পুলিশকে অশ্লীল ভাষায় গালাগালি দিলে কত দিনের জেল হতে পারে?
BNS: আমরা কোনও বিপদে পড়লে যে পুলিশের কাছে ছুটে যাই, যদি সেই পুলিশ হেনস্থার স্বীকার হন তাহলে তাঁরা কী করতে পারেন? পুলিশকে কি অশ্রাব্য ভাষায় গালিগালাজ করা যায়? পুলিশকর্মী বা তাঁর পরিবারকে প্রাণনাশ, মারধর বা অন্য কোনও হুমকি দিলে, অভিযুক্ত ব্যক্তির বিরুদ্ধে কী কী ব্যবস্থা নিতে পারে পুলিশ?

রাজনৈতিক প্রভাবশালী ব্যক্তিদের পুলিশকে হুমকি দেওয়া, ভয় পাওয়ানোর ঘটনা মাঝে মাঝেই সামনে আসে। সিনেমাতেও আমরা দেখেছি এই একই ধরনের ছবি। সম্প্রতি বীরভূমের তৃণমূল নেতা অনুব্রত মন্ডলকে ঘিরে যে বিতর্কের সৃষ্টি হয়েছে তাতে সেই প্রশ্নই উঠছে আবারও।
আমরা কোনও বিপদে পড়লে যে পুলিশের কাছে ছুটে যাই, যদি সেই পুলিশ হেনস্থার স্বীকার হন তাহলে তাঁরা কী করতে পারেন? পুলিশকে কি অশ্রাব্য ভাষায় গালিগালাজ করা যায়? পুলিশকর্মী বা তাঁর পরিবারকে প্রাণনাশ, মারধর বা অন্য কোনও হুমকি দিলে, অভিযুক্ত ব্যক্তির বিরুদ্ধে কী কী ব্যবস্থা নিতে পারে পুলিশ? আইন কী বলছে?
পুলিশ কর্মকর্তা বিশেষ করে তিনি যদি ইনস্পেক্টর-ইন-চার্জ (আইসি) বা কোন উচ্চ পদস্থ কর্তা হন, তাঁকে কেউ প্রাণনাশ, মারধর করার হুমকি দেন কিংবা অশ্রাব্য ভাষায় কিছু বলেন তাহলে অভিযুক্তের বিরুদ্ধে বেশ কিছু আইনি পদক্ষেপ নেওয়ার অধিকার আছে পুলিশের। কী কী সেইগুলি?
ভারতীয় ন্যায় সংহিতা, ২০২৩ (BNS) অনুযায়ী কঠোর আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা যেতে পারে –
১। ফৌজদারি ভীতিপ্রদর্শন – BNS ধারা ৩৫১
কাউকে বা তার সম্মানহানিকে কেন্দ্র করে এমন হুমকি দেওয়া যাতে সে আতঙ্কিত হয় যেমন – প্রাণনাশ, পরিবারের ক্ষতি, ইত্যাদির ক্ষেত্রে এই ধারায় মামলা করা যেতে পারে। সর্বোচ্চ ৭ বছর পর্যন্ত কারাদণ্ড, জরিমানা, অথবা উভয়ই হতে পারে।
হুমকি যদি গুরুতর না হয়, সেক্ষেত্রে ২ বছর পর্যন্ত কারাদণ্ড, জরিমানা, অথবা উভয়ই হতে পারে।
২। সরকারি কর্মচারীর দায়িত্ব পালনে বাধা দেওয়ার উদ্দেশ্যে হামলা বা বলপ্রয়োগ – BNS ধারা ২৩৪
