AQI
Sign In

By signing in or creating an account, you agree with Associated Broadcasting Company's Terms & Conditions and Privacy Policy.

Obhishek Kar: ‘কৃষ্ণনগর থেকে ভিড় ট্রেনে ঝুলতে-ঝুলতে বাড়ি এসে শাড়ি উপহার দিয়েছেন’, অভিষেক ‘বন্যা’ কর

Shubho Bijoya: ‘ঘরের মেয়ে’ আজ আবার ফিরে যাবে তার সাজানো-গোছানো সংসারে। মন খারাপ নিয়েই ব্যস্ত হয়ে পড়বে সাংসারিক কড়চায়। জীবন যে থেমে থাকে না...

Obhishek Kar: 'কৃষ্ণনগর থেকে ভিড় ট্রেনে ঝুলতে-ঝুলতে বাড়ি এসে শাড়ি উপহার দিয়েছেন', অভিষেক ‘বন্যা’ কর
হয়তো তোমারি জন্য...
| Updated on: Oct 05, 2022 | 7:32 PM
Share

“আঁধারের গ্রাস হতে কে টানিছে তারে, কহিতেছে শতবার “যেতে দিব না রে!” এ অনন্ত চরাচরে স্বৰ্গমর্ত্ত্য ছেয়ে সব চেয়ে পুরাতন কথা, সব চেয়ে গভীর ক্রন্দন “যেতে নাহি দিব।” হায়, তবু যেতে দিতে হয়, তবু চলে যায়! চলিতেছে এমনি অনাদিকাল হতে।”

না চাইলেও ফুরিয়ে যায় নবমীর নিশি। জোর করে কিছুতেই তাকে আটকে রাখা যায় না। ‘ঘরের মেয়ে’ আজ আবার ফিরে যাবে তার সাজানো-গোছানো সংসারে। মন খারাপ নিয়েই ব্যস্ত হয়ে পড়বে সাংসারিক কড়চায়। জীবন যে থেমে থাকে না… তবুও বছরভর এই টিকে থাকার লড়াইয়ে প্রাণশক্তি জুগিয়ে চলে উমাই। প্রতিবাদে, প্রতিরোধে, নিজের শর্তে বেঁচে থাকতে উমাদের কেউ আটকে রাখতে পারে না। উমারা অদম্য। তেমনই এক উমার গল্প আজ থাকল TV9 বাংলার পাঠক-পাঠিকাদের জন্য। যে উমা ‘শেষের কবিতা’র অমিত-কে মোটেই পছন্দ করে না। যদিও এই উমা ‘বন্যা’র মতোই মুক্ত,উচ্ছল। এই বন্যা প্রেমের জোয়ারে ভাসতে ভালবাসেন। এই বন্যা ওরফে অভিষেক কর প্রেমিকা হতে চেয়েছিলেন, কিন্তু ‘ওরা লেখিকা বানিয়ে সম্পর্ক ভেঙে দিল…’

কিছুদিন আগে ফেসবুকে একটি পোস্ট করেছিলেন বন্যা। তিনি লিখেছিলেন, “অনেকেই বলবে আমি ইদানীং মানুষের অনুদানে বেঁচে আছি। এটা শুনেও আমার খারাপ লাগবে না। যদি অনুদানের মানে কারও দিদি, কারও বোন, কারও মাতৃতুল্য হওয়াকে বোঝায়, তাহলে এই অনুদানের জীবন যেন আমার মতো সব ঘরছাড়া নারী পায়।” এহেন পোস্ট দেখে কৌতূহলের বশেই TV9 বাংলার তরফে খোঁজ নেওয়া তাঁর কাছে। বন্যা খোলসা করে বললেন, “অনেকেই বলেছেন আমি নাকি ফেসবুকে কান্নাকাটি করে বলেছি যে, এই পুজোয় আমার একটাও শাড়ি হয়নি। তা-ই লোকে দিয়ে গিয়েছে। কিন্তু আমি এরকমটা বলিওনি, লিখিনওনি। সবাই আমাকে ভালবেসে শাড়ি দিয়েছেন। জানেন, আমি শাড়ি পরতে ভালবাসি? এটা যদি বাকিদের অনুদান মনে হয়, তাহলে যেন এমন অনুদান আমি বছর-বছর পাই। কারণ এটা মানুষের ভালবাসা।” ‘অনুদান’-এর উপহারে এবারের পুজোয় বন্যা কীভাবে ভাসিয়ে নিয়ে গেলেন নিজেকে?

