Ram Navami 2022: অস্ত্র মিছিল কেন রামনবমীতে? রামচন্দ্রের সঙ্গেই বা অস্ত্রের কী যোগ? কী বলছে পুরাণ

Ram Navami: নৃসিংহপ্রসাদ ভাদুড়ী বলেন, 'রামচন্দ্র অত্যন্ত কোমল মানুষ হিসাবে পরিচিত। তিনি করুণাসাগর। বাল্মীকির মহাকাব্য যে লেখা হয়েছে, সেটা করুণ রসের কাব্য।'

Ram Navami 2022: অস্ত্র মিছিল কেন রামনবমীতে? রামচন্দ্রের সঙ্গেই বা অস্ত্রের কী যোগ? কী বলছে পুরাণ
রামনবমী উদযাপন। নিজস্ব চিত্র।
Follow Us:
| Edited By: | Updated on: Apr 10, 2022 | 9:44 PM

কলকাতা: গত কয়েক বছরে রামনবমীতে (Ram Navami) বাংলার একাধিক জায়গায় অস্ত্র নিয়ে শোভাযাত্রা করতে দেখা গিয়েছে গেরুয়া বাহিনীকে। এবারও হাওড়ার রামরাজাতলা কিংবা বাঁকুড়ার পাঁচবাগায় বজরং দলের মিছিলে কারও হাতে ধারাল তরোয়াল, কারও হাতে ছিল হাঁসুয়া। বিজেপির সর্বভারতীয় সহ সভাপতি দিলীপ ঘোষের (Dilip Ghosh) কথায়, ‘রামের নামে মিছিলে হাতে অস্ত্র নয় তো কি লাড্ডু থাকবে?’ তাঁর ব্যাখ্যা, রামচন্দ্র যোদ্ধা ছিলেন। তাছাড়া সব দেবদেবীর হাতেই অস্ত্র থাকে। রামের উপাসকদেরও তাই কারও কারও হাতে অস্ত্র থাকলে তাতে আপত্তির কারণ দেখছেন না দিলীপ। একই ব্যাখ্যা হাওড়ার বিজেপি নেতা উমেশ রায়েরও। তিনি বলছেন, যখনই সমাজে সঙ্কট এসেছে, তখনই অসুর বিনাশে অস্ত্র তুলে নিতে হয়েছে হাতে। এটাও তারই প্রতীক। কিন্তু পুরাণবিদ নৃসিংহপ্রসাদ ভাদুড়ীর কথায়, অতীতে কখনওই এই রেওয়াজ এ দেশে দেখা যায়নি। বঙ্গদেশে তো নয়ই। বরং তাঁর মতে, রামচন্দ্র করুণাসাগর, কৃপাময়। তাঁর প্রকৃত ভক্তের ভক্তির উৎসারও অন্য।

নৃসিংহপ্রসাদ ভাদুড়ী বলেন, “আমাদের বাংলাদেশে কোনওদিন এটা ছিল না। যাঁরা রামচন্দ্রকে আশ্রয় করে এখন রাজনীতি করেন, তাঁরা এগুলি করছেন। রামনবমী উদযাপন চৈতন্য মহাপ্রভুর কারণে শুরু হয়। তিনি এসে রামনবমী তিথি পালন করতে বলেছেন। যেহেতু ভগবানের পূর্ণ অবতার রামচন্দ্র, সেই সম্মান তিনি পান। কিন্তু এই যে অস্ত্র নিয়ে মিছিল, এসব আমাদের দেশে কোনওদিনই ছিল না। যারা নতুন করে রামায়ণ লিখছেন, যাঁরা নতুন করে রামচন্দ্রকে চেনাচ্ছেন, এসব তাদের কাজ। একটা বিশেষ রাজনৈতিক দল এটা করছে।”

