও সৌমিত্র কিন্তু নিজের ফেসবুক লাইভে শুভেন্দুকে ছেড়ে কথা বললেননি। রীতিমতো তোপ দেগে বিষ্ণুপুরের বিজেপি সাংসদ বলেছিলেন, “যে বিরোধী দলনেতা হয়েছেন তাঁকে বলব আয়নাতে একটু মুখটা দেখতে। দিল্লিতে গিয়ে ভুল বোঝাবেন না, নিজের মতো করে দলটাকে চালানোর চেষ্টা করবেন না। তিনি বারবার দিল্লিতে গিয়ে ভুল বোঝাচ্ছেন। তিনি নিজেকে জাহির করছেন, দলকে জাহির করছেন না।” এরপরই দিলীপ ঘোষের উদ্দেশ্যে ব্যঙ্গাত্মক সুরে সৌমিত্র বলেন, “আমাদের মাননীয় সভাপতিকে বললেও তিনি অর্ধেকটা বোঝেন, অর্ধেকটা বোঝেন না। বাংলায় বিজেপি যেভাবে চলছে, তাতে ভাল কিছু হবে না।”
আরও পড়ুন: ‘ইস্তফা দিতে বলা হয়েছিল’, লিখেও মন্তব্য প্রত্যাহার প্রাক্তন কেন্দ্রীয় মন্ত্রী বাবুলের! কেন?
এই বিতর্কের আবহে মুখ খুলেছেন বিজেপি রাজ্য সভাপতি নিজেও। তিনি বলেন, “কারোর বিষয়ে অভিযোগ থাকতে পারে, সেটা বলার জন্য দলে আলাদা জায়গা আছে। কেউ কী কী কাজ করছে সেটা দেখার জন্যও দলে আলাদা লোক আছে। ফেসবুকে বলে যাওয়াটা শৃঙ্খলাভঙ্গ করা, বিজেপিতে এমনটা চলে না। দলে নতুন যারা এসেছেন তাঁদের অভিজ্ঞতা নেই, সেই কারণে তাঁরা এমন ব্যবহার করছেন।”
আরও পড়ুন: ‘দিল্লিতে ভুল বোঝাচ্ছেন শুভেন্দু, তার জন্যই…’ বিস্ফোরক সৌমিত্র
প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর সম্প্রসারিত মন্ত্রিসভায় কারা জায়গা পেতে পেতে চলেছেন, সেই ছবিটা বুধবার দুপুরের মধ্যেই পরিষ্কার হয়ে গিয়েছিল। তারপরই ফেসবুক পোস্টের মাধ্যমে রাজ্যের যুব মোর্চার সভাপতি পদ থেকে ইস্তফা দেওয়ার কথা জানান সৌমিত্র। এর কিছুক্ষণ পরেই লাইভে এসে নিশানায় নেন শুভেন্দুকে। যদিও অধিকারী পরিবারের এই সদস্য বিজেপিতে যোগ দেওয়ার পর থেকে দু’জনের সম্পর্কের সমীকরণ মধুর ছিল। মেদিনীপুরে যে মঞ্চে অমিত শাহের হাত ধরে শুভেন্দু বিজেপিতে যোগ দিয়েছিলেন, সেই মঞ্চেই ভাষণে সৌমিত্র তাঁর কৃতজ্ঞতা জানিয়েছিলেন শুভেন্দুর প্রতি। রাজ্যের প্রাক্তন মন্ত্রী প্রচার থেকে বিরত থাকার কারণেই যে বিষ্ণুপুরে সৌমিত্রর জন্য জয় সহজ হয়ে গিয়েছিল, তা তিনি স্বীকার করে নিয়েছিলেন। কিন্তু সেই ঘটনার কয়েক মাস অতিবাহিত হতে না হতেই দু’জনের মধ্যে দৃশ্যত একটি দেওয়াল উঠে গিয়েছে।
বিজেপিতে যোগ দেওয়ার পর উত্তরোত্তর উত্থান হয়েছে শুভেন্দুর। খোদ তৃণমূল সুপ্রিমোকে হারিয়ে বিধানসভায় বিরোধী দলনেতার আসন পাকা করে নিয়েছেন তিনি। তুলনায়, সৌমিত্র যেই তিমিরে ছিলেন, সেখানেই রয়েছেন। বুধবার যখন সৌমিত্রর লাইভ নিয়ে শুভেন্দুকে প্রশ্ন করা হয়, তখন হাসি মুখে তাঁকে নিজের ‘ভাই’ সম্বোধন করেও যেন রাজনৈতিক পরিপক্কতার পরিচয় দিলেন নন্দীগ্রামের বিধায়ক। এমনটা মত রাজনৈতিক মহলের একাংশের।