পদবীর ইতিহাস: কুরেশিরা মুসলিম ছিলেন না! আসলে তাঁরা কারা?
Knowledge Story: জানা যায় কুরেশিদের ইতিহাস ইসলাম ধর্মের জন্মেরও আগেকার। সেই সময় মক্কার হৃৎপিণ্ড কাবায় ছিল কুরেশ জনজাতির বাস। তাঁরাই ওখানকার প্রাচীন বাসিন্দা। সেই সময়ে আরবের বাণিজ্যকেন্দ্র ছিল ওই মক্কা।

কুরেশি, এই পদবীটা শুনলেই আমাদের মাথায় ভেসে ওঠে কোনও মুসলমান ব্যক্তির কথা। সাধারণত এই পদবীর অধিকারীরা এই ধর্মের সঙ্গে যুক্ত। কিন্তু শুনলে অবাক হবেন এই কুরেশিরা কিন্তু আসলে মুসলিম নন। তাহলে কারা এঁরা? কুরেশি পদবী এল কী ভাবে? তাঁরা মুসলমান হলেন কী করে?
জানা যায় কুরেশিদের ইতিহাস ইসলাম ধর্মের জন্মেরও আগেকার। সেই সময় মক্কার হৃৎপিণ্ড কাবায় ছিল কুরেশ জনজাতির বাস। তাঁরাই ওখানকার প্রাচীন বাসিন্দা। সেই সময়ে আরবের বাণিজ্যকেন্দ্র ছিল ওই মক্কা।
আরব উপদ্বীপের শক্তিশালী বণিক সম্প্রদায় ছিল কুরেশরা। মক্কার নিয়ন্ত্রণ ছিল তাঁদের হাতেই। তীর্থযাত্রীদের মূল আকর্ষণ কাবা, সেখানকার পবিত্র পৌত্তলিক উপসনালয় এই সবের রক্ষক ছিলেন কুরেশরা। এক কথায় বললে কুরেশরাই ছিল মক্কার সর্বেসর্বা।
মনে করা হয় এই কুরেশ নামকরণ হয়েছিল সেখানকার গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিত্ব ফিহরের নামে এক নেতার নামে। ‘কুরাইশ’ শব্দের অর্থ হল যিনি সংগ্রহ করেন।
ইসলামের প্রবক্তা, প্রফেট নবী মহম্মদ ছিলেন এই কুরেশ জাতির বনু হাশিম বংশের সন্তান। এখানে একটা বলে রাখা ভাল, কুরেশরা কিন্তু একেশ্বরবাদ ছিল না। অর্থাৎ একাধিক ঈশ্বরের পুজো করতেন। এমনকি মূর্তি পুজোতেও বিশ্বাসী ছিলেন। এখানেই নবী মহম্মদের সঙ্গে বিরোধ বাধে কুরেশদের।
প্রফেট নবী মহম্মদ ইসলাম ধর্মের প্রচার শুরু করেন। মানুষকে একেশ্ববাদ এবং নিরাকার ‘আল্লাহ’র উপাসনা করার পরামর্শ দিতে থাকেন। যা কোনও ভাবেই গ্রহণযোগ্য ছিল না প্রাচীন কুরেশদের কাছে। নিজের জন্মভূমি মক্কা থেকে বের করে দেওয়া হয় প্রফেট মহম্মদকে।
নিজের অনুগামীদের নিয়ে মদিনায় চলে আসেন নবী মহম্মদ। তবে এখানেই ঝামেলার শেষ হয় না। মক্কায় বসে ইসলাম ধর্মের পালনকেও মেনে নেয়নি আরবীয় বহুশ্বরবাদী বিশ্বাসী কুরেশরা। এমনকি বনু আউস এবং বনু খাজরাজ মধ্যস্থতা করার চেষ্টা করলেও কোনও ফল হয়নি। দুই বিশ্বাসের মধ্যে সংঘাত চলতেই থাকে।
যার ফল গড়ায় সশস্ত্র যুদ্ধ অবধি। মহম্মদ এবং তাঁর অনুগামীরা আরবীয় কাফেলাতে অভিযান চালাতে থাকে। সময়ের সঙ্গে সেই সংঘাতের আগুন আরও বাড়তে থাকে। তা এতটাই সাঙ্ঘাতিক হয়ে ওঠে যে মক্কা থেকে বহিষ্কারের মাত্র ১০ বছরের মধ্যেই তিন তিনটি সাঙ্ঘাতিক যুদ্ধ হয় দুই ধর্মের বিশ্বাসীদের মধ্যে। যা বদর, উহুদ এবং খন্দক-এর যুদ্ধ নামে পরিচিত।
শেষে প্রফেট মহম্মদ শাসন কায়েম হয় মক্কায়। চলতে থাকে মক্কা বিজয় অভিযান। যা আরবিতে ফাতহু মক্কা নামেও পরিচিত। ফাতহু মক্কা অর্থাৎ ‘মক্কার মুক্তি’। বাস্তবে এটি ছিল মুসলিম কুরেশদের পরিচালিত এক সামরিক অভিযান। এই সময়ে মহম্মদের বাহুবলের কাছে হার মানে কুরেশরাও। শেষে খানিকটা বাধ্য হয়েই, যুদ্ধে হেরে নবী মহম্মদের কাছে আত্মসমর্পণ করেন প্রাচীন কুরেশরা। রাজনৈতিক পালা বদলের সঙ্গে সঙ্গে বেশিরভাগ কুরেশই মুসলিম ধর্ম গ্রহণ করে। সেদিনের কুরেশরাই আজকে কুরেশি নামে পরিচিত। তবে মুসলমান হলেও মক্কার ক্ষমতা রয়ে যায় কুরেশদের হাতেই। আজও মক্কাতেই রয়েছে সবচেয়ে বেশি মুসলিম কুরেশি।
তথ্যসূত্র: iqranetwork.com
