North Bengal Lobby: উত্তরবঙ্গ লবি: নাম তো সুনাহি হোগা

Aug 27, 2024 | 8:51 PM

North Bengal Lobby: তিলোত্তমা কাণ্ডের পর বিরোধীদের পাশাপাশি মুখ খুলছেন চিকিৎসকেরাও। ৯ অগস্ট ঘটনার দিন থেকেই উত্তরবঙ্গ লবির সঙ্গে সম্পর্কিত কিছু নাম ঘোরাফেরা করতে থাকে। সেই নাম গুলি নিয়েই সরব হয়েছে চিকিৎসক সংগঠনগুলি। স্পষ্ট অভিযোগ করেছেন আইএম‌এ বেঙ্গলের চিকিৎসক নেতা সৌরভ দত্ত। ৯ অগস্ট মহিলা চিকিৎসকের হত্যার কয়েক ঘণ্টা পর কেন সেখানে উত্তরবঙ্গের প্রভাবশালী চিকিৎসক সুশান্ত রায়কে দেখা গিয়েছিল? প্রশ্ন তুলছেন তিনি।

Follow Us

উত্তাল রাজ্য, ফুঁসছে গোটা দেশ। দিন যত যাচ্ছে ততই জোরাল হচ্ছে স্বাস্থ্যমন্ত্রী তথা পুলিশ মন্ত্রীর পদত্যাগের দাবি। হয়েছে নবান্ন অভিযান। বিজেপি ডেকেছে বনধ। রাস্তায় রয়েছে বামেরাও। এমনকী ‘বিদ্রোহী’ হয়ে উঠেছেন একের পর এক তৃণমূল নেতাও। পুলিশের হাত থেকে তদন্তভার গিয়েছে সিবিআইয়ের কাছে। জল গড়িয়েছে হাইকোর্ট থেকে সুপ্রিম কোর্টে। সোজা কথায়, আরজি কর কাণ্ড সামনে আসতেই এক এক করে স্বাস্থ্য ক্ষেত্রের অস্বাস্থ্যের ছবিটা সামনে আসছে। সন্দীপ ঘোষের অবাধ বিচরণ ক্ষেত্রে উঠেছে পাহাড়-প্রমাণ দুর্নীতির অভিযোগ। তারও তদন্ত শুরু করেছে সিবিআই। আরজি করের প্রাক্তন ডেপুটি সুপারিন্টেন্ডেন্ট (নন মেডিকেল) আখতার আলির অভিযোগের ভিত্তিতেই হাইকোর্টের নির্দেশে দুর্নীতির তদন্তে নেমেছে কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থা। এই আবহে বারবার উঠেছে একশ্রেণির ডাক্তারদের ‘দাদাগিরির’ অভিযোগ। অভিযোগ, তাঁরা যেভাবে ছড়ি ঘোরান সেই ভাবেই চলেই রাজ্যের স্বাস্থ্য ব্যবস্থা। প্রভাব এতটাই যে তাঁদের নির্দেশ বিনা নেওয়া যায় না বড়সড় কোনও সিদ্ধান্ত।  অভিযোগ উঠেছে লাগাতার। পরিচিতি ‘উত্তরবঙ্গ লবি’ নামেই। স্বাস্থ্য দফতরে পোস্টিং থেকে সিদ্ধান্ত নিয়ন্ত্রণ, সব নাকি করে এই প্রভাবশালী লবির দাপুটে ডাক্তাররা। তাঁদের দাপট নিয়েই এখন গোটা রাজ্যে জোর চর্চা। 

কেন প্রাসঙ্গিক হয়ে উঠল উত্তরবঙ্গ লবি? 

তিলোত্তমা কাণ্ডের পর বিরোধীদের পাশাপাশি মুখ খুলছেন চিকিৎসকেরাও। ৯ অগস্ট ঘটনার দিন থেকেই উত্তরবঙ্গ লবির সঙ্গে সম্পর্কিত কিছু নাম ঘোরাফেরা করতে থাকে। সেই নাম গুলি নিয়েই সরব হয়েছে চিকিৎসক সংগঠনগুলি। স্পষ্ট অভিযোগ করেছেন আইএম‌এ বেঙ্গলের চিকিৎসক নেতা সৌরভ দত্ত। ৯ অগস্ট মহিলা চিকিৎসকের হত্যার কয়েক ঘণ্টা পর কেন সেখানে উত্তরবঙ্গের প্রভাবশালী চিকিৎসক সুশান্ত রায়কে দেখা গিয়েছিল? আরজি করের চিকিৎসক না হওয়া সত্ত্বেও কার নির্দেশে উত্তরবঙ্গ লবির কয়েকজন পৌঁছে যান সেখানে? সেই প্রশ্ন তুলছেন তিনি। 

