কলকাতা: ভিমরুলের চাকে ঢিল পড়তেই প্রতিহিংসা! অ্যাম্বুলেন্সের দালাল চক্রের খবরের পর্দাফাঁস হতেই হামলা। খবর করতে গিয়ে আক্রান্ত টিভি ৯ বাংলা। মালদার (Malda) ইংরেজবাজারে আমাদের রিপোর্টার, চিত্র সাংবাদিকের উপর হামলা। বেধড়ক মার খেতে হল তাঁদের। এই ঘটনার তীব্র নিন্দা করছে টিভি ৯ বাংলা।
পুরো ঘটনার বিষয়ে প্রতিক্রিয়া দেন টিভি ৯ বাংলার ম্যানেজিং এডিটর অমৃতাংশু ভট্টাচার্য। তিনি বলেন, “চিরকাল যেভাবে সংবাদ মাধ্যমের উপর হামলা হয়েছে। আজও সেই একই ঘটনার পুনরাবৃত্তি হল। অর্থাৎ যখন কোনও সংবাদমাধ্যম নির্ভীক ভাবে কাউকে ভয় না পেয়ে মানুষের পাশে দাঁড়িয়ে দুর্নীতি ফাঁস করার চেষ্টা করে। ঠিক এইভাবে বারেবারে আক্রমণ হয়।”
তিনি আরও যোগ করে জানান, “এটা ভেবেই আনন্দ হচ্ছে হয়ত কিছু দুষ্কৃতী মনে করেছেন এই ভাবে একজন যোদ্ধার উপর আক্রমণ শানিয়ে জিতে যাবেন ও টিভি ৯-কে তাঁরা থামিয়ে দিতে পারবেন। কিন্তু তাঁরা মুর্খের স্বর্গে বাস করছেন। প্রতিটি জেলায় আমাদের এইরকমই যোদ্ধা রয়েছেন। যাঁরা কোনও কিছুর পরোয়া না করেই এগিয়ে যাচ্ছেন। তাই কোনও আক্রমণই টিভি ৯ বাংলাকে দমাতে পারবে না। আমাদের প্রতিনিধির পাশে গোটা বাংলার মানুষ রয়েছেন। আমরা রয়েছি।”
পাশাপাশি এই ঘটনার বিষয়ে যোগ করে অমৃতাংশু ভট্টাচার্য বলেন, “কত সহজে একজন গরীব মানুষকে ভুল বুঝিয়ে বেসরকারি হাসপাতালে নিয়ে আসা যায়। আর তারপর তাঁদের হাতে লম্বা বিল ধরিয়ে দেওয়া হয়। এরপর গোটা বিষয়টিকে ঢাকতে রটিয়ে দেওয়া হয় যে কন্যা সন্তান হওয়ায় তার বাবা তাঁকে ছেড়ে চলে গিয়েছেন। আর এই ঘটনার খবর প্রকাশ করতে গিয়ে মার খেতে হয় আমাদের সাংবাদিককে।”
এখানেই শেষ নয়, ঘটনার খবর প্রচার হতেই প্রতিবাদ করেন বিধায়ক তথা আইএসএফ নেতা নওসাদ সিদ্দিকি। সোশ্যাল মিডিয়ায় তিনি লেখেন, “নার্সিংহোমে দালাল চক্র ফাঁস করায় মালদহে টিভি৯ বাংলার সাংবাদিককে আক্রমণের তিব্র নিন্দা জানাই ও প্রশাসনকে কঠোর ব্যবস্থা নিতে অনুরোধ করছি। টিভি৯ বাংলা আপনারা জনগণের আওয়াজ তুলুন। জনগণ আপনাদের পাশে আছে।”
প্রসঙ্গত, গত পরশু খবরে আসে মালদার একটি বেসরকারি হাসপাতালে কন্যা সন্তান জন্ম দেন এক প্রসূতি। কিন্তু, বিগত কুড়ি দিন ধরে তাঁর পরিবারের সদস্যরা তাঁকে নিতে আসেনি। হাসপাতালের তরফ থেকে দাবি করা হয় যে, কন্যা সন্তান হওয়ার কারণে ওই প্রসূতিকে ছেড়ে চলে গিয়েছেন তাঁর স্বামী।
কিন্তু ২৪ ঘণ্টা যেতে না যেতেই মিথ্যা প্রমাণিত হয় সেই ঘটনা। সত্যি ঘটনা সামনে আনে টিভি ৯ বাংলা। দক্ষিণ দিনাজপুরের পতিরামে পৌঁছায় টিভি ৯ বাংলার প্রতিনিধি। সেখানে গিয়ে ওই মহিলার সঙ্গে কথা বলেন তিনি। তখন ওই মহিলা জানান যে, তাঁর স্বামী হাসপাতালের বিল মেটাতেই কাজে বাইরে গিয়েছেন। ওই হাসপাতালের আয়া মাসিরা জোর করে তাঁকে দিয়ে বলান, যে কন্যা সন্তান হওয়ার কারণে তাঁর স্বামী তাঁকে ছেড়ে চলে গিয়েছেন।
পাশাপাশি ওই মহিলার বক্তব্য, সন্তান জন্ম হওয়ার জন্য তাঁরা অ্যাম্বুলেন্সে করে একটি সরকারি হাসপাতালেই যাচ্ছিলেন। কিন্তু বেসরকারি ওই হাসপাতালের সামনে অ্যাম্বুলেন্স চালক গাড়ি দাঁড় করিয়ে বলেন যে অ্যাম্বুলেন্স খারাপ হয়ে গিয়েছে। তাঁরা যেন এই হাসপাতালে ভর্তি হয়।
এদিকে, অ্যাম্বুলেন্স চালক কেন এই কাজ করলেন সেই বিষয়ে খোঁজ করতেই উঠে আসে দালাল চক্রের ঘটনা। অভিযোগ, যারা এই রকম ভাবে রোগীর পরিবারকে ভুল বুঝিয়ে এই ধরনের বেসরকারি হাসপাতালগুলিতে নিয়ে যায়। এই তথ্য সামনে আসতেই আজ ওই হাসপাতালে পৌঁছান আমাদের মালদার প্রতিনিধি শুভতোষ ভট্টাচার্য।
হাসপাতালে ঢোকার মুখেই কয়েকজন দুষ্কৃতী তাঁকে এবং আমাদের ক্যামেরাম্যানকে মারধর করতে থাকে। ঘটনায় গুরুতর চোট পান দু’জনই। ঘটনায় পর নিন্দার ঝড় ওঠে সব মহলে।