হার্ট অ্যাটাকের পরে ‘গোল্ডেন আওয়ার’ কেন গুরুত্বপূর্ণ?
কী এই গোল্ডেন আওয়ার? সাধারণ মানুষ কীভাবে বুঝবেন হার্ট অ্যাটাক? প্রয়োজনীয় কী কী সতর্কতা নিতে হবে তা নিয়েই TV9 বাংলা ডিজিটালের জন্য কলম ধরলেন চিকিৎসক মৃণাল কান্তি দাস (ইমিডিয়েট পাস্ট প্রেসিডেন্ট অব কার্ডিওলজিক্যাল সোসাইটি অব ইন্ডিয়া)
গত শনিবার সকালে শরীরচর্চা করার সময় আচমকাই বুকে এবং পিঠে ব্যথা অনুভব করেন সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায় (Sourav Ganguly)। দক্ষিণ কলকাতার একটি বেসরকারি হাসপাতালে ভর্তি করা হয় তাঁকে। সেখানে চিকিৎসকরা জানান, হৃদ্রোগে আক্রান্ত (heart attack) হয়েছেন তিনি। ডাক্তারি পরীক্ষায় দেখা যায়, হৃৎপিণ্ডে রক্ত সরবরাহকারী তিনটি ধমনীতে ব্লকেজ রয়েছে সৌরভের। তবে গোল্ডেন আওয়ারের মধ্যে পৌঁছেছিলেন বলে দ্রুত চিকিৎসা সম্ভব হয়েছে। কী এই গোল্ডেন আওয়ার (golden hour)? সাধারণ মানুষ কীভাবে বুঝবেন হার্ট অ্যাটাক? প্রয়োজনীয় কী কী সতর্কতা নিতে হবে তা নিয়েই TV9 বাংলা ডিজিটালের জন্য কলম ধরলেন চিকিৎসক মৃণাল কান্তি দাস (ইমিডিয়েট পাস্ট প্রেসিডেন্ট অব কার্ডিওলজিক্যাল সোসাইটি অব ইন্ডিয়া)
গোল্ডেন আওয়ার কী?
গোল্ডেন আওয়ার বলতে আমরা যেটা বোঝাই মোস্ট অ্যাপ্রোপ্রিয়েট টাইম। কারণ এই সময় শুধু হার্ট অ্যাটাক নয়, যে কোনও রোগের চিকিৎসা করালেই উপকার পাওয়া যাবে। যে কোনও রোগেই সময় মতো আসতে হবে। প্রথম ৬০ থেকে ৯০ মিনিট পর্যন্ত গোল্ডেন আওয়ার।
আরও পড়ুন, হার্ট অ্যাটাকের পরে রোগীর লাইফস্টাইল কেমন হবে?
হার্ট অ্যাটাক কী?
হার্ট অ্যাটাক মানে হার্টের মাসাল্ অ্যাটাক করা। শরীরের প্রত্যেকটা অঙ্গ প্রত্যঙ্গে রক্তের নালি রয়েছে। সেগুলোকে আমরা বলি আর্টারি অর্থাৎ ধমনী। হার্টের ক্ষেত্রে করোনারি ধমনী। এগুলোতে যখন ব্লাড ক্লট হয়, এটা যত তাড়াতাড়ি ভাঙা যায়, তত তাড়াতাড়ি আর্টারি পরিষ্কার হবে। দেরি হলে আর্টারির ওয়ালে ক্লট সেঁটে যায়, সেগুলোকে ভাঙা যায় না। রোগী খুব তাড়াতাড়ি চিকিৎসকের কাছে গেলে ক্লট ব্লাস্টার ওযুধ দেওয়া যায়। আর তা না হলে অ্যাঞ্জিওপ্লাস্টি। যত তাড়াতাড়ি ক্লট ভাঙা যায়, তত তাড়াতাড়ি ধমনী পরিষ্কার হয়। তাতে হার্টের পেশীর ক্ষতি বন্ধ হয় বা কম হয়। তবে স্টেন্ট বসানোর পরে আবার হার্ট অ্যাটাকের সম্ভবনা থাকে। ঠিক যেমন ভূমিকম্পের পরে আফটার এফেক্ট থাকে। ক্লট একবার খুলে দেওয়ার পর আবার হতে পারে। তার জন্য কিছু ওযুধ থাকে।
রিস্ক ফ্যাক্টর অ্যানালিসিস
আমরা যদি আগের থেকেই ব্যবস্থা করি, যাতে ক্লট না হতে পারে তার জন্য রিস্ক ফ্যাক্টর ম্যানেজমেন্ট জরুরি। রোগীর প্রেশার, সুগার, পারিবারিক ইতিহাস, কোলেসটরল, ধূমপানের অভ্যেস, স্ট্রেস অ্যান্ড স্ট্রেন সেটা শারীরিক এবং মানসিক রয়েছে কিনা দেখতে হবে। সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায়ের যেমন জিম করতে গিয়ে সমস্যা হয়েছে। অর্থাৎ শারীরিক স্ট্রেস। সৌরভের ক্ষেত্রে যেটা হল সেটা সেকেন্ডারি প্রিভেনশন। গোল্ডেন আওয়ারের মধ্যে এসেছিল বলে হার্ট অ্যাটাক আটকে দেওয়া গেল। আমরা অর্থাৎ চিকিৎসকরা এখন প্রাইমারি প্রিভেনশনের উপর জোর দিচ্ছি। হার্ট অ্যাটাক হতেই দেব না। তার জন্য ছোট থেকেই সঠিক খাওয়াদাওয়া, শরীরচর্চা করতে হবে। জাপানিদের দেখবেন, ৮৫ বছর পর্যন্ত কোনও ড্যামেজ হয় না। সেক্ষেত্রে ভারতীয়দের ৫০-৬০ বছরের মধ্যে অ্যাটাক হয়। কারণ আমরা রিস্ক ফ্যাক্টর কন্ট্রোল করি না। ধূমপান করা চলবে না। মাছ, ফলমূল বেশি করে খেতে হবে। হাঁটাচলা করতে হবে। অত্যধিক মানসিক চাপ কমাতে হবে। এটাকে বলি প্রাইমারি প্রিভেনশন। বুকে ব্যথা বা চাপ অনুভব করলে তার সঙ্গে প্রবল ঘাম এবং ডুবে যাওয়ার অনুভব হলে প্রথমে হার্ট অ্যাটাক ধরে নিয়ে গোল্ডেন আওয়ারের মধ্যে হাসপাতালে পৌঁছতে হবে।