এই খবরটিও পড়ুন

একই সুর চিকিৎসক উৎপল বন্দ্যোপাধ্যায়ের গলাতেও। তিনি বলছেন, “সকাল থেকে গভীর রাত পর্যন্ত এখানে এমন কিছু চরিত্র উপস্থিত ছিলেন যাঁরা সরকারি কোনও পদে নেই, আরজি করের সঙ্গে যুক্তও নন। তাঁদের সঙ্গে স্বাস্থ্য প্রশাসনের সর্বোচ্চ কর্তা, কলকাতা পুলিশের সর্বোচ্চ কর্তা এখানে উপস্থিত ছিলেন।” সোজা কথায়, যাঁদের সঙ্গে আরজি কর মেডিকেল কলেজের কোনও সম্পর্ক নেই সেই সমস্ত চিকিৎসকদের কেন দেখা গিয়েছিল সেই প্রশ্ন তুলছেন সৌরভ দত্ত, উৎপল বন্দ্যোপাধ্যায়ের মতো চিকিৎসকেরা। 

কেন নাম উত্তরবঙ্গ লবি? 

চিকিৎসকেরা বলছেন, এই লবি আসলে অশরীরি আত্মা। বাস্তবে এদের প্রকাশ্যে দেখা যায় না। কিন্তু, রাজ্যের স্বাস্থ্যে নাকি শেষ কথা এই লবিই। চিকিৎসক সৌরভ দত্ত বলছেন, “এই উত্তরবঙ্গ লবি শব্দটা শুনে শুনে আমাদের কান প্রায় পচে যাওয়ার উপক্রম। উত্তরবঙ্গ লবি মানে কিন্তু যে শুধু উত্তরবঙ্গের চিকিৎসকেরা রয়েছেন এমনটা নয়। বা কোনও কলেজের প্রতিনিধিত্ব করছে এমনটা নয়।” সম্প্রতি একটা প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে বিস্ফোরক অভিযোগ করেছে ইন্ডিয়ান মেডিকেল অ্যাসোসিয়েশনও। সেখানেও বলা হয়েছে, আরজি কর কাণ্ডের পর আইএমএ-র তরফে ডাকা হয়েছিল ভার্চুয়াল বৈঠক। সেখানে মেডিক্যাল কলেজের অধ্যক্ষরা ‘উত্তরবঙ্গ লবির’ বিরুদ্ধে সরবও হয়েছিল। অভিযোগ, দক্ষিণবঙ্গের এক মহিলা অধ্যক্ষকে ‘উত্তরবঙ্গ লবি’ ঘনিষ্ঠ চিকিৎসক বলে পরিচিত বীরুপাক্ষ বিশ্বাস ফোনে হুমকি দেন।

ডাক্তাদের মধ্যে কানাঘুষো, গড়িয়ার এক অর্থোপেডিক সার্জেনই হলেন এই উত্তরবঙ্গ লবির প্রধান নেতা। তিনি আবার নিজে সরকারি চিকিৎসক নন। থাকেন গড়িয়ায়। কিন্তু, তাঁর গ্রিন সিগন্যাল ছাড়া কোনও চিকিৎসকের পোস্টিং থেকে কোনওরকম ফাইলই নাকি নড়াচড়া করে না। চিকিৎসক মহলের একাংশের দাবি, উত্তরবঙ্গ মেডিকেল কলেজের পড়ুয়া ছিলেন ওই চিকিৎসক। তিনি ওর তাঁর ‘ফলোয়ার্সদের’ মিলিত টিম নর্থ বেঙ্গল লবি নামে পরিচিত। মারাত্মক ক্ষমতাশালী এই লবির অন্তত সাত চিকিৎসকের মধ্যে এক চিকিৎসক জলপাইগুড়ির বাসিন্দা বলেও শোনা যাচ্ছে। 