‘তোমায় আমায় দেখা হল সেই মোহানার ধারে’

খুব ছোটবেলা থেকেই নিজের মধ্যে নারী সত্ত্বা লুকিয়ে রেখেছিলাম। মনে-মনে আমি সবদিনই নারী। টিভিতে হিন্দি সিনেমা দেখে নায়কদের প্রতি ক্রাশ খেতাম আর নিজেকে নায়িকার জায়গায় দেখতাম। ছোটবেলার দেখা সেই স্বপ্ন পূরণ করার জন্য তখন যে পরিমাণ অর্থের প্রয়োজন ছিল, তখন তা হাতে ছিল না। ২০১৬ থেকে ‘সূর্য ও বন্যা’ নামে একটি সিরিজ় লিখতে শুরু করলাম। কিছুদিন পর রাজনৈতিক কারণেই সেই প্রোফাইল বন্ধ করে দেওয়া হয়। তখনকার বন্যা ছিল আজকের এই বন্যার মতই। খোলামেলা, স্বাধীনচেতা, ঠোঁটকাটা। ধীরে ধীরে LGBTQI আন্দোলনের পথ একটু সহজ হলে বন্যার আত্মপ্রকাশ শুরু। স্বনির্ভর হওয়ার পর থেকেই অভিষেকের ‘বন্যা’হয়ে ওঠার যাত্রা শুরু।

‘নয় এ মধুর খেলা’

পরিবার থেকে যখন বেরিয়ে আসি, তখন মা বলেছিল, ‘তোদের মতো মানুষদের (পড়ুন হিজড়েদের) মুখও আমি দেখি না। সেখানে আমার সন্তানই এই রকম।’ লকডাউনের সময়, তখন আমি ওয়ার্ক ফ্রম হোম করতাম… সকাল ৮টায় কাজে বসে রাত ৯টায় উঠতাম কাজ থেকে। মায়ের বক্তব্য ছিল, শনি-রবিবার আমি অন্য ছেলেদের সঙ্গে হোটেলে যাই। কিছুদিন আগে আমার মা হাসপাতালে ভর্তি হয়েছিল। আর তখন সেখানে যাওয়ার পর হাসপাতালের কর্মীরা যখন আমায় ‘ম্যাডাম’ বলে সম্বোধন করছে, তখন আমার মা বলে ওঠে, ‘ওকে মেয়ে বলছ কেন? ও ছেলে।’ আমার ভাইয়ের বউ বরাবর আমার পাশে থেকেছে। আমি ওর বড় ভাসুর নই, আমাকে ‘বড়দি’ হিসেবেই দেখে। ওর জন্যেই আমার যাত্রা সহজ হয়েছে।

‘তোমার প্রেমে আঘাত আছে নাইকো অবহেলা’

