
তরুণ প্রজন্মের কাছে খুব একটা পরিচিত না হলেও একটা সময় ছিল যখন দোলের রং খেলার সঙ্গেই জুড়ে ছিল মঠ-ফুটকড়াই এই দুই শব্দ। দোলের সময় প্রথমে ঠাকুরের সামনে নিবেদন করে তারপরে এই দুটো খাওয়া ছিল মাস্ট। আগে দোলের কয়েকদিন আগে থেকে বেশ কয়েক দিন পর অবধি বাজার দেখা মিলত এই দুটি জিনিসের। এখনও বহু দোকানে বিক্রি হলেও, কমে এসেছে।
দোকানের সামনে থালায় প্রচুর রঙবেরঙের মঠ সাজানো থাকত। পাশে থাকত ফুটকড়াই। কালচে ভাজা মটরের ওপর চিনির আস্তরণ। সঙ্গে সাদা মুড়কি। অর্থাৎ চিনির মুড়কি। মঠ মূলত চিনির তৈরি উঁচু শক্ত একটি মিষ্টি । সেটা মোমবাতি,ফুল, পাখি-সহ বিভিন্ন আকারের আর বৈচিত্রের মঠ পাওয়া যেত দোকানে। চুটিয়ে রঙ খেলার ফাঁকে মুখে চালান হয়ে হত এই মঠ আর ফুটকড়াই । কিন্তু কোথা থেকে এল এই অদ্ভুত মিষ্টির চল, জানেন?
শুনলে অবাক হবেন, যেই মঠ আর ফুটকড়াই ছাড়া অসম্পূর্ণ বাঙালির দোলযাত্রা তা কিন্তু আসলে বাঙালি মিষ্টি নয়। এর ইতিহাস বেশ সুপ্রাচীন। ইতিহাসবিদরা বলছেন এটি আসলে পর্তুগীজদের খাবার। ভারতে এর প্রথম দেখা পাওয়া যায় ব্যান্ডেল চার্চে।
ক্রিসমাসের সময় গির্জার মতো দেখতে ছাঁচে চিনির রস ঢেলে বিশেষ এক ধরনের মিষ্টি তৈরি করা হত। যা নিবেদন করা হত আরাধ্যর সামনে। প্রভু যিশুর সেই প্রসাদ বিতরণ করা হত সকলের মধ্যেই।
এদেশীয় হাতে যখন সেই মিষ্টি পড়ল, তখন তাঁরা দেখল এই মিষ্টির সঙ্গে ভারী মিল রয়েছে বাঙালির একটা জিনিসের। তা হল বাতাসা। বর্তমানে এই জিনিসটির চাহিদা কমে এলেও, একটা সময়ে বাড়িতে কেউ এলে অন্তত জল-বাতাসা দেওয়াটা শিষ্টাচারের একটা অংশ ছিল। ফুটো হাঁড়িতে চিনির রস ফুটিয়ে তা মাদুরে ফোঁটা ফোঁটা ফেলে হাওয়ায় শুকিয়ে তৈরি হয় বাতাসা। আর সেই চিনির রস কাঠের ছাঁচে ফেলে তৈরি করা হয় মঠ। যদিও বাতাসার থেকে রস একটু গাঢ় আর শক্ত হয়। সঙ্গে মেশানো হয় প্রয়োজন মতো রং।
পর্তুগীজদের কাছে এই মিষ্টি কী নামে পরিচিত ছিল তা জানা যায় না। তবে বাঙালিরা প্রথমে এই মিষ্টিকে চিনির ছাঁচ বলত। পরে গির্জার মতো আকৃতি থেকেই নাম হয় মঠ।