দেশজুড়েই মহাসমারোহে পালন করা হয় মকর সংক্রান্তি। গ্রাম বাংলার সব ঘরেই এদিন সকাল থেকে চলে পিঠে-পুলির আয়োজন। আঘ্রাণের শেষে নতুন ধান ওঠে গোলায়। সেই ধানের গুঁড়ি, নতুন গুড়, নারকেল সহযোগে তৈরি হয় রকমারি সব পিঠে। এদিন সকালে উঠে পুণ্যস্নানের পর নতুন পোশাকে রান্নাঘরে যান বাড়ির মেয়েরা। সেখানেই সারাদিন ধরে চলে নানা আয়োজন। এই মকর সংক্রান্তির সঙ্গে কিন্তু সরাসরি যোগ রয়েছে বাংলার কৃষিকাজের। তাই এদিন সকালে নতুন চাল, গুড়, দুধ, ফল দিয়ে তৈরি মকর প্রথমে নিবেদন করা হয় ভগবানকে। মনে করা হয় এতে প্রসন্ন হন লক্ষ্মী। তবে এদিন রকমারি পিঠে-পায়েসের পাশাপাশি কিন্তু খিচুড়ি খাওয়ার রীতি রয়েছে। তিল-গুড়, খিচুড়ি, দানাশস্য এদিন শুভ বলে ধরা হয়।
এদিন সূর্য মকর রাশিতে প্রবেশ করে। শীতের সমাপ্তি হয়। সূচনা হয় বসন্তের। মূলত জ্যোতিষশাস্ত্রে এটি একটি ‘ক্ষণ’। এই দিন সুর্যদেব তার নিজ কক্ষপথ থেকে মকর রাশিতে প্রবেশ করে। তাই এই দিনটিকে মকর সংক্রান্তি বলে।সংক্রান্তি একটি সংস্কৃত শব্দ। এর দ্বারা সূর্যের এক রাশি থেকে অন্য রাশিতে প্রবেশ বোঝায়। আবার নতুন করে কৃষিকাজের সূচনায় সূর্যদেবকে প্রসন্ন করতেই বিশেষ তাৎপর্যের সঙ্গে এই দিন পালন করা হয়।
খিচুড়ির সঙ্গে এই দিনের বিশেষ একটি যোগ রয়েছে। আমাদের দেশে সারা বছরই প্রচুর পরিমাণ ধান উৎপন্ন হয়। চাল আমাদের প্রধান খাদ্য। তাই এদিন চাল-ডাল আর শীতের সবজি সহযোগে বানানো হয় খিচুড়ি। এছাড়াও এদিন বিভিন্ন জায়গায় মানুষকে বিনামূল্যে খিচুড়ি খাওয়ানো হয়। আর্য়ুবেদ মতে এই সময় শরীর সুস্থ রাখতে স্বাস্থ্যকর খাওয়া দাওয়া প্রয়োজন। যে কারণে মুগ বা মুসুর ডাল আর সবজি সহযোগে খিচুড়ি খাওয়ার উপদেশ দেওয়া হত। সেই সঙ্গে তিল আর গুড়। প্রতিটি উপাদানই যেমন পুষ্টিতে ঠাসা তেমনই অ্যান্টি ব্যাকটেরিয়াল বৈশিষ্ট্যও রয়েছে। এই ঋতু পরিবর্তনের সময় সকলেই কম বেশি অসুস্থ হয়ে পড়েন। সর্দি-কাশির সমস্যা লেগেই থাকে ঘরে ঘরে। ফলে শরীরে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা গড়ে তোলা একান্ত জরুরি। যে কারণে এই সময় ডাল-সবজি এসব বেশি করে খাওয়ার কথা বলা হয়।
এছাড়াও কথিত আছে যে, খিলজি যখন আক্রমণ করত, তখন নাথ যোগীরা যুদ্ধের সময় খাবার তৈরির সময় পেত না এবং তাঁরা ক্ষুধার্ত অবস্থায় যুদ্ধে রওনা দিত। তখন বাবা গোরক্ষনাথ ডাল, ভাত ও সবজিকে একসঙ্গে রান্না করার পরামর্শ দিয়েছিলেন। এটা চটজলদি প্রস্তুত হয়ে যায় এবং এতে যোগীদের পেট ভরত। রইল চটজলদি খিচুড়ির রেসিপি
চাল, ডাল আগে থেকেই ভিজিয়ে রাখুন। হাফ কাপ মুসুরের ডাল আর হাফ কাপ মুগ ডাল নিন। পেঁয়াজ কুচিয়ে নিন। গাজর, বিনস, মটরশুঁটি, ফুলকপি, বাঁধাকপি, টমেটো, বিট সব কুচিয়ে রাখুন। প্রথমে কড়াইতে তেল দিয়ে সর্ষে ফোড়ন আর পেঁয়াজ, কাঁচা লঙ্কা দিয়ে নেড়ে নিন। এরপর সবজি দিন। জিরে গুঁড়ো, হলুদ, লঙ্কা গুঁড়ো, স্বাদমতো চিনি মিশিয়ে নিন। এবার চাল, ডাল দিন। ভাল করে কষে জল দিলেই তৈরি খিচুড়ি।
আরও পড়ুন: Recipe: পনির ও খোয়ার যুগলবন্দীতে তৈরি করুন উত্তরপ্রদেশের এই জনপ্রিয় চিকেনের পদ