গত শনিবার সকালে শরীরচর্চা করার সময় আচমকাই বুকে এবং পিঠে ব্যথা অনুভব করেন সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায় (Sourav Ganguly)।দক্ষিণ কলকাতার একটি বেসরকারি হাসপাতালে ভর্তি করা হয় তাঁকে। সেখানে চিকিৎসকরা জানান, হৃদ্রোগে ((heart attack)আক্রান্ত হয়েছেন তিনি। ডাক্তারি পরীক্ষায় দেখা যায়, হৃৎপিণ্ডে রক্ত সরবরাহকারী তিনটি ধমনীতে ব্লকেজ রয়েছে সৌরভের। তবে গোল্ডেন আওয়ারের মধ্যে পৌঁছেছিলেন বলে দ্রুত চিকিৎসা সম্ভব হয়েছে। কী এই গোল্ডেন আওয়ার (golden hour)? সাধারণ মানুষ কীভাবে বুঝবেন হার্ট অ্যাটাক? প্রয়োজনীয় কী কী সতর্কতা নিতে হবে তা নিয়েই TV9 বাংলা ডিজিটালের জন্য কলম ধরলেন চিকিৎসক মৈনাক মুখোপাধ্যায় (ডিএম কার্ডিওলজিস্ট, মেদিনীপুর মেডিক্যাল কলেজ)
গোল্ডেন আওয়ারে চিকিৎসা
গোল্ডেন আওয়ারের নিয়মটা হচ্ছে যখন হার্ট অ্যাটাকটা হল, ব্লকটা ডেভলপ করল যত তাড়াতাড়ি সম্ভব পরীক্ষা করে সেটা খুলে দেওয়া যাবে যাতে রক্ত সঞ্চালন স্বাভাবিক হয় সেটাই হচ্ছে প্রাথমিক সময়টুকুর গুরুত্ব।
দু’রকম হাসপাতাল গোটা বিশ্বে আছে। এক, যেখানে প্রাইমারি অ্যাঞ্জিওপ্লাস্টি হয়। আর এক ধরনের হাসপাতাল যেখানে এই সুযোগ নেই। দেখা গেল রোগী সঙ্গে সঙ্গে চিকিৎসকের সঙ্গে যোগাযোগ করলেন, ইসিজি করে রোগটা নির্ণয় হল, এবার রোগীর কাছাকাছি যদি প্রাইমারি অ্যাঞ্জিওপ্লাস্টি করার পরিকাঠামো থাকে, তাহলে রোগী সবার আগে সেখানে যাবেন। যদি দেখা যায়, এই জিনিসটা ৬০ মিনিটের মধ্যে করা যাচ্ছে, তাহলে তার মধ্যে হার্টের রক্ত সংবাহন ঠিক করে দিতে হবে। দেখা গেল, রোগীর সেই সময়টা নেই। প্রাইমারি অ্যাঞ্জিওপ্লাস্টি হয়, এমন সিস্টেম নেই। তখন দুটো জিনিস দেখা হয়, রোগী কি প্রাথমিক দু’ঘণ্টার মধ্যে কোথাও গিয়ে অ্যাঞ্জিওপ্লাস্টি করাতে পারবে? যদি যেতে পারে তাকে তৎক্ষণাৎ সেখানে পাঠানো হবে। প্রাইমারি অ্যাঞ্জিওপ্লাস্টি করবে।
আরও পড়ুন, হার্ট অ্যাটাকের পরে ‘গোল্ডেন আওয়ার’ কেন গুরুত্বপূর্ণ?
আর সেটা সম্ভব না হলে, যেটা সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায়ের হয়েছিল, হার্ট অ্যাটাকের যে প্যাটার্ন তাতে ওই জায়গার ক্লটটা গলানোর কিছু বিশেষ রকমের ইনজেকশন রয়েছে। যত সময় যাবে ধমনীর মধ্যে রক্ত আর গলানো যাবে না, শক্ত হয়ে যাবে। তখন বাইরে থেকে ইনজেকশন দিয়ে রক্ত গলানো যায় না। সেটা সমস্যা। গোল্ডেন আওয়ার শুরুর দিকের এক ঘণ্টা। কোথায় গিয়ে রোগী পৌঁছচ্ছেন সেটার উপর বাকিটা নির্ভর করছে। রোগীর যদি দেরিতে অ্যাঞ্জিওপ্লাস্টি হয়, সেটা যদি উন্নত মানেরও হয়, তার যা দীর্ঘকালীন রেজাল্ট তার থেকে শুরুর দিকের মধ্যম মানের অ্যাঞ্জিওপ্লাস্টি হওয়া অনেক ভাল। কারণ রক্ত সংবাহন স্বাভাবিক করতে হবে। যাতে মাংসপেশী মরে যাওয়ার আগে রক্ত পেয়ে বেঁচে যায়।
এই ধরনের রোগীর ভবিষ্যতের লাইফস্টাইল
১) অল্প বয়সে হার্টের সমস্যা হলে সুগার বা ধূমপানের অভ্যেস না থাকলে রোগীর পারিবারিক ইতিহাস থাকার সম্ভবনা প্রবল। সেক্ষেত্রে জরুরি আগে থেকে রিস্ক ফ্যাক্টর আইডেনিফাই করে চিকিৎসা করা। কোলেস্টরলও দেখতে হবে। সেই অনুযায়ী চিকিৎসা শুরু হলে সম্ভবনা অনেক কমানো যায়। বেশির ভাগ ল্যাবে সাধারণ লিপিড প্রোফাইল করা হলে সব রিস্ক ফ্যাক্টার ধরা পড়ে না। পারিবারিক কোলেস্টরেল ইতিহাস থাকলে লিপোপ্রোটিন এ টেস্ট করা দরকার।
২) স্টেন্ট বসানো বা বাইপাস করা হয় মূলত রোগীর মৃত্যু আটকানোর জন্য। তার মানে ভবিষ্যতে তিনি কোনও কাজ করতে পারবেন না, এমন নয়। তিনি হেলদি লাইফস্টাইল লিড করবেন।
৩) রোগী ধূমপান করবেন না। নিয়মিত ওষুধ খাবেন। কাঁচা লবণ তুলনামূলক কম খাবে। নিয়মিত শরীরচর্চা করবেন। হাঁটা খুব গুরুত্বপূর্ণ। স্ট্রেস আধুনিক যুগের পার্ট অব লাইফ। সেটা ম্যানেজ করতে হবে। কারণ স্ট্রেস নিয়েই বাঁচতে হবে।
৪) আরও একটা বিষয়। সরষের তেল হার্টের জন্য ক্ষতিকারক এটা কোথাও আজ পর্যন্ত প্রমাণিত হয়নি। ফলে এই তেল খেতে পারেন।
৫) বেশিরভাগ ক্ষেত্রে বুকের ব্যথাটা গ্যাসের ব্যথা বলে ভুল করেন মানুষ। সামান্য অস্বস্তি হলেও চিকিৎসকের সঙ্গে যোগাযোগ করুন। সেটা লাইফ সেভিং হতে পারে।