
কলকাতা: গুরুদক্ষিণা। মঙ্গলদীপ। আবিষ্কার। তাপস পালের সঙ্গে একের পর এক হিট সিনেমা। তারপর তাপস পালের পথ অনুসরণ করেই রাজনীতিতে পদার্পণ। তৃণমূলে যোগদান। আর ২০০৯ সাল থেকে বীরভূমের সাংসদ তিনি। এবার চতুর্থবার জয়ের লক্ষ্যে বীরভূম থেকেই তৃণমূলের প্রার্থী হয়েছেন শতাব্দী রায়। চতুর্থবার তিনি সাংসদ নির্বাচিত হবেন কি না, তা জানা যাবে জুনের প্রথম সপ্তাহে। আপাতত জেনে নেওয়া যাক, কত স্থাবর-অস্থাবর সম্পত্তি রয়েছে বাংলা সিনেমার ‘লাল পান বিবি’ শতাব্দীর? পড়াশোনা করেছেন কতদূর? কী বলছে তাঁর হলফনামা…
হলফনামায় শতাব্দী ২০১৮-১৯ অর্থবর্ষ থেকে ২০২২-২৩ অর্থবর্ষ পর্যন্ত আয়ের হিসেব দিয়েছেন। শতাব্দী জানিয়েছেন, ২০২২-২৩ অর্থবর্ষে তাঁর আয় ছিল ৮ লক্ষ ৩৮ হাজার ৪১০ টাকা। তার আগের অর্থবর্ষে অর্থাৎ ২০২১-২২-এ তাঁর আয় ছিল ১১ লক্ষ ৯৩ হাজার ৮৩০ টাকা। ২০২০-২১ অর্থবর্ষে ৫ লক্ষ ১১ হাজার ৭১০ টাকা আয় করেন শতাব্দী। ১১ লক্ষ ৫১ হাজার ৬৯০ টাকা আয় করেন ২০১৯-২০ অর্থবর্ষে। ২০১৮-১৯ অর্থবর্ষে শতাব্দীর আয় ছিল ১৪ লক্ষ ৮১ হাজার ৪৪৩ টাকা।
হলফনামায় তাঁর স্বামী মৃগাঙ্ক বন্দ্যোপাধ্যায়ের আয়ের হিসেব জানিয়েছেন শতাব্দী। হলফনামা অনুযায়ী, ২০২২-২৩ অর্থবর্ষে শতাব্দীর স্বামীর আয় ছিল ৩ লক্ষ ৫৯ হাজার টাকা। ২০২১-২২ অর্থবর্ষে মৃগাঙ্ক বন্দ্যোপাধ্যায় আয় করেন ৬ লক্ষ ৭৬০ টাকা। সেখানে ২০২০-২১ অর্থবর্ষে তাঁর আয় ছিল ১ লক্ষ ৫৩ হাজার ১০ টাকা। ৫ লক্ষ ৪১ হাজার ৯৯০ টাকা আয় করেছিলেন ২০১৯-২০ অর্থবর্ষে। শতাব্দীর স্বামী ২০১৮-১৯ অর্থবর্ষে ৫ লক্ষ ৯৯ হাজার ৯৮৯ টাকা আয় করেছিলেন।
শতাব্দী রায়ের স্থাবর-অস্থাবর সম্পত্তি কত?
