কলকাতা: নিন্দুকেরা বলেন, সিবিআই (CBI), ইডি (ED) তলব করলেই এসএসকেএম হাসপাতালের উডবার্ন ব্লকে গিয়ে ঢুকে পড়েন শাসকদলের নেতারা। গরু পাচার মামলায় বুধবার নিজাম প্যালেসে হাজিরা দেওয়ার কথা ছিল তৃণমূল নেতা অনুব্রত মণ্ডলের (Anubrata Mondal)। এদিন সকাল সকাল নিউটাউনের চিনার পার্কের ফ্ল্যাট থেকে বের হয় অনুব্রতর লালবাতি লাগানো গাড়ি। হইহই পড়ে যায়। মনে করা হচ্ছিল, পঞ্চমবারের তলবে বুঝি বা সিবিআইয়ের মুখোমুখি বসতে চলেছেন বীরভূমের ‘কেষ্ট’। কিন্তু নিজাম প্যালেস থেকে কিছু দূর আগেই গাড়ি অন্যপথে বাঁক নেয়। সোজা ঢুকে পড়ে এসএসকেএমে। হলুদ পাঞ্জাবি পরা অনুব্রত নেমেই সোজা চলে যান উডবার্ন ব্লকে। তিনি অসুস্থ, তাই হাসপাতালে যায় তাঁর গাড়ি।
এসএসকেএম হাসপাতালের একটি ব্লক উডবার্ন। ত্রিতল এই ভবনের এক তলায় সাধারণ চিকিৎসার রোগী থাকেন। দোতলা ও তিনতলায় রয়েছে কেবিনগুলি। এই দুই তলা সেন্ট্রাল এসি। সিঙ্গল বেডের কেবিন রয়েছে, ডবল বেডেরও কেবিন রয়েছে। প্রত্যেকটিই ‘লাক্সারি’ কেবিন। ডাক্তার বললে থাকতে পারেন যে কেউ। বেডের খরচ ২ হাজার টাকা থেকে ৪ হাজার টাকা পর্যন্ত। খাওয়া ও ওষুধের খরচ আলাদা। তবে ডাক্তারের কোনও খরচ দিতে হয় না।
উডবার্ন ব্লকে থাকার ক্ষেত্রে রোগীকে আগে আউটডোর বা এমার্জেন্সিতে গিয়ে ডাক্তার দেখাতে হয়। সেখান থেকে চিকিৎসকদের অনুমোদনের ভিত্তিতে উডবার্ন ব্লকের কোনও কেবিনে ভর্তি হওয়া যায়। অনুব্রত মণ্ডলের ক্ষেত্রে সেসব যদিও হয়নি। সটান ঢুকে পড়েছেন উডবার্নে। এটা কি তিনি প্রভাবশালী বলে সম্ভব হল, উঠছে প্রশ্ন।
এখানে এমার্জেন্সি চিকিৎসার বিশেষ ব্যবস্থা নেই। প্রয়োজনমতো এই ব্লকের জুনিয়র ডাক্তার বা নার্সরা চিকিৎসকদের ডেকে পাঠান। যাকে বলে ‘ডাক্তার অন কল’। আপাত দৃষ্টিতে যাঁর পরীক্ষার রিপোর্ট দেখে চিকিৎসকরা মনে করেন ‘কোল্ড কেস’ বা যে রোগীর হঠাৎ করে খারাপ কিছু হওয়ার সম্ভাবনা নেই, তাঁকে এই ব্লকে রাখা হয়। রোগীকে এখানে রেখে চিকিৎসা বা পর্যবেক্ষণ করা হয়। সাধারণত খুব খারাপ কোনও রোগীকে কখনও উডবার্নে রাখা হয় না। তিনি যেই হোন না কেন! তাঁকে আইসিইউয়ে রাখা হয় অথবা অন্য কোনও বিভাগে।
এসএসকেএমের চিকিৎসা পদ্ধতি বা সরকারি নিয়ম বলছে, একজন রোগী তিনি ভিআইপি হোন এমনকী মন্ত্রী, শরীরের অবস্থা গুরুতর হলে এমার্জেন্সিতে যাবেন। কারণ সেখানেই চিকিৎসার সমস্তরকম পরিকাঠামো রয়েছে। তা ছাড়া আউটডোরেও চিকিৎসকের সঙ্গে কথা বলতে পারেন। সুযোগ রয়েছে কোনও বিভাগীয় প্রধানের রুমে গিয়েও দেখানোর। অর্থাৎ গুরুতর চিকিৎসার জন্য উডবার্ন নয়।