আইএমএ-র প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে আবার কয়েকজন চিকিৎসকের নাম উল্লেখ করা হয়েছে। তাঁদের ভূমিকাও খতিয়ে দেখার দাবি করা হয়েছে। আরজি করের প্রাক্তন অধ্যক্ষ ডাক্তার সন্দীপ ঘোষ, ডাক্তার সুহৃতা পালও ‘উত্তরবঙ্গ লবির’ ঘনিষ্ঠ বলে অভিযোগ। 

বিড়ম্বনায় উত্তরবঙ্গের চিকিৎসকেরা

নামে উত্তরবঙ্গ থাকলেও আদপে উত্তরবঙ্গের চিকৎসকূলের সঙ্গে সেই অর্থে এই লবির কোনও যোগ না থাকায় বিড়ম্বনা বাড়ছে উত্তরের চিকিৎসকদের মধ্যে। প্রকাশ্যেই ক্ষোভ প্রকাশ করছেন অনেকে। শিলিগুড়িতে আইএমএ শাখার সভাপতি অরুণ গুপ্তা বলছেন, “আমরা উত্তরবঙ্গের চিকিৎসকেরা কেউ এই লবিতে নেই। অথচ লবির নাম উত্তরবঙ্গ লবি। মানুষের কাছে জবাবদিহি করতে হচ্ছে।” তাঁর দাবি, দ্রুত, ক্ষমতাসীন এই গোষ্ঠীকে উত্তরবঙ্গ লবি নামে চিহ্নিতকরণ বন্ধ করা হোক। একই সুর শিলিগুড়িতে আইএমএ-র সম্পাদক শঙ্খ সেনের গলাতেও। সাফ বলছেন, “বিড়ম্বনায় পড়েছি আমরা। যে লবি নিয়ে আলোচনা তার সঙ্গে উত্তরবঙ্গে আমরা যারা চিকিৎসা করি তারা কেউ যুক্ত নই। অথচ লবির নাম উত্তরবঙ্গ লবি।” সে কারণেই উত্তরবঙ্গ লবি শব্দবন্ধের জোরালো প্রতিবাদ করছেন তিনিও।

ঠিক কী অভিযোগ উত্তরবঙ্গ লবির বিরুদ্ধে? 

ঘটনার দিন তদন্তকে ভুল পথে চালিত করা, প্রমাণ লোপাটের চেষ্টা করার অভিযোগ রয়েছে এই লবির বিরুদ্ধে। বারবার উঠে এসেছে সুশান্ত রায়ের প্রসঙ্গ। ঘটনার পর কেন তাঁকে আরজি করে আচমকা দেখা গেল সেই প্রশ্ন বারেবারে উঠেছে। চিকিৎসক সৌরভ দত্ত বলছেন, “উত্তরবঙ্গ লবির মাথা সুশান্ত রায় আইএমএ-র গ্রুপে নিজে লিখেছিলেন প্রশাসনের উচ্চ পর্যায়ের নির্দেশে আমরা এখানে এসেছি আমরা জেনেছি ঘটনার দিন রাত অবধি বহু লোকজন মিলে তৎকালীন প্রিন্সিপাল সন্দীপ ঘোষের অফিসে মিটিং করেছে। কিন্তু, তবু সন্দীপ ঘোষ মৃতার বাবা-মায়ের সঙ্গে দেখা করতে পারেননি। কী এমন মিটিং চলছিল যে সেই সময় পেলেন না?”  

যদিও বিতর্কের আবহে আত্মপক্ষ সমর্থন করে নিজের মতো একটা ব্যখ্যা দিয়েছেন সুশান্ত রায়। বলছেন, “সকাল সাড়ে ১০টার সময় ক্যালকাটা মেডিকেল কলেজে একটা ব্লাড ডোনেশন ক্যাম্প ছিল। এর মধ্যে একজন আমাকে ফোন করে জানায় ঘটনার কথা। বলা হয় একটা মেয়ে মারা গিয়েছে। রেপ হয়েছে। আমরা কয়েকজন সেখানে যাই।” কিন্তু, সুশান্ত রায়কে যদি ফোনে বলা হয় খুন-ধর্ষণের কথা, তাহলে কেন ১০টা ৫২ মিনিটের পরে তিলোত্তমার বাবা-মাকে ফোন করে অ্যাসিস্ট্যান্ট সুপার জানিয়েছিলেন আত্মহত্যার কথা? সেই প্রশ্ন জোরালো হয়েছে। উত্তর এখনও অধরা। 

কী বলছেন চিকিৎসকেরা? 

