রোজই সূর্য ওঠে। অথচ তার মুখ আমরা কজনই বা দেখি! মুখ দেখা দূরে থাক, গায়ে রোদ লাগাতেই প্রবল অনীহা আমাদের! গায়ে যাতে রোদ না লাগে, সেইজন্য গায়ে লেপটে মেখে নিচ্ছি সানস্ক্রিন লোশন! অবশ্য রোদে ভয়টা একেবারে অমূলক নয়। কারও কারও ক্ষেত্রে দীর্ঘ সময় ত্বকে রোদ পড়লে কিছু সমস্যা হয়। উদাহরণ হিসেবে—
ফটোপিগমেনটেশন বা ত্বকে গাঢ় কালো দাগ, ঘামচি, ফোসকা পড়ে যাওয়া, ট্যান, ফটো অ্যালার্জির কথা বলা যায়। তবে এই ধরনের রোগীর সংখ্যা অনেক নয়। বরং কিছু নিয়ম মেনে গায়ে রোদ লাগালে লাভবান হবেন সিংহভাগ মানুষ। অথচ আমরাবুঝতেই চাইছি না যে রোদের প্রতি ভবিষ্যতে এই উন্নাসিকতার ফলাফল বড় ভয়াবহ হতে চলেছে! কারণ রোদ গায়ে লাগালে পাওয়া যায় অসংখ্য সুফল। আর রোদ ত্যাগ করলে কুফল। আপাতত সুফলের দিকে তাকাই —
দেহের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াতে: কিছু সমীক্ষার রিপোর্টে দেখা গিয়েছে, গায়ে রোদ লাগলে ‘টি সেল’ গুলি প্রবলভাবে সক্রিয় হয়ে পড়ে। মনে রাখতে হবে, এই ‘টি সেল’ আমাদের দেহের রোগ প্রতিরোধে বিশেষ ভূমিকা নেয়। সংক্রমণের জায়গায় পৌঁছে সেখানকার সমস্যা দূর করতে সাহায্য করে বা সরাসরি জীবাণুর সঙ্গে যুদ্ধে লিপ্ত হয় টি সেল। তাই টি সেলের সক্রিয়তা বজায় থাকা দরকার।
ভিটামিন ডি: নিয়মিত গায়ে রোদ লাগানো জরুরি। কারণ একমাত্র ভিটামিন ডি ত্বকে তৈরি হয় হয় রোদ পাওয়ার পরেই! ভিটামিন ডি-এর অভাবে অকালে হাড় ভঙ্গুর হয়ে পড়ে। এছাড়া সাম্প্রতিক কিছু গবেষণায় জানা যাচ্ছে শরীরে ভিটামিন –ডি এর অভাবে মিসক্যারেজ হওয়ার আশঙ্কা থেকে যায়। অথচ সামান্য গায়ে রোদ লাগালে এই ধরনের সমস্যা এড়ানো সম্ভব! বিদেশের বেশকিছু গবেষণায় দেখা যাচ্ছে, গ্রীষ্মে গায়ে ভালোভবে রোদ লাগালে রক্তে ভিটামিন ডি৩-এর মাত্রা ভালো থাকে। শীতকালে এই ভিটামিন ডি৩ থেকে পর্যাপ্ত পরিমাণে ভিটামিন ডি পাওয়া যায়!
ক্যান্সার প্রতিরোধে: বেশ কিছু সমীক্ষায় দাবি করা হচ্ছে ব্রেস্ট, কোলোন এবং প্রস্টেট ক্যানসার রোধে সাহায্য করে সূর্যের আলো।
ঘুমের হর্মোন: আমাদের শরীরের মেলাটোনিন নামে একটি হর্মোন ক্ষরিত হয় যার কারণে আমাদের ঘুম আসে। দিনের বেলায় প্রকৃতির উজ্জ্বল আলোয় কাজ করলে রাতে মেলাটোনিন ক্ষরণ ভালো হয়। খুব ভালো হয় ভোরের আলোয় জেগে উঠে দিন শুরু করলে।
মেলাটোনিন আমাদের শারীরবৃত্তীয় ঘড়িটিকে স্বাভাবিক রাখতে সাহায্য করে।
মন ভালো রাখতে: সঠিকভাবে সূর্যের আলো গায়ে পড়লে আমাদের শরীরে এন্ডোর্ফিন নামের হরমোন নিঃসৃত হয়। এই হর্মোনের কারণে আমাদের মেজাজ ভালো থাকে। জানার বিষয় হল, এন্ডোর্ফিন হর্মোন ব্যথা-যন্ত্রণা কমাতে সাহায্য করে। ডিপ্রেসন বা অবসাদ কাটাতেও রোদ খুব উপকারী।
রক্তচাপ কমাতে: রোদে থাকে অতিবেগুনি রশ্মি। বিভিন্ন সমীক্ষায় দেখা যাচ্ছে, এই রশ্মির সংস্পর্শে আসলে ত্বক থেকে নাইট্রিক অক্সাইড নিঃসৃত হয়। এই রাসায়নিকটি রক্তচাপ কমাতে সাহায্য করে।
পুরুষ হরমোন: বিভিন্ন সমীক্ষায় দেখা গিয়েছে, পুরুষের রক্তে টেস্টোস্টেরন হর্মোনের মাত্রা স্বাভাবিক থাকে যখন ভিটামিন ডি-এর মাত্রা অনুকূলে থাকে। আর ভিটামিন ডি’র প্রধান উৎস হলো সূর্যালোক!
শ্বেতি সারাতে রোদ: আমাদের ত্বকে আছে মেলানোসাইট নামে কোষ। এই কোষ মেলানিন তৈরি করে। মেলানিন হল একধরনের রঞ্জক পদার্থ। এই রঞ্জক পদার্থের কারণে আমাদের দেহের রং কালো হবে না ফর্সা হবে তা নির্ভর করে। মেলানিন আসলে আমাদের ত্বক রক্ষা করে। আমরা যখন রোদে বেরয় তখন অতিবেগুনি রশ্মি আমাদের ত্বকে পড়ে। এই রশ্মির কিছু কিছু খারাপ প্রভাবও আছে। সেই খারাপ প্রভাব থেকে আমাদের ত্বককে বাঁচাতে মেলানোসাইট কোষগুলি উদ্দীপিত হয়ে যায় ও বেশি করে মেলানিন তৈরি করে। এই কারণে রোদে বেরনোর পর কারও কারও লাল লালা বা কালো হয়ে যায়। শ্বেতি রোগে মেলানিন উৎপাদনে সমস্যা হয়। তাই ত্বকে এই ধরনের সমস্যা হলে চিকিৎসক রোগীকে রোদে থাকতে বলেন নির্দিষ্ট সময়ের জন্য।
কখন রোদে বেরবেন—
সকাল ১১টার পর অতিবেগুনি রশ্মির তলায় না যাওয়ায় ভালো। তাই সকাল ৮টার পর আধঘণ্টা রোদে কাটান। ওসিময়ে অতিবেগুনি রশ্মির প্রভাব কম তাকে। ছোটদের জন্য মিনিট ১৫ রোদে কাটালেই চলবে। তবে একটু বড় বয়সের বাচ্চাকে রোদে খেলতে দিন। সমস্যা নেই।
আরও পড়ুন: Dry Hair In Men: মহিলাদের মতন পুরুষদেরও রয়েছে শুষ্ক চুলের সমস্যা! এর আসল কারণ কী?