ইয়াসে ক্ষতি হয়েছে বললেই ক্ষতিপূরণ নয়, ত্রিস্তরীয় পরীক্ষার পরই ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টে টাকা

Jun 03, 2021 | 4:50 PM

গত বছর এই সময় আমফান (Amphan) পরবর্তী ত্রাণ বিলিকে ঘিরে উত্তাল হয় রাজ্য। জেলায় জেলায় শাসকদলের নেতা-কর্মীদের বিরুদ্ধে ক্ষতিপূরণের অর্থ তছরুপের অভিযোগ ওঠে।

ইয়াসে ক্ষতি হয়েছে বললেই ক্ষতিপূরণ নয়, ত্রিস্তরীয় পরীক্ষার পরই ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টে টাকা
ফাইল চিত্র।

Follow Us

কলকাতা: আমফানের ক্ষতিপূরণ প্রদানকে ঘিরে চরম সমালোচনার মুখে পড়তে হয়েছিল মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের (Mamata Banerjee) দ্বিতীয় সরকারকে। তা থেকে শিক্ষা নিয়েই ইয়াস-পরবর্তী ক্ষতিপূরণ বিলিতে অনেক বেশি সতর্ক, অনেক বেশি নিয়মের বেড়াজাল বুনেছে নবান্ন। প্রতিটা খুঁটিনাটি বিষয় খতিয়ে দেখে তারপরই দেওয়া হবে ক্ষতিপূরণ। আবেদন এলেই হবে না, রীতিমত ছাকনিতে ছেকে তারপর ক্ষতিপূরণ প্রাপকের ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টে পৌঁছবে টাকা।

গত বছর এই সময় আমফান পরবর্তী ত্রাণ বিলিকে ঘিরে উত্তাল হয় রাজ্য। জেলায় জেলায় শাসকদলের নেতা-কর্মীদের বিরুদ্ধে ক্ষতিপূরণের অর্থ তছরুপের অভিযোগ ওঠে। একুশের বিধানসভা ভোটের প্রচারে বিজেপি নেতাদের তৃণমূল বিরোধী একমাত্র হাতিয়ার ছিল এই আমফানের ক্ষতিপূরণ নিয়ে ‘দুর্নীতি’। ভোটের ফলে যদিও সেসব মোটেই ছাপ ফেলতে পারেনি, তবে এ ধরনের অভিযোগ যে কোনও রাজ্যের শাসকদলের জন্য যথেষ্ট অস্বস্তির। সে সব দিক খেয়াল রেখে এবার ইয়াস পরবর্তী ক্ষতিপূরণ বিলি নিয়ে অত্যন্ত সতর্ক মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সরকার। মুখ্যমন্ত্রী নিজে এবার সবটা নজরে রেখেছেন। কোনও জননেতা নয়, ক্ষতিপূরণ বণ্টনে একশো শতাংশ যুক্ত করেছেন প্রশাসনিক আধিকারিকদের। নবান্ন থেকে পুরো প্রক্রিয়াটিতে চলবে নজরদারি।

কৃষিজমি জলে ভেসে গিয়েছে কিংবা ফসল নষ্ট হয়েছে, এমন দাবি করলে যে কেউ ক্ষতিপূরণ পাবেন এমনটা নয়। এর জন্য ধাপে ধাপে তদন্ত হবে। এ ক্ষেত্রে স্যাটেলাইট তথ্য অত্যন্ত তাৎপর্যপূর্ণ ভূমিকা নেবে বলেই নবান্ন সূত্রে খবর। সাধারণ ভিডিও ফুটেজের সঙ্গে মিলিয়ে দেখা হবে উপগ্রহের চিত্র। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় নিজে নবান্নের আধিকারিকদের এই তথ্য মিলিয়ে দেখার নির্দেশ দিয়েছেন। অর্থাৎ ব্লক আধিকারিক কিংবা জেলাশাসকের কাছে ক্ষতিপূরণের আবেদনপত্র জমা দিলেই যে ক্ষতিপূরণ পেয়ে যাবেন, এমনটা না ভাবাই ভাল।

আরও পড়ুন: ‘কোন পদ্ধতিতে ডিজিপি নিয়োগ রাজ্যের?’ রিপোর্ট তলব রাজ্যপালের

মমতার বিশেষ কর্মসূচি ‘দুয়ারে ত্রাণ’ ঘোষণা সে কারণেই। জেলা প্রশাসনের কাছে আবেদন জমা পড়লেও কৃষি-কর্তারা প্রয়োজন পড়লে আবেদনকারীর কাছে যাবেন। খতিয়ে দেখবেন ক্ষতিগ্রস্ত জমি, ফসল। আবেদনের সঙ্গে বাস্তব পরিস্থিতির যদি মিল খুঁজে পাওয়া যায়, তবেই মিলবে ক্ষতিপূরণ। সে টাকা কোনও ‘ মারফৎ’ নয়, সরাসরি ক্ষতিগ্রস্তের ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টে জমা পড়বে।

আরও পড়ুন: ৩ ঘণ্টার জন্য খুলবে রেস্তোরাঁ-পানশালা, শীঘ্রই খুলছে শপিং মলও! বণিক সভার বৈঠকে ছাড়পত্র মমতার

কোন খাতে কতটা ক্ষতিপূরণ দেওয়া হবে এবার তাও আগেভাগেই জানিয়ে দেওয়া হয়েছে। যেমন পুরোপুরি কারও যদি বাড়ি ভেঙে যায় তিনি ২০ হাজার টাকা পাবেন। আবার কারও বাড়ি আংশিক ক্ষতিগ্রস্ত হলে তিনি পাবেন ৫ হাজার টাকা। পানের বরোজ নষ্ট হলে সেই পানচাষি পাবেন ৫ হাজার টাকা। ফসলের ক্ষতি হলে ১ থেকে আড়াই হাজার টাকা। যে মৎস্যজীবীর নৌকা পুরোপুরি ভেঙে গিয়েছে তাঁকে ১০ হাজার টাকা দেওয়া হবে। নৌকা আংশিক ক্ষতিগ্রস্ত হলে পাবে ৫ হাজার টাকা। জালের জন্য দেওয়া হবে ২৬০০ টাকা। এ ছাড়াও গবাদি পশুদের ক্ষতি, হস্তশিল্পিদের ক্ষয়ক্ষতির জন্যও রয়েছে ক্ষতিপূরণ। তবে প্রতিটি ক্ষেত্রেই কার্যত ত্রিস্তরীয় ভাবে খতিয়ে দেখার পরই ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টে পৌঁছবে টাকা।

Next Article