তবে অভিযোগের শেষ এখানেই নয়। অভিযোগ, ল্যাপটপ, মোবাইল নিয়ে পরীক্ষায় বসা, পরীক্ষায় গণ টোকাটুকি, নম্বর বাড়িয়ে দেওয়া-সহ নানা অনিয়মের প্রতিবাদ করায় ‘উত্তরবঙ্গ লবির’ রোষানলে পড়েছিলেন অনেকে। পরীক্ষক পদ থেকে সরিয়েও দেওয়া হয়েছে অনেক চিকিৎসকে। অন্য জায়গায় বদলিও করে দেওয়া হয় বলে অভিযোগ। আর পুরো ষড়যন্ত্রই নাকি হয়েছে স্বাস্থ্য ভবন এবং স্বাস্থ্য বিশ্ববিদ্যালয়ের বেশ কিছু কর্তার কথায়। তাঁদের টিকি বাধা উত্তরবঙ্গ লবির মাথাতেই। চিকিৎসক সৌরভ দত্ত জোরের সঙ্গে বলছেন, শুধু আমরা নয়। এ কথা তো সমস্ত প্রিন্সিপালরা বলছেন।” সৌরভবাবুর পাশে দাঁড়িয়ে একই সুর চিকিৎসক সংগঠনের নেতা মানস গুমটার গলাতেও। তিনি বলছেন, “সৌরভ দত্ত একটা সংগঠনের প্রতিনিধিত্ব করেন। তিনি আইএমএ-র রাজ্য শাখার প্রতিনিধি। তিনি যখন একটা অভিযোগ করছেন তখন তাঁর বক্তব্যের সারবত্তা আছে বলেই মনে করি।” 

সুর চড়িয়েছেন প্রখ্যাত চিকিৎসক অভিজিৎ চৌধুরীও। বলছেন, “বেশ কিছদিন ধরেই একটা ঐতিহ্যশালী মেডিকেল কলেজকে একটা আবর্জনার স্তূপে পরিণত করার চক্রান্ত হয়েছে। যাঁরা এটাকে ধ্বংস করার দিকে এগিয়ে নিয়ে গিয়েছেন তাঁদের যেন কোনওভাবে পুরষ্কৃত না করা হয়। মেডিকেল শিক্ষার ক্ষেত্রে গত ৪-৫ বছর ধরে টোকাটুকি অন্যান্য দুষ্কর্মের চক্র তৈরি হয়েছে। এর বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়াতে হবে।”  

উত্তাল রাজ্য, ফুঁসছে গোটা দেশ। দিন যত যাচ্ছে ততই জোরাল হচ্ছে স্বাস্থ্যমন্ত্রী তথা পুলিশ মন্ত্রীর পদত্যাগের দাবি। হয়েছে নবান্ন অভিযান। বিজেপি ডেকেছে বনধ। রাস্তায় রয়েছে বামেরাও। এমনকী ‘বিদ্রোহী’ হয়ে উঠেছেন একের পর এক তৃণমূল নেতাও। পুলিশের হাত থেকে তদন্তভার গিয়েছে সিবিআইয়ের কাছে। জল গড়িয়েছে হাইকোর্ট থেকে সুপ্রিম কোর্টে। সোজা কথায়, আরজি কর কাণ্ড সামনে আসতেই এক এক করে স্বাস্থ্য ক্ষেত্রের অস্বাস্থ্যের ছবিটা সামনে আসছে। সন্দীপ ঘোষের অবাধ বিচরণ ক্ষেত্রে উঠেছে পাহাড়-প্রমাণ দুর্নীতির অভিযোগ। তারও তদন্ত শুরু করেছে সিবিআই। আরজি করের প্রাক্তন ডেপুটি সুপারিন্টেন্ডেন্ট (নন মেডিকেল) আখতার আলির অভিযোগের ভিত্তিতেই হাইকোর্টের নির্দেশে দুর্নীতির তদন্তে নেমেছে কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থা। এই আবহে বারবার উঠেছে একশ্রেণির ডাক্তারদের ‘দাদাগিরির’ অভিযোগ। অভিযোগ, তাঁরা যেভাবে ছড়ি ঘোরান সেই ভাবেই চলেই রাজ্যের স্বাস্থ্য ব্যবস্থা। প্রভাব এতটাই যে তাঁদের নির্দেশ বিনা নেওয়া যায় না বড়সড় কোনও সিদ্ধান্ত।  অভিযোগ উঠেছে লাগাতার। পরিচিতি ‘উত্তরবঙ্গ লবি’ নামেই। স্বাস্থ্য দফতরে পোস্টিং থেকে সিদ্ধান্ত নিয়ন্ত্রণ, সব নাকি করে এই প্রভাবশালী লবির দাপুটে ডাক্তাররা। তাঁদের দাপট নিয়েই এখন গোটা রাজ্যে জোর চর্চা। 