শতাব্দীর একাধিক ব্যাঙ্কে সেভিংস অ্যাকাউন্ট রয়েছে। একাধিক ফিক্সড ডিপোজিটও রয়েছে তাঁর। তৃণমূল প্রার্থীর স্বামীরও একাধিক সেভিংস অ্যাকাউন্ট রয়েছে। রয়েছে ফিক্সড ডিপোজিটও। মিউচুয়াল ফান্ডে বিনিয়োগ করেছেন অভিনেত্রী তথা সাংসদ শতাব্দী। তৃণমূল সাংসদ ও তাঁর স্বামী একাধিক ব্যক্তিকে ঋণ দিয়েছেন। হলফনামায় তিনি জানিয়েছেন, এক ব্যক্তিকে সিরিয়াল ফিল্ম প্রোজেক্টের জন্য ১ কোটি ২০ হাজার টাকা অগ্রিম দিয়েছেন।
শতাব্দী রায় গত বছরের শেষের দিকে একটি ইনোভা হাইক্রস গাড়ি কিনেছেন। খরচ পড়েছে ৩০ লক্ষ ৫৮ হাজার ১১ টাকা। তাঁর স্বামীরও একটি গাড়ি রয়েছে। ৪ লক্ষ টাকা দিয়ে কেনা হয়েছে সেটি।
হলফনামায় গয়নার হিসেব জানিয়েছেন শতাব্দী। বালা, ব্রেসলেট, কানের দুই, আংটি, হার রয়েছে তাঁর। শতাব্দীর কাছে থাকা বালাটির বাজারমূল্য ৫ লক্ষ ৬০ হাজার টাকা। তাঁর স্বামীরও একাধিক সোনার গয়না রয়েছে। ব্যাঙ্কে জমানো টাকা থেকে সুদও পান শতাব্দী।
সবমিলিয়ে শতাব্দীর অস্থাবর সম্পত্তির পরিমাণ ৩ কোটি ৭৩ লক্ষ ৭২ হাজার ৭৬৯ টাকা। আর তাঁর স্বামীর অস্থাবর সম্পত্তির পরিমাণ ৮৩ লক্ষ ৭ হাজার ৭৩১ টাকা।
স্থাবর সম্পত্তির মধ্যে শতাব্দীর একাধিক ফ্ল্যাট রয়েছে। হলফনামায় শতাব্দী জানিয়েছেন, তাঁর নামে তিনটি ফ্ল্যাট রয়েছে। এবং স্বামীর সঙ্গে যুগ্মভাবে আরও একটি ফ্ল্যাট রয়েছে তাঁর। কলকাতার পাশাপাশি বোলপুরে রয়েছে একটি ফ্ল্যাট। অন্যদিকে, শতাব্দীর স্বামীর নামে একটি ফ্ল্যাট রয়েছে। ১৯৯০ সালে একটি ফ্ল্যাট কিনেছিলেন শতাব্দী। এরপর ২০০৫, ২০০৮ এবং ২০২২ সালে অন্য ফ্ল্যাটগুলি কেনেন। প্রিন্স আনোয়ার শাহ রোডে তাঁর ফ্ল্যাটটির দাম ২ কোটি টাকা। শতাব্দীর মোট স্থাবর সম্পত্তির পরিমাণ ৫ কোটি ৬০ লক্ষ ৭৫ হাজার টাকা। আর তাঁর স্বামী মৃগাঙ্ক বন্দ্যোপাধ্যায়ের স্থাবর সম্পত্তির পরিমাণ ৭০ লক্ষ টাকা। মনোনয়ন পেশের সময় তৃণমূল প্রার্থীর হাতে নগদ ছিল ৬৫ হাজার টাকা। আর তাঁর স্বামীর হাতে নগদ ছিল ৩০ হাজার টাকা।
হলফনামায় শতাব্দী জানিয়েছেন, তাঁর মোট ২ কোটি ১ লক্ষ ৭১ হাজার ৩৯২ টাকা ঋণ রয়েছে। আয়ের উৎস হিসেবে অভিনয়, সাংসদ হিসেবে পাওয়া ভাতা এবং ব্যাঙ্কে জমানো টাকা থেকে পাওয়া সুদের কথা জানিয়েছেন তৃণমূল প্রার্থী। তাঁর স্বামীর আয়ের উৎস ব্যবসা এবং ব্যাঙ্কে জমানো টাকা থেকে পাওয়া সুদ।
কতদূর পড়াশোনা করেছেন শতাব্দী?
হলফনামা শতাব্দী জানিয়েছেন, ১৯৯২ সালে যোগমায়া দেবী কলেজ থেকে স্নাতক পাশ করেন তিনি।
বছর পঞ্চান্নর শতাব্দীর জন্ম উত্তর ২৪ পরগনার আগরপাড়ায়। মাত্র বছর ষোলো বয়সে বাংলা সিনেমার জগতে প্রবেশ করেন তিনি। তাপস পাল, প্রসেনজিৎ, চিরঞ্জিতের সঙ্গে জুটি বেঁধে একের পর হিট সিনেমা উপহার দিয়েছেন দর্শকদের। রাজনীতির ময়দানেও বীরভূম কেন্দ্র থেকে পরপর তিনবার জিতে হ্যাটট্রিক করেছেন তিনি। এবার চতুর্থবার জিতে ফের সংসদে যেতে পারেন কি না, সেটাই এখন দেখার।