কমলেশ চৌধুরী: ভাসছে কলকাতা। বানভাসি দক্ষিণবঙ্গ। কিন্তু এখানেই শেষ নয়। পুজোর মুখে নতুন দুশ্চিন্তা (Weather Update)। সাগরে চিনা বিপদ। একটি নয়, দু’-দু’টি ঘূর্ণাবর্ত। তা-ও আবার চলতি মাস ফুরোনোর আগেই! সম্ভাব্য অভিমুখ বাংলা-ওড়িশা উপকূল। পুজোর প্রস্তুতি থেকে পুজোর বাজার, ফের দুর্যোগ-দুর্ভোগের আশঙ্কা।
চিনা বিপদ কেন? আবহবিদদের ব্যাখ্যা, সরাসরি বঙ্গোপসাগরের গর্ভে নয়, দু’টি ঘূর্ণাবর্তেরই জন্ম সুদূর দক্ষিণ চিন সাগরের জঠরে। সেই সাগর থেকে ভিয়েতনাম, থাইল্যান্ড, মায়ানমার হয়ে আগমন হবে বঙ্গোপসাগরে। পরবর্তী গন্তব্য পূর্ব উপকূল। পথে পড়ে যাওয়ার জোর সম্ভাবনা বাংলা-ওড়িশার। ২৬ সেপ্টেম্বর থেকে নতুন করে বৃষ্টি বাড়ার ইঙ্গিতও দিয়ে রেখেছে মৌসম ভবন।
আবহবিদরা বলছেন, দক্ষিণ চিন সাগর থেকে টাইফুন, নিম্নচাপের অবশিষ্টাংশ বঙ্গোপসাগরে চলে আসার ঘটনা খুবই স্বাভাবিক। প্রতি বছর হয়। বঙ্গোপসাগরে সৃষ্ট বহু ঘূর্ণিঝড় আসলে দক্ষিণ চিন সাগরের কোনও ঝড়ের শেষাংশ। ভিয়েতনাম বা থাইল্যান্ডের স্থলভাগে ঢোকার পর দুর্বল হলেও, বঙ্গোপসাগরে চলে এলে নতুন করে শক্তিবৃদ্ধির সুযোগ পায়। আগামী ১০ দিনের মধ্যে তেমনই সম্ভাবনা দেখছে হাওয়া অফিস।
মৌসম ভবনের পূর্বাভাস বলছে, রবি-রাত থেকে বিপদে ফেলা ঘূর্ণাবর্ত এ বার মধ্য ভারতের দিকে সরে যাবে। কিন্তু ২৫ সেপ্টেম্বর নাগাদ উত্তর-পূর্ব বঙ্গোপসাগরে নতুন একটি ঘূর্ণাবর্তের উদয় হবে। ক্রমে সেটি ওড়িশা-বাংলা উপকূলের দিকে সরতে পারে। এর ঠিক পিছনেই আরও একটি ঘূর্ণাবর্ত, সেটিও চিন সাগর থেকে আমদানি হবে বঙ্গোপসাগরে।
তবে কি ফের দুর্যোগ? মৌসম ভবনের পূর্বাঞ্চলীয় প্রধান, উপমহানির্দেশক সঞ্জীব বন্দ্যোপাধ্যায় বলছেন, ‘দক্ষিণ চিন সাগরের টাইফুনের প্রভাবে মাঝেমধ্যে বঙ্গোপসাগরে ঘূর্ণাবর্ত সৃষ্টি হয়। আগামী কয়েকদিনের মধ্যে তেমন সম্ভাবনা রয়েছে। আমরা নজর রাখছি। সময়মতো নির্দিষ্ট করে পূর্বাভাস দেওয়া হবে।’ উপকূলে ঢোকার আগে অনেকটা পথও পাবে ঘূর্ণাবর্ত। তাই শক্তি বাড়ানোর সম্ভাবনাও থাকবে। যদিও শেষমেশ নিম্নচাপ হবে কি না, তা এখনই স্পষ্ট নয়।
সেপ্টেম্বরে গড়ে ৩১৮ মিলিমিটার বৃষ্টি হয় কলকাতায়। সোমবার সকালের মধ্যেই বৃষ্টি হয়েছে ২৯৪ মিলিমিটার। মাত্র দু’দিনেই হয়েছে ২৪৪ মিলিমিটার। ১৫ সেপ্টেম্বর ওড়িশায় ঢুকে পড়া অতি গভীর নিম্নচাপের প্রভাবে ১০২ মিলিমিটার বৃষ্টি হয়েছিল আলিপুরে। আর ঘূর্ণাবর্তের প্রভাবে হয়েছে ১৪২ মিলিমিটার। ঘূর্ণাবর্তের চেয়ে অন্তত তিন ধাপ বেশি শক্তিশালী অতি গভীর নিম্নচাপ।
তবু ঘূর্ণাবর্তেই নাকানি-চোবানি খেতে হল বেশি। কেন? সঞ্জীববাবুর ব্যাখ্যা, ‘অতি গভীর নিম্নচাপ ওড়িশা হয়ে স্থলভাগে ঢুকেছিল। সাধারণত, নিম্নচাপের দক্ষিণ-পশ্চিম দিকে বৃষ্টিপাত বেশি হয়। তাই ওড়িশার পুরী, ভুবনেশ্বরে প্রবল বৃষ্টি হয়েছিল। ঘূর্ণাবর্ত সরাসরি গাঙ্গেয় পশ্চিমবঙ্গে ঢুকেছে। ফলে বেশি প্রভাব পড়েছে বাংলায়। বিশেষ করে কলকাতা, হাওড়া, হুগলি, উত্তর ও দক্ষিণ ২৪ পরগনায়। তার উপর রবিবার রাত থেকে সোমবার বেলা পর্যন্ত ঘূর্ণাবর্তটি তেমন সরেনি।’ গাঁট হয়ে থাকা ঘূর্ণাবর্তের প্রভাবেই দিনভর নাছোড় বৃষ্টি। ঘূর্ণাবর্ত সরতে শুরু করেছে। বুধবার থেকে আবহাওয়ার উন্নতিও হতে পারে। কিন্তু তা হবে সাময়িকই। লাইন দিয়ে দাঁড়িয়ে চিনা-বিপদ!
আরও পড়ুন: Weather Update: আজ আরও দুর্ভোগ রয়েছে এই ছয় জেলার বরাতে, কবে থামবে বৃষ্টি জানাল হাওয়া অফিস