কেন প্রাসঙ্গিক হয়ে উঠল উত্তরবঙ্গ লবি? 

তিলোত্তমা কাণ্ডের পর বিরোধীদের পাশাপাশি মুখ খুলছেন চিকিৎসকেরাও। ৯ অগস্ট ঘটনার দিন থেকেই উত্তরবঙ্গ লবির সঙ্গে সম্পর্কিত কিছু নাম ঘোরাফেরা করতে থাকে। সেই নাম গুলি নিয়েই সরব হয়েছে চিকিৎসক সংগঠনগুলি। স্পষ্ট অভিযোগ করেছেন আইএম‌এ বেঙ্গলের চিকিৎসক নেতা সৌরভ দত্ত। ৯ অগস্ট মহিলা চিকিৎসকের হত্যার কয়েক ঘণ্টা পর কেন সেখানে উত্তরবঙ্গের প্রভাবশালী চিকিৎসক সুশান্ত রায়কে দেখা গিয়েছিল? আরজি করের চিকিৎসক না হওয়া সত্ত্বেও কার নির্দেশে উত্তরবঙ্গ লবির কয়েকজন পৌঁছে যান সেখানে? সেই প্রশ্ন তুলছেন তিনি। 

এই খবরটিও পড়ুন

একই সুর চিকিৎসক উৎপল বন্দ্যোপাধ্যায়ের গলাতেও। তিনি বলছেন, “সকাল থেকে গভীর রাত পর্যন্ত এখানে এমন কিছু চরিত্র উপস্থিত ছিলেন যাঁরা সরকারি কোনও পদে নেই, আরজি করের সঙ্গে যুক্তও নন। তাঁদের সঙ্গে স্বাস্থ্য প্রশাসনের সর্বোচ্চ কর্তা, কলকাতা পুলিশের সর্বোচ্চ কর্তা এখানে উপস্থিত ছিলেন।” সোজা কথায়, যাঁদের সঙ্গে আরজি কর মেডিকেল কলেজের কোনও সম্পর্ক নেই সেই সমস্ত চিকিৎসকদের কেন দেখা গিয়েছিল সেই প্রশ্ন তুলছেন সৌরভ দত্ত, উৎপল বন্দ্যোপাধ্যায়ের মতো চিকিৎসকেরা। 

কেন নাম উত্তরবঙ্গ লবি? 

চিকিৎসকেরা বলছেন, এই লবি আসলে অশরীরি আত্মা। বাস্তবে এদের প্রকাশ্যে দেখা যায় না। কিন্তু, রাজ্যের স্বাস্থ্যে নাকি শেষ কথা এই লবিই। চিকিৎসক সৌরভ দত্ত বলছেন, “এই উত্তরবঙ্গ লবি শব্দটা শুনে শুনে আমাদের কান প্রায় পচে যাওয়ার উপক্রম। উত্তরবঙ্গ লবি মানে কিন্তু যে শুধু উত্তরবঙ্গের চিকিৎসকেরা রয়েছেন এমনটা নয়। বা কোনও কলেজের প্রতিনিধিত্ব করছে এমনটা নয়।” সম্প্রতি একটা প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে বিস্ফোরক অভিযোগ করেছে ইন্ডিয়ান মেডিকেল অ্যাসোসিয়েশনও। সেখানেও বলা হয়েছে, আরজি কর কাণ্ডের পর আইএমএ-র তরফে ডাকা হয়েছিল ভার্চুয়াল বৈঠক। সেখানে মেডিক্যাল কলেজের অধ্যক্ষরা ‘উত্তরবঙ্গ লবির’ বিরুদ্ধে সরবও হয়েছিল। অভিযোগ, দক্ষিণবঙ্গের এক মহিলা অধ্যক্ষকে ‘উত্তরবঙ্গ লবি’ ঘনিষ্ঠ চিকিৎসক বলে পরিচিত বীরুপাক্ষ বিশ্বাস ফোনে হুমকি দেন।

