Motorcycle Ride: মোটরসাইকেল ডায়েরিজ: পর্ব ৪৫–ছুটি কাটাতে চলুন পোড়ামাটির দেশে
Purulia: দু'দিন পরে যখন কলকাতা ফিরবেন তখন অবশ্যই এই জায়গায় একবার ঘুরে আসবেন যেটির নাম পাঁচমুড়া। এই জায়গাটি পোড়ামাটির নানা ধরনের মূর্তির জন্য বিখ্যাত। এখানে আসলে আপনি দেখতে পাবেন কীভাবে প্রতিটি বাড়িতে তাঁরা এই ধরনের ভারত বিখ্যাত মূর্তিগুলোকে তৈরি করছে।

মোটরসাইকেলের ঘুরে বেড়ানো, বাইকপ্রেমীদের কাছে শুধুমাত্র নতুন জায়গা দেখা কিংবা সময় কাটানোর বা প্রকৃতির মাঝে হারিয়ে যাওয়ার একটি অংশ নয়, এটি হল সেই সব মানুষের বেঁচে থাকার অক্সিজেন প্রদান। মানে যাঁরা শুধু ঘুরতে ভালবাসেন, আর শুধুমাত্র একঘেয়েই জীবনকে একটু বিদায় দিয়ে একটু অন্যভাবে সময় কাটিয়ে আসে তাঁদের থেকে একজন বাইকপ্রেমী মানুষের ঘুরে বেড়ানো একটু আলাদা। কখনও কখনও আবার এই বাইকপ্রেমী মানুষ সেই অক্সিজেনের সন্ধানে একই জায়গায় বারবার চলে আসে। শুধু সময় কাটানো নয় নিজেকে সময় দেওয়াটাও একটা বড় পাওনা। তাই চলুন এই ব্যস্ত জীবনের মাঝে আবারও বেরিয়ে আসি এমন একটি জায়গায় যেখানে আমি অন্তত বছরে দু’বার যাই। হতে পারে বাঁকুড়ার এই জায়গায় আছে শিলাবতী নদীর আঁকাবাঁকা গতিপথের মাঝে গড়ে ওঠা একটি ঝর্ণা, আছে জঙ্গল, আছে উচু নিচু লাল মাটির রাস্তা যার দুপাশে পলাশ গাছ আর আছে এখানকার সাধারণ মানুষের জীবনযাত্রার ইতিহাস ,আছে আমের বাগান, আছে কৃত্রিম উপায়ে মধু চাষ তার সাথে আছে সারা সকাল থেকে বিকেল পর্যন্ত বসে মাছ ধরার অভিজ্ঞতা, আছে শীতকালে ভরে উঠে খেজুরের রস খাওয়ার আনন্দ, আছে সেই দাদার (সুব্রত বড়াল) মাটির তৈরি দোতলা বাড়ি যার নাম মহুল।

এমন একটি জায়গা যেখানে আপনি সব খুঁজে পাবেন শান্ত নিরিবিলি প্রকৃতির মাঝে অনেক অনেক সময় কাটাতে পারবেন আর এখানে আকাশ, দিন হোক কিংবা রাত সবসময়ই ঝলমলে। বর্ষার সময় এই শিলাবতী নদীকে দেখলে আপনি ভয় পাবেন আবার শীতের সময় তার গতিপ্রবাহ এতটাই শান্ত আর নির্মল যে স্নান না করে থাকতে পারবেন না। কলকাতা থেকে এর দূরত্ব মাত্র ২০০ কিলোমিটার আর হ্যাঁ জায়গাটির নাম খিঁচকা।

