Kerala Woman: ৩৫ বছরের মহিলা তা দিচ্ছেন নিজের গোঁফে, বলছেন: ‘আই লাভ মাই মুশট্যাচ’
Shyja: আজকাল ফ্যাশনে সেই অর্থে ‘শুধুমাত্র ছেলেদের’ বা ‘শুধুমাত্র মেয়েদের’ বলে কিছু হয় না। ছেলেরাও ‘মেয়েদের মতো’ শাড়ি পরায় অভ্যস্ত
‘‘গোঁফ জোড়া যে কোথায় গেল কেউ রাখে না খবর’’—‘গোঁফচুরি’র পর ‘হেড অফিসের বড়বাবু’র আক্ষেপ ছিল অনেকটা এমনটাই। কিন্তু ৩৫ বছরের এই মহিলার গোঁফ চুরি যায়নি। তাই নিজের গোঁফ নিয়ে কোনও আক্ষেপও নেই তাঁর। বরং হোয়াটসঅ্যাপ স্টেটাসে ‘সোয়্যাগ সে’ তিনি নিজের গোঁফকে ‘সোয়াগত’ জানিয়ে নির্দ্বিধায় ঘোষণা করেছেন: ‘আমি আমার গোঁফ ভালবাসি’ (আই লাভ মাই মুশট্যাচ)। এই ‘গোঁফওয়ালি’র নাম শায়জা। তিনি কেরলের কান্নুর জেলার বাসিন্দা। বিবিসি-র এক প্রতিবেদন অনুযায়ী, শায়জা তাঁর এই গোঁফের জন্য বাহবা এবং সমালোচনা—সম্মুখীন হয়েছেন দুইয়েরই। শুনে কি চমকে উঠলেন আপনি? আজকাল ফ্যাশনে সেই অর্থে ‘শুধুমাত্র ছেলেদের’ বা ‘শুধুমাত্র মেয়েদের’ বলে কিছু হয় না। ছেলেরাও ‘মেয়েদের মতো’ শাড়ি পরায় অভ্যস্ত (বড় চুল রাখা তো অনেকদিনের ট্রেন্ড)। একইভাবে মেয়েরাও ‘ছেলেদের মতো’ ছোট করে চুলে ছাঁট দেন। সেই সঙ্গে দাড়ি, গোঁফ রাখারও বেশ কিছু ছবি আজকাল ভেসে আসে সোশ্যাল মিডিয়ায়।
বিশেষত এলজিবিটিকিউআই সম্প্রদায়ভুক্ত মানুষের একাংশ ‘জেন্ডার ফ্লুয়ি়ডিটি’ বা ‘সেক্সুয়াল ফ্লুয়ি়ডিটি’ সম্পর্কিত বিবিধ পরীক্ষা-নিরীক্ষায় পোশাক বা বেশভূষার ক্ষেত্রে ‘He’ বা ‘She’-এর ভেদাভেদ তুলে দিতে সোচ্চার অনেকদিন ধরেই। তবে বিবিসি-র খবর অনুযায়ী, শায়জা একজন মহিলা—এলজিবিটিকিউআই সম্প্রদায়ভুক্ত কেউ নন। ‘কুছ তো লোগ কহেঙ্গে’, একথা জানেন শায়জা। তবু লোকে তাকে নিয়ে যতই মশকরা করুক না কেন, তাতে কিচ্ছুটি যায়-আসে না শায়েজার। বরং নিজের গোঁফ নিয়ে তিনি ভীষণ রকম Happy।
সব মেয়েরই ঠোঁটের উপরে অথবা আরও নিখুঁতভাবে বললে নাকের নীচে গোঁফের একটা কমবেশি রেখা থাকে। রূপচর্চার ভাষায় যাকে বলা হয় Upper Lips Hair। অধিকাংশ মহিলাই থ্রেডিং-এর পাশাপাশি এই Upper Lips Hair-ও তুলে দেন। কিন্তু শায়জা কোনওদিনই এই চুলকে মোটেই ‘বাড়তি’ হিসেবে দেখেননি। তাই এই চুল ‘রিমুভ’ করার কথাও ভাবেননি তিনি। গত পাঁচ বছর ধরে এই Upper Lips Hair সাফ না করারই ফলেই আজ শায়েজার গোঁফ স্পষ্ট—অর্থাৎ ‘হেয়ার’ ধীরে-ধীরে পরিণত হয়েছে গোঁফে। এরপরই তিনি ছেলেদের কায়দায় গোঁফ রাখার সিদ্ধান্ত নেন। অনেকেই শায়জাকে গোঁফ উড়িয়ে ফেলার পরামর্শ দিয়েছিলেন। কিন্তু তিনি কারও কথা শোনেননি। শায়েজার মনে হয়েছিল, গোঁফের জন্য তাঁর সৌন্দর্যে এতটুকুও ছেদ পড়বে না। ফেসবুকে তাঁর গোঁফওয়ালা ছবি দেখে অনেকেই তাঁর সঙ্গে দেখা করতে চেয়েছেন। এমনকী সোশ্যাল মিডিয়াতেও অনেকে তাঁকে জিগ্য়েস করেছেন: কেন তিনি গোঁফ রাখেন? সবাইকে তাঁর ছোট্ট ও অকপট উত্তর: ‘‘আমি গোঁফ ভালবাসি।’’
কিন্তু শায়জার এই তারিয়ে-তারিয়ে গোঁফ উপভোগ করার পিছনে রয়েছে এক তীব্র শারীরিক যন্ত্রণার গল্প। বিবিসির ওই প্রতিবেদন অনুযায়ী, বহু বছর ধরে একাধিক স্বাস্থ্য সমস্যায় ভুগছেন শায়জা। গত ১০ বছরে তাঁর মোট ছ’বার অস্ত্রোপচার হয়েছে। একবার ব্রেস্ট টিউমার হয়, আর একবার জরায়ু টিউমার। এসবের পর শেষ অস্ত্রোপচার ছিল হিস্টেরেক্টমি। শেষ অস্ত্রোপচারের পর শায়জা ঠিক করেন, আর কোনও অস্ত্রোপচার তিনি করাবেন না। কখওনই আর অপারেশন থিয়েটারে ঢুকবেন না তিনি। দীর্ঘদিন ধরে একাধিক শারীরিক অসুস্থতার মধ্যে দিয়ে যাচ্ছেন শায়েজা। অনেক কষ্টে ধীরে-ধীরে সুস্থ হয়ে উঠেছেন তিনি। এখন তাই শুধুই নিজেকে খুশি রাখতে চান শায়েজা। অনেকটা যেন ‘মাছ মিষ্টি অ্যান্ড মোর’-এর গানের কথাই এখন মন্ত্র তাঁর জীবনের: ‘নিজেকে ভালবাসো, তুমি এবার’। অথবা যেন ‘জব উই মেট’-এর গীত (করিনা)-এর ফেভারিট ডায়লগকেই ‘মন্ত্রা অফ লাইফ’ করে নিয়েছেন শায়েজা: ‘ম্যাঁয় অপনি ফেভারিট হুঁ’।
তবে কেরলের শায়েজাই প্রথম নন, তথ্য বলছে, দাঁড়ি-গোঁফ রেখে গিনেস বুক অফ ওয়ার্ল্ড রেকর্ডস-এ নাম তুলেছিলেন ভারতীয় বংশোদ্ভূত ইংল্যান্ডের বাসিন্দা হরনাম কৌর। যদিও তিনি বহুদিন ধরে নানা হরমোনের সমস্যায় ভুগছেন। বিশ্বের সবচেয়ে কম বয়সি মহিলা হরনাম, যাঁর পুরুষদের মতো দাঁড়ি-গোঁফ ছিল। শায়েজার মতো বেশ কিছু সাক্ষাৎকারে হরনামও বলেছেন, দাড়ি ভালবাসেন বলেই তিনি ছেলেদের মতো করে চুল-দাড়ি রেখেছেন। নিজেকে ভালবাসতে শিখেছেন। বর্তমানে মডেলিং দুনিয়ার প্রতিষ্ঠিত নাম হরনাম কৌর। শায়েজার গোঁফের শেষ দুই প্রান্তে রয়েছে মৃদু মোচড়ও। প্রকারান্তরে কি পুরুষতন্ত্রকেই আলতো মোচড়ে চ্যালেঞ্জ দিতে চাইছেন শায়েজা তাঁর নিজের ‘গোঁফে তা’ দিয়ে?