আর্থিকভাবে সাবলম্বী হওয়ার পর আমি ধীরে-ধীরে নিজেকে পাল্টে ফেলতে শুরু করি। অর্থাৎ রূপান্তরকামী হিসেবে আমার যাত্রা শুরু। শারীরিকভাবে নিজেকে বদলে ফেলার চেষ্টা করলেও মানসিকভাবে প্রতিটা দিনই আমি নারী। এখনও আমি সার্জারির প্রসেসের মধ্যে দিয়ে চলছি। যেহেতু এই সার্জারি বেশ খরচসাপেক্ষ, তাই-ই ধীরে-ধীরে টাকা জমিয়ে সবটা করে নিতে পারব। বন্ধুরা সব সময় আমার পাশে আছে। ভাইয়েরা আছে। প্রসূন, নিলয়, সুহান, অভিজিৎ, আশিস, ইন্দিরা…কতজনেরই বা আর নাম বলি। কেউ আমায় শাড়ি পরা শিখিয়েছে। কেউ চুল বাঁধতে, কেউ কাজল পরতে। আমি অবশ্য এটা বলছি না যে, মেয়ে মানেই শাড়ি পরতে হবে। চুল বাঁধতে হবে। যেহেতু আমি এসব ভালবাসি, তাই-ই স-অ-অ-অ-ব কিছু হাতে ধরে শিখিয়েছে। আর আশিস ছিল বলে আমার একার সংসারটা অনেক বেশি সহজ হয়েছে।

‘ভালবেসে ভালবাসায় বেঁধে যে রাখে’

শাড়ি পরতে আমি ভীষণ ভালবাসি। শাড়ির মধ্যে অদ্ভুত একটা মাদকতা মিশে রয়েছে। আমার কাছে শাড়ির মতো ‘সেক্সি’ পোশাক আর কিছুই নেই। শাড়িই আমার স্টাইল স্টেটমেন্ট। এই পুজোয় আমি অনেকগুলো শাড়ি, কুর্তি উপহার পেয়েছি। কৃষ্ণনগর থেকে ভিড় ট্রেনে ঝুলতে-ঝুলতে বাড়ি এসে শাড়ি উপহার দিয়েছেন আমার শুভাকাঙ্খীরা। কিছুদিন আগে আমি সাদা শাড়ির সঙ্গে সাদা ব্লাউজ় পরেছিলাম। অনেকেই আমার সঙ্গে ‘গাঙ্গুবাঈ’-এর তুলনা করেছেন। এ আমার পরম প্রাপ্তি। আমার কাছে ফ্যাশান হল আরামদায়ক। ফ্যাশান মানেই স্টাইল স্টেটমেন্ট নয়। যে সব ডিজ়াইনার, যে সব বিপণি মানুষের পছন্দমতো পোশাক বানাচ্ছেন, মানুষকে সাজিয়ে তুলতে যাঁরা নিরলস চেষ্টা করে চলেছেন, তাঁদের নাম আমি বরাবর উল্লেখ করার চেষ্টা করি।

‘বারে বারে বাঁধ ভাঙিয়া বন্যা ছুটেছে’

আমি এখন গবেষণার কাজ করি। অ্যাকাডেমিক রিসার্চ রাইটার হিসেবে। এছাড়াও আমি লিখি। আগামী বইমেলায়, ২০২৩ সালে ‘অমর একুশ বইমেলা’-য় আমার পরবর্তী বই প্রকাশিত হবে। যে প্রকাশনা সংস্থা থেকে নির্মলেন্দু গুণ, সেলিনা হোসেন, আরণ্যক বসুর বই প্রকাশিত হয়, সেই প্রকাশনা সংস্থা আমায় এমন একটি সুযোগ দিয়েছে। আমি খুবই আনন্দিত। কৃতজ্ঞ প্রকাশক অঞ্জন হাসানের কাছে।

‘ভালবাসি, ভালবাসি’

‘শেষের কবিতা’র অমিত-কে কোনও দিনই আমার পছন্দ নয়। অমিত বড্ড বেশি পুরুষতান্ত্রিক। বন্যাকে জোর করে আটকে রেখেছিল। বন্যা আটকে থাকতে চায় না। বন্যার নিজের খরস্রোতা গতিতেই বইতে চায়। বন্যার জন্য অমিত বা শোভনলাল কেউই নেই। তবে বন্যার একজন শোভনলালকে প্রয়োজন। আসলে বন্যা তো প্রেমিকাই হতে চেয়েছিল। আমার বায়োতেই লেখা রয়েছে: ‘আমি তো প্রেমিকাই হতে চেয়েছিলাম। ওরা লেখিকা বানিয়ে সম্পর্ক ভেঙে দিল।’