কলকাতা: টেলিমেডিসিনের নতুন দিগন্ত। ব্রেন স্ট্রোকে আক্রান্ত বৃদ্ধ প্রাণে বাঁচলেন। স্ক্যান রিপোর্ট দেখে ফোনেই পরামর্শ দিলেন বাঙ্গুর ইনস্টিটিউট অফ নিউরোলজি-র চিকিত্সকরা। সেই পরামর্শেই প্রাণ বাঁচলেন আমডাঙার বৃদ্ধের। রেফার রোগীর জন্য বিকল্প টেলি মেডিসিন। প্রয়োজন হল না কলকাতার সরকারি হাসপাতালে আসার।
উত্তর ২৪ পরগনার আমডাঙা থেকে বারাসত হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়েছিল ব্রেন স্ট্রোকে আক্রান্ত বৃদ্ধ আব্দুর রহিমকে। বারাসত হাসপাতালের সুপার সুব্রত মণ্ডলের তত্পরতায় বৃদ্ধের সিটি স্ক্যানের ছবি টেলি মেডিসিন ব্যবস্থায় পাঠানো হয় বাঙ্গুর ইনস্টিটিউট অফ নিউরোলজিতে। সেখানে ২৪ ঘণ্টা রোটেশনে উপস্থিত থাকেন চিকিত্সক বিমানকান্তি রায়ের নেতৃত্বাধীন নিউরোলজির বিভিন্ন চিকিত্সক। রাজ্যের সব মেডিক্যাল কলেজ ও জেলা হাসপাতালের চিকিত্সকদের টেলিমেডিসিন সাপোর্ট দেন বিমানবাবুরা। তাঁদের পরামর্শেই ইঞ্জেকশন দেওয়া হয় আব্দুর রহিমকে। ধীরে ধীরে সুস্থ বোধ করতে থাকেন ওই বৃদ্ধ।
গত ২৭ ডিসেম্বর TV9 বাংলা একটি প্রতিবেদন পেশ করে। বাঙ্গুর ইন্সস্টিটিউট অফ নিউরোসায়েন্স টেলিমেডিসিনের মাধ্যমে স্ট্রোক আক্রান্ত রোগীদের সুস্থ করে তুলতে পদক্ষেপ করছে। যাঁরা প্রত্যন্ত এলাকায় রয়েছেন, তাঁদের সুবিধার্থেই এই উদ্যোগ নেন চিকিৎসকরা। কারণ তাঁদের ক্ষেত্রে বাঙ্গুর নিউরোসায়েন্সে আসার জন্য অনেকটা সময় লেগে যেতে পারে। কিংবা অন্য যে কোনও হাসপাতাল, যেখানে নিউরো মেডিসিনের সুপার স্পেশ্যালিটি হাসপাতাল রয়েছে, সেখানে যাওয়াটাও তাঁদের পক্ষে সময়সাপেক্ষ। সেই সমস্ত রোগীদের চিকিৎসা পরিষেবা দেওয়ার জন্য টেলিমেডিসিনের ব্যবস্থা।
স্বাস্থ্য দফতরের এই উদ্যোগ কতটা যুক্তিযুক্ত, তার প্রমাণ দিলেন ৮১ বছরের বৃদ্ধ শেখ আব্দুর রহিম। তিনি আমডাঙার বাসিন্দা। বুধবার বারাসত হাসপাতালে গিয়েছিলেন। তিনি ব্রেন স্ট্রোকে আক্রান্ত হয়েছিলেন। ওই হাসপাতালের চিকিৎসকরা বাঙ্গুরের টেলিমেডিসিনের নোডাল অফিসার চিকিৎসক বিমানকান্তি রায়ের সঙ্গে যোগাযোগ করেন। তাঁর টিম আব্দুর রহিমের সিটি স্ক্যানের রিপোর্ট খতিয়ে দেখেন। তাঁরা জানান, এটা হেমারেজের ঘটনা নয়। মস্তিষ্কে অভ্যন্তরে রক্তক্ষরণের ঘটনা নয়। এটা রক্ত তঞ্চনের ঘটনা। যদি একটা ইঞ্জেকশন দেওয়া হয়, তাহলে তিনি সুস্থ হয়ে উঠবেন। সেই পরামর্শ মতোই চিকিৎসা করেন বারাসত হাসপাতালের চিকিৎসকরা।
জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ কাজলকৃষ্ণ বণিক বলেন, “প্রথমেই আমি সংশ্লিষ্ট সকলকে আন্তরিক অভিনন্দন জানাচ্ছি। একবিংশ শতাব্দীতে দাঁড়িয়ে চিকিৎসা পরিষেবায় টেকনোলজি যে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে, তার একটা জ্বলন্ত উদাহরণ এই ঘটনা। বারাসতে বসে চিকিৎসকদের একাংশের সহযোগিতায় যে মানুষকে নতুন করে স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরে এলেন, তা সম্ভব হয়েছে টেকনোলজি ও চিকিৎসকদের সহমর্মিতার জন্য। আমি মনে করি আগামী দিনে এরকম অনেক প্রযুক্তি চিকিৎসা পদ্ধতির সঙ্গে যুক্ত হবে। নিত্য নতুন পদ্ধতি আসুক। চিকিৎসা বিজ্ঞান ডায়ানামিক সায়েন্স। তবে তা সাধারণ মানুষের ক্রয় ক্ষমতার মধ্যে থাকুক।”
বিমানকান্তি রায় সাক্ষাৎকারে জানিয়েছেন, ২৪ ঘণ্টা বাঙ্গুর ইন্সস্টিটিউট অফ মেডিসিনে টেলিমেডিসিন পরিষেবা চালু থাকবে। জেলার হাসপাতালগুলির বেশিরভাগরই সিটিস্ক্যানের ফেসিলিটি রয়েছে। জেলার হাসপাতালগুলিকে পরামর্শ দেওয়া রয়েছে রোগীর সিটি স্ক্যান করিয়ে রাখার। এরপর তাঁরা বাঙ্গুর হাসপাতালে বিশেষজ্ঞদের সঙ্গে কথা বলতেই পারেন এ বিষয়ে।