কলকাতা: ভোট ময়দানে ফের বড় চমক তৃণমূলের(TMC)। বাবুল সুপ্রিয়ের আসনেই এবার প্রার্থী বলি অভিনেতা। বিজেপি থেকে তৃণমূলে আসার পরই আসানসোলের সাংসদ পদ থেকে ইস্তফা দিতে হয় বাবুল সুপ্রিয়(Babul Supriyo)-কে। লোকসভা কেন্দ্রে উপনির্বাচন হবে, এই ঘোষণা আগেই করা হয়েছিল। তবে রবিবারের দুপুরেই বড় চমক দিলেন তৃণমূল সুপ্রিমো মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় (Mamata Banerjee)। আসানসোল কেন্দ্র থেকে তৃণমূলের প্রার্থী হতে চলেছেন প্রাক্তন মন্ত্রী-সাংসদ তথা অভিনেতা শত্রুঘ্ন সিনহা (Shatrughan Sinha)। এদিন দুপুরেই মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় নিজেই টুইট করে জানান এই কথা।
কংগ্রেস থেকে রাজনৈতিক কেরিয়ার শুরু করা শত্রুঘ্ন সিনহা বাজপেয়ী সরকারে থাকাকালীন এর আগে পটনা সাহিব থেকে বিজেপির সাংসদ ছিলেন। পরে তিনি বিজেপি ছেড়ে তৃণমূলে যোগদান করেন। এতদিন তিনি তৃণমূলের বিদেশনীতি সংক্রান্ত বিষয়ে পরামর্শদাতার কাজ করতেন। তবে সক্রিয় রাজনীতি থেকে এতদিন তাঁকে আড়ালে রাখার কারণেই তাঁর রাজনৈতিক কেরিয়ার নিয়ে জল্পনা শুরু হয়েছিল। তবে সকলকে চমকে দিয়েই বিহারী বাবু এবার আসানসোল থেকে তৃণমূলের প্রার্থী হতে চলেছেন।
Happy to announce on behalf of the All India Trinamool Congress that Sri Shatrughan Sinha, former Union Minister and famed actor, will be our candidate in Loksabha by-election from Asansol. (1/2)
— Mamata Banerjee (@MamataOfficial) March 13, 2022
গায়ক অভিনেতা বাবুল সুপ্রিয়ও শত্রুঘ্ন সিনহার মতো বিজেপি ছেড়েই তৃণমূলে যোগ দিয়েছিলেন। বিজেপিতে থাকাকালীন আসানসোল থেকেই লোকসভার সাংসদ ছিলেন বাবুল সুপ্রিয়। ২০১৪ সালে বাবুলের বিরুদ্ধে প্রার্থী করা হয়েছিল দোলা সেনকে। সেই সময় ৫০ হাজারেরও বেশি ভোটে জয়ী হয়েছিলেন বাবুল। এরপর ২০১৯ সালে বাবুলের বিরুদ্ধে প্রার্থী করা হয় মুনমুন সেনকে। সেবারও লক্ষাধিক ভোটে তাঁকে হারান বাবুল। এবার তার জায়গাতেই প্রার্থী হতে চলেছেন শত্রুঘ্ন সিনহা।
জনপ্রিয় অভিনেতা হওয়ার পাশাপাশি বিহারের বাসিন্দা হওয়ায়, প্রতিবেশী রাজ্য়ে তাঁর ব্যাপক জনপ্রিয়তা রয়েছে। সেই কারণেই তাঁকে বিজেপির তরফে পটনা সাহিব থেকেই প্রার্থী করা হয়েছিল। আসানসোলে বাঙালির পাশাপাশি পার্শ্ববর্তী বিহার ও ঝাড়খণ্ডের বহু মানুষও বসবাস করেন। অবাঙালি ভোটবাক্স দখলে শত্রুঘ্ন সিনহা তাই সঠিক পছন্দ বলেই মনে করছেন রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা।
অন্যদিকে, বাজপেয়ী সরকার থাকাকালীন শত্রুঘ্ন সিনহা একদিকে যেমন পরিবহন, পর্যটন ও সংস্কৃতির মন্ত্রকের স্ট্যান্ডিং কমিটির সদস্য ছিলেন, তেমনই আবার ২০১৪ থেকে ২০১৯ সাল অবধি তিনি বিদেশমন্ত্রক ও বিদেশে ভারতীয় নীতির বিষয়েও পরামর্শদাতা হিসাবে কাজ করেছিলেন। তৃণমূলে যোগ দেওয়ার পরও শত্রুঘ্ন সিনহা মূলত বিদেশনীতি ও অর্থনীতি সংক্রান্ত বিষয়েই পরামর্শদাতার কাজ করতেন। মনে করা হচ্ছে, এবার লোকসভাতে বিজেপির বিরুদ্ধে সুর চড়াতেই ব্যবহার করা হবে বলিউড অভিনেতাকে।
বিহারি বাবু শত্রুঘ্ন সিনহার সঙ্গে আসানসোলের যোগ রয়েছে, তবে তা সরাসরি নয়। ১৯৭৯ সালে অমিতাভ বচ্চনের সঙ্গে কালা পাথ্থর সিনেমায় অভিনয় করেছিলেন শত্রুঘ্ন সিনহা। সেই সিনেমাটি কোলিয়ারির প্রেক্ষাপটেই তৈরি হয়েছিল। এবার সত্যি সত্যিই কোলিয়ারি অঞ্চলেই লড়াইয়ের ময়দানে নামতে হবে শত্রুঘ্ন সিনহাকে।
শত্রুঘ্ন সিনহাকে প্রার্থী হিসাবে ঘোষণাতে খুশি স্থানীয় তৃণমূল নেতৃত্ব। অন্যদিকে, বিজেপির তরফে জানানো হয়েছে, বহিরাগতকে গ্রহণ করবে না আসানসোলের সাধারণ মানুষ। এই বিষয়ে বিজেপির জেলা সভাপতি দিলীপ দে বলেন, “আসানসোলের মানুষ কোনও বহিরাগতকে চায় না, বরং তারা পরিচিত কোনও মুখকেই গ্রহণ করবেন। দলের শীর্ষ নেতৃত্বরাই ঠিক করে দেবেন, আসানসোবের প্রার্থী কে হবেন।”
যদিও সূত্রের খবর, আসানসোলে এবার বিজেপির তরফেও অবাঙালি কোনও মুখকেই প্রার্থী করা হতে পারে। এক্ষেত্রে যে নামটি সবার আগে উঠে আসছে, তা হল জিতেন্দ্র তিওয়ারির। অন্যদিকে, সিপিআইএমের তরফে মীনাক্ষী মুখ্যোপাধ্যায়কে প্রার্থী করা হতে পারে, কারণ তিনি আসানসোলেরই মেয়ে।