Sologamy: নিজেকে ভালবেসে বিয়ের ঘটনা ভারতেই প্রথম নয়, কেমন এই ‘সোলোগ্যামি’র ইতিহাস?
Relationship: প্রাচীনযুগে সমকামিতা, উভকামিতার উদাহরণ পাওয়া গেলেও ভারত-সহ বিশ্বের অন্যান্য দেশে নিজগামিতা 'সোলোগ্যামি'র ঘটনা কোনওকালেই 'ট্রেন্ড'-এ ছিল না।
‘জব উই মেট’ সিনেমায় করিনা কাপুর খানের সেই জনপ্রিয় ডায়লগটা মনে আছে আপনার? “ম্যাঁয় অপনি ফেভরিট হুঁ…” এই তত্ত্ব কোনওদিন নিজের জীবনে ব্যবহার করার চেষ্টা করেছেন? কথায় আছে, সবার আগে নিজেকে ভালবাসা দরকার। কিন্তু নিজেকে ভালবাসতে গিয়ে নিজের সঙ্গে বিয়ে- বিষয়টা কি সত্যিই অন্যরকম? বৃহস্পতিবার সারাদিন ধরে সোশ্যাল মিডিয়ায় ট্রেন্ডিং ছিল একটা হ্যাশট্যাগ: ‘সোলোগ্যামি’। নেপথ্যে রয়েছেন ক্ষমা বিন্দু। গুজরাটের বাসিন্দা ক্ষমা, আগামী ১১ জুন নিজেকে ভালবেসে নিজেকেই বিয়ে করতে চলেছেন। এই ঘটনাই আলোড়ন ফেলে দিয়েছে সারা ভারতে। তবে ভারতে প্রথম হলেও বিশ্বে এমন ঘটনা নেহাত কম নয়।
প্রাচীনযুগে সমকামিতা, উভকামিতার উদাহরণ পাওয়া গেলেও ভারত-সহ বিশ্বের অন্যান্য দেশে নিজগামিতা ‘সোলোগ্যামি’র ঘটনা কোনওকালেই ‘ট্রেন্ড’-এ ছিল না। এমনকী ২৪X৭ ডিজিটাল ডেমোক্রেসির যুগেও ‘সোলোগ্যামি’-এর ঘটনা বিরল। কিন্তু নিজেকে ভালবাসার বিষয়টা তো নতুন নয়। বরং আত্মপ্রেম জরুরি।
বিয়ে হল দু’টো মানুষের মনের মিলন। নিজেকে যদি ভালবাসতে পারেন, তাহলে নিজের সঙ্গে বিয়ে কেন নয়? অন্তত এমনটাই ধারণা ২৪ বছরের ক্ষমার। কিন্তু মনস্তত্ত্বের দিকে দিয়ে বিচার করলে নিজেকে বিয়ে করার বিষয়টা হল আত্মপ্রেমের চরম বহিঃপ্রকাশ।
‘ম্যাঁয় আপনি ফেভরিট…’ না হলেও কম-বেশি আমরা সকলেই নিজেকে ভালবাসি। কিছুটা ভাল ভাবে বেঁচে থাকার তাগিদেই হয়তো আমরা আত্মপ্রেমে মগ্ন হয়ে পড়ি। কিন্তু নিজগামিতার বিষয়টা এর চেয়ে বেশ আলাদা। নিজগামিতায় কোনও ‘তুমি’-র জায়গা নেই। নিজেকে বিয়ে করার অর্থ নিজের সত্ত্বার সঙ্গে সংযোগ তৈরি করা। মন খারাপ হলেও সঙ্গী নিজেই। আবার আনন্দের চরম মুহূর্তেও পাশে রয়েছেন আপনি নিজেই।
প্রতিদিন ঘুম থেকে উঠে আয়নার নিজের প্রতিচ্ছবি দেখে ক’বার ‘আই লাভ ইউ’ বলেন? নিজগামিতার ক্ষেত্রে বার বার আপনি প্রেমে পড়বেন নিজের প্রতিচ্ছবি দেখে। তখন শুধু একটাই বুলি আওড়াবেন ‘আই লাভ মাইসেল্ফ’। যদিও এর পিছনে রয়েছে অন্য মনস্তাত্ত্বিক ব্যাখ্যা। সাধারণত দেখা যায়, যারা শৈশবে খুব বেশি অবহেলার শিকার হয় কিংবা মাত্রাতিরিক্ত প্রশয়ের মধ্য দিয়ে বড় হয়ে ওঠে, তাদেরই একাংশ আত্মপ্রেমে মগ্ন হয়ে পড়ে।
২০০৩ সালের ‘সেক্স অ্যান্ড দ্য সিটি’ সিরিজের মাধ্যমেই একপ্রকার প্রথমবার পপুলার কালচারের বৃত্তে উঠে আসে ‘সোলোগ্যামি’ ভাবনাটি। ক্যারি ব্র্যাডশ নামক চরিত্রটি সেখানে নিজেকে বিয়ে করার কথা ঘোষণা করেন। এ তো গেল ফিকশনের কথা। বাস্তবে এর আগে ১৯৯৩ সালে আমেরিকায় লিন্ডা বেকার নামে এক মহিলা তাঁর ৪০তম জন্মদিনে নিজেকে বিয়ে করেছিলেন। লিন্ডাকে ‘সোলোগ্যামি’-র পথপ্রদর্শক বললেও হয়তো ভুল হবে না। এরপর ২০০৩ সালে আবার নেদারল্যান্ডসের বাসিন্দা জেনিফার হোয়েস নিজেকে বিয়ে করেছিলেন। তিনি পেশায় ছিলেন একজন চিত্রশিল্পী।
নেট মাধ্যমে আরেকটি সোলোগ্যামির ঘটনা উঠে এসেছে। যেখানে ক্রিস গ্যালেরা নামে এক মডেল নিজেকে বিয়ে করেছিলেন। কিন্তু পরবর্তী সময়ে তিনি আবার নিজেকেই ডিভোর্স দিয়ে দেন। কারণ সেই সময় তিনি খুঁজে পেয়ে যান ‘মনের মানুষ’। একটু লক্ষ্য করলে দেখা যাবে, যে সব সোলোগ্যামির ঘটনাগুলো সারা বিশ্ব জুড়ে উঠে এসেছে, তার মধ্যে রয়েছেন শুধু মহিলারাই। আমেরিকা, ব্রিটেন, কানাডা, অস্ট্রেলিয়া, নেদারল্যান্ডসের মতো উন্নত দেশগুলোতেও নিজগামিতার উদাহরণ শুধু মহিলাদের মধ্যেই দেখা যায়। তাহলে কি পুরুষরা আত্মপ্রেমের ক্ষেত্রে পিছিয়ে?