নৃসিংহপ্রসাদ ভাদুড়ীর উল্টো মেরুতে মত পোষণ করলেন হাওড়ার বিজেপি নেতা উমেশ রায়। তাঁর ব্যাখ্যা, “সনাতন হিন্দু ধর্মের প্রতি যাদের শ্রদ্ধা আছে, যারা রামায়ণ পাঠ করেছে, সকলে জানে যখন যখন সমাজের উপর সঙ্কট আসে, অশুভ শক্তি মাথা চাড়া দেয়, তখন তাকে শান্ত করার জন্য, ধর্ম স্থাপনের জন্য অস্ত্র তুলে নিতে হয়। আমাদের ধর্মেই বলা আছে যখন যখন অধর্ম বাড়বে, সমাজে শান্তি স্থাপন করতে হবে, অস্ত্র নিয়ে নামতে হবে। রাম নবমীতে রামভক্তরা অস্ত্র নিয়ে পুজো করে বেরিয়েছে। এটাই আমাদের সভ্যতা, এটাই আমাদের সংস্কৃতি।”

কিন্তু পুরাণ নিয়ে যাঁর সর্বক্ষণের চর্চা সেই নৃসিংহপ্রসাদ ভাদুড়ী বলছেন, “আমি আগে কোনওদিনই দেখিনি রামচন্দ্রকে নিয়ে শোভাযাত্রা করা, তরবারি ধারণ করা! রামচন্দ্র অত্যন্ত কোমল মানুষ হিসাবে পরিচিত। তিনি করুণাসাগর। বাল্মীকির মহাকাব্য যে লেখা হয়েছে, সেটা করুণ রসের কাব্য। ভবভূতি যিনি উত্তর রামচরিত লিখেছেন, তিনি বলেছেন, একটাই রস সেটা করুণ রস। বাল্মীকির রামায়ণও তাই। যাঁর এত কৃপা, সমস্ত মানুষের হৃদয়ে বাস করেন, তাঁর নাম রামচন্দ্র। রাম মানে রময়তি। যিনি সকলকে বিনোদিত করেন। সেই মানুষকে নিয়ে অস্ত্রসস্ত্রের যে ব্যবহার, এগুলো যারা করছেন তাদেরই সৃষ্টি।”

কীভাবে এই রামনবমীর উদযাপন শুরু হল সে প্রসঙ্গে বলতে গিয়ে নৃসিংহপ্রসাদ বলেন, “চৈতন্য মহাপ্রভু যখন আমাদের দেশে বৈষ্ণব ধর্মের জাগরণ করেন, তখন তিনি তাঁর বৈষ্ণব ধর্মের ভাবনাকে তুলে ধরার ক্ষেত্রে নৃসিংহ চতুর্দশী, শ্রী রামনবমী, বামন দ্বাদশীর মতো তিথি পালনের কথা বলেছিলেন। এগুলো সেই অবতার যার মধ্যে মানুষের বৃত্তি লক্ষ্যনীয়। যেমন নৃসিংহ। তার মুখের মিল সিংহের সঙ্গে থাকলেও, সমস্ত শরীর মানুষের মত। বামনও মনুষ্য অবতার। এই যে মনুষ্যবৃত্তি আরম্ভ হল, সেইসব অবতারের তিথি পালনের কথা মহাপ্রভু বলেছেন। যাঁরা বৈষ্ণব এই তিথিগুলো তাঁরাও পালন করেন। যেমন রামনবমীর দিন রামচন্দ্রের নামে পুজোপাঠ, কীর্তন হয় গৌড়ীয় মঠে। চৈতন্য মহাপ্রভুর পরবর্তী সময়ে এই তিথি পালন শুরু হয়। এর আগে এই উৎসব এখানে চালু ছিল না।”

আরও পড়ুন: Howrah Rama Navami: হাতে তলোয়ার, সঙ্গে জয় শ্রীরাম ধ্বনি ! সকাল থেকেই বর্ণাঢ্য শোভাযাত্রায় রাম নবমী পালন বিজেপির