ডাক্তাদের মধ্যে কানাঘুষো, গড়িয়ার এক অর্থোপেডিক সার্জেনই হলেন এই উত্তরবঙ্গ লবির প্রধান নেতা। তিনি আবার নিজে সরকারি চিকিৎসক নন। থাকেন গড়িয়ায়। কিন্তু, তাঁর গ্রিন সিগন্যাল ছাড়া কোনও চিকিৎসকের পোস্টিং থেকে কোনওরকম ফাইলই নাকি নড়াচড়া করে না। চিকিৎসক মহলের একাংশের দাবি, উত্তরবঙ্গ মেডিকেল কলেজের পড়ুয়া ছিলেন ওই চিকিৎসক। তিনি ওর তাঁর ‘ফলোয়ার্সদের’ মিলিত টিম নর্থ বেঙ্গল লবি নামে পরিচিত। মারাত্মক ক্ষমতাশালী এই লবির অন্তত সাত চিকিৎসকের মধ্যে এক চিকিৎসক জলপাইগুড়ির বাসিন্দা বলেও শোনা যাচ্ছে। 

আইএমএ-র প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে আবার কয়েকজন চিকিৎসকের নাম উল্লেখ করা হয়েছে। তাঁদের ভূমিকাও খতিয়ে দেখার দাবি করা হয়েছে। আরজি করের প্রাক্তন অধ্যক্ষ ডাক্তার সন্দীপ ঘোষ, ডাক্তার সুহৃতা পালও ‘উত্তরবঙ্গ লবির’ ঘনিষ্ঠ বলে অভিযোগ। 

বিড়ম্বনায় উত্তরবঙ্গের চিকিৎসকেরা

নামে উত্তরবঙ্গ থাকলেও আদপে উত্তরবঙ্গের চিকৎসকূলের সঙ্গে সেই অর্থে এই লবির কোনও যোগ না থাকায় বিড়ম্বনা বাড়ছে উত্তরের চিকিৎসকদের মধ্যে। প্রকাশ্যেই ক্ষোভ প্রকাশ করছেন অনেকে। শিলিগুড়িতে আইএমএ শাখার সভাপতি অরুণ গুপ্তা বলছেন, “আমরা উত্তরবঙ্গের চিকিৎসকেরা কেউ এই লবিতে নেই। অথচ লবির নাম উত্তরবঙ্গ লবি। মানুষের কাছে জবাবদিহি করতে হচ্ছে।” তাঁর দাবি, দ্রুত, ক্ষমতাসীন এই গোষ্ঠীকে উত্তরবঙ্গ লবি নামে চিহ্নিতকরণ বন্ধ করা হোক। একই সুর শিলিগুড়িতে আইএমএ-র সম্পাদক শঙ্খ সেনের গলাতেও। সাফ বলছেন, “বিড়ম্বনায় পড়েছি আমরা। যে লবি নিয়ে আলোচনা তার সঙ্গে উত্তরবঙ্গে আমরা যারা চিকিৎসা করি তারা কেউ যুক্ত নই। অথচ লবির নাম উত্তরবঙ্গ লবি।” সে কারণেই উত্তরবঙ্গ লবি শব্দবন্ধের জোরালো প্রতিবাদ করছেন তিনিও।

ঠিক কী অভিযোগ উত্তরবঙ্গ লবির বিরুদ্ধে? 