সরকারি কর্মচারীকে তাঁর দায়িত্ব পালনে বাধা দেওয়ার জন্য জোর বা ভীতিপ্রদর্শক ভাষার ব্যবহার করলে সর্বোচ্চ ২ বছর পর্যন্ত কারাদণ্ড, জরিমানা, অথবা উভয়ই হতে পারে। মনে রাখবেন, এই ক্ষেত্রে শারীরিক সংস্পর্শ ছাড়াও, ভয়ভীতিমূলক গালাগালি বা হুমকিমূলক কথাবার্তাকে এই ধারায় অন্তর্ভুক্ত করা যেতে পারে।
৩। অপমানজনক শব্দের মাধ্যমে শান্তিভঙ্গের প্ররোচনা দেওয়া – BNS ধারা ৮২
কাউকে অপমান করে এমন কোনও পরিস্থিতি তৈরি করলে, যাতে সেই ব্যক্তি প্রতিক্রিয়া দিতে বাধ্য হয়। শান্তিভঙ্গ হয় তাহলে তাও শাস্তিযোগ্য অপরাধ।
এই ক্ষেত্রে সর্বোচ্চ ৩ মাস কারাদণ্ড, অথবা ১,০০০ টাকা পর্যন্ত জরিমানা, অথবা উভয়ই হতে পারে।
এই ক্ষেত্রে ভাষার দিকে বিশেষ নজর দেওয়া হয়। হুমকিমূলক কথাবার্তা বলা, অপমানজনক বা উত্তেজনাকর শব্দ প্রয়োগ, বিশেষ করে তা যদি জনসমক্ষে হয় সেই ক্ষেত্রে এই ধারা প্রযোজ্য।
৪। সরকারি কর্মচারীকে দায়িত্ব পালনে বাধা দিলে – BNS ধারা ২৩৩
ইচ্ছাকৃতভাবে একজন সরকারি কর্মচারীকে তার কাজে বাধা দিলে বা দায়িত্ব পালনে বাধা দেওয়াও অপরাধ।
এই ক্ষেত্রে সর্বোচ্চ ৩ মাস কারাদণ্ড, বা ৫,০০০ টাকা পর্যন্ত জরিমানা, অথবা উভয়ই হতে পারে।
হুমকির কারণে সরকারি কাজে বাধা সৃষ্টি হলে এই ধারা প্রযোজ্য।
৫। জনসমক্ষে অশ্লীল বা অপমানজনক ভাষা ব্যবহার – BNS ধারা ৭৯
জনসমক্ষে অশ্লীল বা অপমানজনক শব্দ ব্যবহার করলে যার কারণে ওই ব্যক্তির মানহানি হয় সেই ক্ষেত্রে এটি শাস্তি যোগ্য অপরাধ।
সর্বোচ্চ ৩ মাস কারাদণ্ড, বা ৫,০০০ টাকা পর্যন্ত জরিমানা, অথবা উভয়ই হতে পারে।
পুলিশ উক্ত BNS-এর ৩৫১, ২৩৪, ২৩৩, ৮২ ও ৭৯ ধারার অধীনে একটি FIR নথিভুক্ত করতে পারেন।
থাকতে হবে ওই ঘটনার উপযুক্ত প্রমাণ যেমন ভিডিয়ো বা অডিয়ো রেকর্ডিং থাকতে হবে। প্রতক্ষ্যদর্শী সাক্ষী দিতে পারেন। পুলিশ ডায়েরির নথি বা বডি-ক্যামেরার ফুটেজ — যা মামলাকে আরও শক্তিশালী করে তোলে।
এই ক্ষেত্রে হুমকির মাত্রা অনুযায়ী অভিযুক্তকে গ্রেফতার করা হতে পারে। তবে তৎক্ষণাৎ জামিন মিলতেও পারে আবার নাও পাওয়া যেতে পারে। তা নির্ভর করে ঘটনা এবং পরিস্থিতির কতটা সংবেদনশীল তার উপরে। এই মামলা আদালতে ওঠার পরে ফৌজদারি কার্যবিধি অনুসারে চলবে। অভিযুক্ত দোষী সাব্যস্ত হলে আদালতের নির্দেশ অনুসারে শাস্তিও ভোগ করতে হবে।