তাই চলুন আর দেরি না করে বেরিয়ে পড়ি খিঁচকার উদ্দেশ্য। এখানে বলে রাখি যেহেতু নিজের বাড়িতেই যাচ্ছি, তাই সামান্য কিছু জিনিসপত্র আর বাইকের কিছু দরকারি সরঞ্জাম যেমন পাংচার কিট এবং বাইকের চাকায় হাওয়া দেওয়ার মেশিন ইত্যাদি ছোট ছোট কিছু বাইকের জিনিসপত্র নিয়ে, ভোরবেলা পাঁচটার মধ্যেই কলকাতাকে গুডবাই করে বেরিয়ে পড়লাম বাঁকুড়ার উদ্দেশ্যে। খিঁচকা যাওয়ার রাস্তাটি হল চাপাডাঙ্গা হয়ে আরামবাগ তারপর জয়পুর ফরেস্ট ক্রস করে বিষ্ণুপুর, তারপর বিবার্দা-শিবদাঙ্গা রাস্তা ধরে কিছুদূর গিয়ে বিবার্দা মোড় থেকে বাঁ দিক নিয়ে জেমুয়া, কলশুলি হয়ে মহুল। মহুল হল আজকের এবং আগামী দুদিনের গন্তব্যস্থান। এখানে পৌঁছোতে আপনার মোটামুটি পাঁচ ঘন্টা সময় লেগে যাবে তার কারণ মাঝে রয়েছে জয়পুর ফরেস্টের সকালের খাওয়া-দাওয়া আর অনেকটা সময় কাটানো। সকাল দশটায় এখানে পৌঁছিয়ে ঘুরে বেড়ান আশেপাশে জঙ্গল এখানে গেলে দেখতে পারবেন কিভাবে মধু চাষ করা হয়। ছোট ছোট কাঠের বক্স করে কিভাবে কৃত্রিম উপায় মধু চাষ করা হয় এর আগে কখনো আমি দেখিনি। এখানের জঙ্গলে পাবেন বড় বড় অর্জুন গাছ, শাল গাছ, পলাশ এবং সেগুন গাছের সমাহার। দাদা যেভাবে তার বাগান বাড়ি সাজিয়েছেন তা সত্যিই দেখার মত চারপাশে বিঘার পর বিঘা জমিতে আম গাছ, পলাশ এবং নানা ধরনের ফুলের চাষ আপনাকে ভাগিয়ে তুলবো।

এরপর সারাদিনের ক্লান্তি কাটানোর জন্য নদীর জলে স্নান করা তো আছেই। এরপর বিকেলের পড়ন্ত আলোয় আবার মহুল ফিরে আসা। সারাটা সন্ধ্যে প্রচুর মশা, জোনাকি আলো আর ঝিঁঝিঁ পোকার ডাক এবং তার সাথে জঙ্গলের নানা ধরনের পোকামাকড় আর সাপ তো আছেই। জঙ্গলে থাকতে গেলে তাদের সাথে সবসময় যুদ্ধ তো করতেই হবে তার কারণ এটা তাদের ঘর। এছাড়াও অন্যান্য ব্যবস্থার মধ্যে আপনি চাইলেই আদিবাসীদের নাচ-গান এবং তাদের জীবন যাত্রার নাটক এই সবই দেখতে পারবেন এখানে। এছাড়াও এখানে ঘুরে দেখার জন্য অন্যান্য জায়গার মধ্যে প্রধান জায়গা হল সোনামণি পাহাড়, শালবন এবং অর্জুন গার্ডেন, ঘাগড় মিনি ওয়াটার ফলস তো আছেই।

দু’দিন পরে যখন কলকাতা ফিরবেন তখন অবশ্যই এই জায়গায় একবার ঘুরে আসবেন যেটির নাম পাঁচমুড়া। এই জায়গাটি পোড়ামাটির নানা ধরনের মূর্তির জন্য বিখ্যাত। এখানে আসলে আপনি দেখতে পাবেন কীভাবে প্রতিটি বাড়িতে তাঁরা এই ধরনের ভারত বিখ্যাত মূর্তিগুলোকে তৈরি করছে। ভারতের গ্রামীণ হস্তশিল্পের শ্রেষ্ঠত্বের প্রতীক হিসাবে বিবেচনা করা হয়। এগুলি সর্বভারতীয় সরকারী মোটিফ হিসাবেও ব্যবহৃত হয় করে হস্তশিল্প বোর্ড। বাঁকুড়ার ঘোড়ার একটা বিশেষত্ব আছে একটি দীর্ঘ ঘাড় এবং খাড়া কান সঙ্গে বৈশিষ্ট্য। এগুলি পোড়া মাটি দিয়ে তৈরি এবং সাধারণত কাদা-বাদামী বা কালো রঙে হয়। টেরাকোটার গহনাগুলিও ভারত জুড়ে বেশ বিখ্যাত। আঙুলের আকার থেকে শুরু করে মানুষের উচ্চতা পর্যন্ত বিভিন্ন আকার হয় এখানকার মূর্তিগুলো।
