কলকাতা: গত কয়েকদিনে বার বার শিরোনামে উঠে এসেছে তাঁর নাম। শ্রীরামপুরের তৃণমূল সাংসদ কল্যাণ বন্দ্যোপাধ্যায়। লোকে বলে, বাক্যবাণে ‘এফোড় ওফোড়’ করে দেওয়ার ক্ষমতা রাখেন মানুষটি। দলীয় নেতা হোক বা বিরোধী, কল্যাণ মুখ খুললে বিতর্ক হবেই। তবে সম্প্রতি অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের বিরুদ্ধে মুখ খুলে বেশ চাপে পড়তে হয়েছে তাঁকে। দিকে দিকে কল্যাণের বিরুদ্ধে সরব হয়েছেন দলের নেতা কর্মীরা। সেদিন আদালতেও তৃণমূল সমর্থিত আইনজীবীদের সেল বিক্ষোভ দেখান কল্যাণের বিরুদ্ধে। বিস্ফোরক সব অভিযোগও আনেন। এসবের মধ্যেই শুক্রবার একটি মামলায় আদালতে হাজির হন আইনজীবী কল্যাণ। সেখানেই বিচারপতির এক প্রশ্নে আবেগপ্রবণ হয়ে পড়েন তিনি। বলেন, আপাতত তিনি মানসিকভাবে ‘সতর্ক’ থাকছেন।
শুক্রবার রেশন ডিলারদের একটি মামলার শুনানি ছিল কলকাতা হাইকোর্টে। মামলার শুনানি শেষ হওয়ার পর বিচারপতি মৌসুমী ভট্টাচার্য তাঁর কাছে জানতে চান, শরীর ঠিক আছে কি না? মৌসুমী ভট্টাচার্য কল্যাণ বন্দ্যোপাধ্যায়কে জিজ্ঞাসা করেন, “আপনি কি শারিরীক ও মানসিকভাবে সুস্থ আছেন?” তারই উত্তরে কল্যাণ বলেন, শারীরিকভাবে সুস্থ তিনি। তবে আপাতত ‘মানসিকভাবে অ্যালার্ট’ রয়েছেন। কল্যাণ বলেন, বিভিন্ন সময়ে নানা ঝড়ঝাপ্টার মুখে পড়েছেন। কিন্তু কোনওদিন দমে যাননি। সমস্যায় পড়লে তিনি সবসময় অবিচল থাকেন। একইসঙ্গে বলেন, সকলের ভালবাসায় এগিয়ে যাবেন তিনি।
এদিন কল্যাণ বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, জীবনে অনেক কঠিন পরিস্থিতির মুখোমুখি হয়েছেন। এ প্রসঙ্গে তুলে আনেন ভিখারী পাসোয়ান মামলার কথা। তিনি জানান, এই মামলা চলাকালীন তাঁর ছেলেকে কিডন্যাপ করার হুমকির মুখে পড়তে হয়েছিল। কিন্তু তিনি দমেননি। তার পরেও বিভিন্ন সময়ে সমস্যার মুখে পড়েছেন, কিন্তু অবিচল থেকেছেন। অতি সম্প্রতি তাঁর বিরুদ্ধে হাইকোর্টের তৃণমূলপন্থী আইনজীবীদের একাংশ বিক্ষোভ দেখান। সেই প্রসঙ্গ সরাসরি না টেনে আনলেনও, কল্যান বন্দ্যোপাধ্যায় জানান, তাঁর জুনিয়ররা প্রায় সকলে আজ বিচারপতি। প্রাক্তন এজি কিশোর দত্তের নাম না করে বলেন, তাঁরই এক জুনিয়র অ্যাডভোকেট জেনারেল হয়েছিলেন। তাই সবার ভালোবাসায় তিনি ভবিষ্যতেও এগিয়ে যাবেন।
গত ১৮ জানুয়ারি কলকাতা হাইকোর্টে তৃণমূলপন্থী আইনজীবী সেলের একাংশ বিক্ষোভ দেখান। দুর্নীতি ও স্বজনপোষণের অভিযোগ তোলা হয় আইনজীবী কল্যাণ বন্দ্যোপাধ্যায়ের বিরুদ্ধে। এবার এই আইনজীবী সেল প্রথমবারের জন্য সংখ্যা গরিষ্ঠতা পেয়েছে লিগাল সেলে। এতদিন এই সংখ্যাগরিষ্ঠতা না পাওয়ার দায় কল্যাণের উপরই ঠেলেন তাঁরা। বিচারপতিদের সঙ্গে কল্যাণ বন্দ্যোপাধ্যায়ের ব্যবহার নিয়েও সরব হয়েছিলেন তাঁরা। এর আগে ১৭ জানুয়ারি কল্যাণ বন্দ্যোপাধ্যায়ের বিরুদ্ধে গণ ডেপুটেশনও জমা দেওয়া হয় আদালতে। সেখানে বহু আইনজীবীর সই ছিল। এরকমই একজন শুভেন্দু সেনগুপ্ত। তিনিও কলকাতা হাইকোর্টের অ্যাডভোকেট। শুক্রবার আইনজীবী শুভেন্দু সেনগুপ্ত একটি চিঠি দেন হাইকোর্টের প্রধান বিচারপতিকে। তিনি নালিশ করেন, তাঁর সই তাঁকে না জানিয়েই ডেপুটেশনের চতুর্থ পেজে রাখা হয়েছে।
শুভেন্দু সেনগুপ্ত জানান, তিনি তৃণমূলের লিগাল সেলের সদস্য। কী লেখা হচ্ছে ডেপুটেশনে তাঁকে না দেখিয়েই সই করানো হয়, বলা হয় দলের তরফে এই সই। পরে তিনি ডেপুটেশনের ‘কনটেন্ট’ দেখেন। তাতে এমন কিছুও লেখা আছে, যা তিনি সমর্থন করেন না। তাই এই ডেপুটেশনে তাঁর সইকে যেন ধরা না হয় সে আর্জি জানান তিনি।