ঘটনার দিন তদন্তকে ভুল পথে চালিত করা, প্রমাণ লোপাটের চেষ্টা করার অভিযোগ রয়েছে এই লবির বিরুদ্ধে। বারবার উঠে এসেছে সুশান্ত রায়ের প্রসঙ্গ। ঘটনার পর কেন তাঁকে আরজি করে আচমকা দেখা গেল সেই প্রশ্ন বারেবারে উঠেছে। চিকিৎসক সৌরভ দত্ত বলছেন, “উত্তরবঙ্গ লবির মাথা সুশান্ত রায় আইএমএ-র গ্রুপে নিজে লিখেছিলেন প্রশাসনের উচ্চ পর্যায়ের নির্দেশে আমরা এখানে এসেছি আমরা জেনেছি ঘটনার দিন রাত অবধি বহু লোকজন মিলে তৎকালীন প্রিন্সিপাল সন্দীপ ঘোষের অফিসে মিটিং করেছে। কিন্তু, তবু সন্দীপ ঘোষ মৃতার বাবা-মায়ের সঙ্গে দেখা করতে পারেননি। কী এমন মিটিং চলছিল যে সেই সময় পেলেন না?”  

যদিও বিতর্কের আবহে আত্মপক্ষ সমর্থন করে নিজের মতো একটা ব্যখ্যা দিয়েছেন সুশান্ত রায়। বলছেন, “সকাল সাড়ে ১০টার সময় ক্যালকাটা মেডিকেল কলেজে একটা ব্লাড ডোনেশন ক্যাম্প ছিল। এর মধ্যে একজন আমাকে ফোন করে জানায় ঘটনার কথা। বলা হয় একটা মেয়ে মারা গিয়েছে। রেপ হয়েছে। আমরা কয়েকজন সেখানে যাই।” কিন্তু, সুশান্ত রায়কে যদি ফোনে বলা হয় খুন-ধর্ষণের কথা, তাহলে কেন ১০টা ৫২ মিনিটের পরে তিলোত্তমার বাবা-মাকে ফোন করে অ্যাসিস্ট্যান্ট সুপার জানিয়েছিলেন আত্মহত্যার কথা? সেই প্রশ্ন জোরালো হয়েছে। উত্তর এখনও অধরা। 

কী বলছেন চিকিৎসকেরা? 

তবে অভিযোগের শেষ এখানেই নয়। অভিযোগ, ল্যাপটপ, মোবাইল নিয়ে পরীক্ষায় বসা, পরীক্ষায় গণ টোকাটুকি, নম্বর বাড়িয়ে দেওয়া-সহ নানা অনিয়মের প্রতিবাদ করায় ‘উত্তরবঙ্গ লবির’ রোষানলে পড়েছিলেন অনেকে। পরীক্ষক পদ থেকে সরিয়েও দেওয়া হয়েছে অনেক চিকিৎসকে। অন্য জায়গায় বদলিও করে দেওয়া হয় বলে অভিযোগ। আর পুরো ষড়যন্ত্রই নাকি হয়েছে স্বাস্থ্য ভবন এবং স্বাস্থ্য বিশ্ববিদ্যালয়ের বেশ কিছু কর্তার কথায়। তাঁদের টিকি বাধা উত্তরবঙ্গ লবির মাথাতেই। চিকিৎসক সৌরভ দত্ত জোরের সঙ্গে বলছেন, শুধু আমরা নয়। এ কথা তো সমস্ত প্রিন্সিপালরা বলছেন।” সৌরভবাবুর পাশে দাঁড়িয়ে একই সুর চিকিৎসক সংগঠনের নেতা মানস গুমটার গলাতেও। তিনি বলছেন, “সৌরভ দত্ত একটা সংগঠনের প্রতিনিধিত্ব করেন। তিনি আইএমএ-র রাজ্য শাখার প্রতিনিধি। তিনি যখন একটা অভিযোগ করছেন তখন তাঁর বক্তব্যের সারবত্তা আছে বলেই মনে করি।” 

সুর চড়িয়েছেন প্রখ্যাত চিকিৎসক অভিজিৎ চৌধুরীও। বলছেন, “বেশ কিছদিন ধরেই একটা ঐতিহ্যশালী মেডিকেল কলেজকে একটা আবর্জনার স্তূপে পরিণত করার চক্রান্ত হয়েছে। যাঁরা এটাকে ধ্বংস করার দিকে এগিয়ে নিয়ে গিয়েছেন তাঁদের যেন কোনওভাবে পুরষ্কৃত না করা হয়। মেডিকেল শিক্ষার ক্ষেত্রে গত ৪-৫ বছর ধরে টোকাটুকি অন্যান্য দুষ্কর্মের চক্র তৈরি হয়েছে। এর বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়াতে হবে।”  

Next Article