
আলোর উৎসব দীপাবলি মানেই ঘরকে নতুন করে সাজিয়ে তোলা। প্রদীপের স্নিগ্ধ আলো, ফুলের সুগন্ধ আর তার সঙ্গে থাকে রঙিন রঙ্গোলি। সবগুলোই উৎসবের মেজাজ তৈরি করে। প্রচলিত বিশ্বাস এই যে রঙ্গোলি বাড়িতে ইতিবাচক শক্তি আকর্ষণ করে এবং দেবী লক্ষ্মীকে স্বাগত জানায়। এ বছর দিওয়ালিতে যদি আপনি প্রথম বার রঙ্গোলি তৈরির পরিকল্পনা করছেন, তা হলে কয়েকটি বিষয় মনে রাখা দরকার। চলুন বিস্তারিত জেনে নেওয়া যাক।
প্রথম বার রঙ্গোলি তৈরির সময় কোন বিষয়গুলি আপনার কাজকে আরও সহজ করে তুলবে, তার একটি ধারনা নিম্নে আলোচনা করা হল।
রঙ্গোলি তৈরির জন্য সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ দিক হল স্থান নির্বাচন। যেমন- বাড়ির মূল প্রবেশদ্বার, পুজোর স্থান বা বারান্দাকে সাধারণত রঙ্গোলির জন্য নির্বাচন করা হয়। তবে যেখানে মানুষের হাঁটাচলা কম, এমন স্থান বাছা ভাল। যাতে আপনার তৈরি নকশাটি সহজে নষ্ট না হয়ে যায়। এ ছাড়া নজর রাখতে হবে মেঝে যেন মসৃণ এবং সমতল হয়। অসমতল বা ঢালু স্থানে রঙ ছড়িয়ে যেতে পারে। রঙ্গোলির সৌন্দর্য সন্ধ্যার পরেই বাড়ে। তাই এমন স্থান বেছে নিন যেখানে প্রদীপ বা কৃত্রিম আলোর ব্যবস্থা আছে।
প্রথমবার কাজ করার সময় সহজ এবং হাতের নাগালে থাকা উপকরণ ব্যবহার করাই বুদ্ধিমানের কাজ। গুঁড়ো রং (রঙ্গোলি পাউডার), চালের গুঁড়ো/ময়দা অথবা ফুলের পাপড়ি যে কোনও একটি উপকরণ ব্যবহার করতে পারেন। নতুনদের জন্য ফুলের রঙ্গোলি (গাঁদা, গোলাপ বা চন্দ্রমল্লিকার পাপড়ি দিয়ে তৈরি) সবচেয়ে সহজ। এতে কম নোংরা হয় এবং সুগন্ধ ছড়ায়। এ ছাড়া বাজারে এখন রঙ্গোলি স্টেনসিল পাওয়া যায়। তা না হলে ডিজাইন করার জন্য একটি ছোট মগ, বাটি, চুড়ি বা দেশলাই কাঠি (নকশা পরিষ্কার করতে) হাতের কাছে রাখতে পারেন। রঙ্গোলি বানাতে গিয়ে অল্প অল্প করে রং ব্যবহার করুন। বেশি রং একসঙ্গে ফেলে দিলে তা সামলানো কঠিন হয়ে যায়।
প্রথম বার কখনওই খুব জটিল নকশা বাছবেন না। সরল জ্যামিতিক নকশা করতে পারেন। নতুনদের জন্য বৃত্ত, বর্গক্ষেত্র বা সহজ পদ্মফুল, তারা বা স্বস্তিকার মতো জ্যামিতিক নকশাগুলি সেরা। প্রথমে চক বা সাদা পাউডার দিয়ে কয়েকটি বিন্দু (ডট) তৈরি করে নিন এবং পরে সেই বিন্দুগুলিকে রেখা দিয়ে যুক্ত করুন। এতে নকশা নিখুঁত হবে। সর্বদা রঙ্গোলির মাঝখান থেকে কাজ শুরু করুন এবং ধীরে ধীরে বাইরের দিকে নকশা তৈরি করে যান। এতে পরিধি ঠিক রাখা সহজ হবে।
সঠিকভাবে রং ছড়ানোই রঙ্গোলি তৈরির মূল কৌশল। রঙ ছড়ানোর জন্য কাগজকে ছোট কোণের মতো করে ভাঁজ করে তাতে পাউডার ভরে নিন। কোণের মুখের অংশটি সামান্য কেটে নিন। আঙ্গুলের আলতো চাপে পাউডার সমানভাবে ছড়িয়ে যাবে। দ্রুত বা জোরে রং না ছড়িয়ে ধীরে ধীরে এবং কাছাকাছি রঙ ফেলুন। আঙ্গুল দিয়ে হালকা করে চেপে বসিয়ে দিন। তাতে বাতাসের ধাক্কায় সহজে উড়ে যাবে না। নকশার প্রান্তগুলি পরিষ্কার করার জন্য বা সরু রেখা টানার জন্য একটি টুথপিক বা কটন বাড ব্যবহার করতে পারেন।
রঙ্গোলি তৈরির পর তার চারপাশ সাজাতে পারেন। রঙ্গোলির কেন্দ্রে বা বাইরের অংশে প্রদীপ বা ছোট মোমবাতি বসাতে পারেন। প্রদীপের আলোয় রঙ্গোলির রং আরও উজ্জ্বল হয়ে ওঠে। ছোট ছোট পাতা, পুঁতি বা গ্লিটার ব্যবহার করে আপনার প্রথম রঙ্গোলিটিকে আরও আকর্ষণীয় করে তুলতে পারেন।
ভুল হওয়াটা স্বাভাবিক। প্রথম বার কাজ করলে সামান্য এদিক ওদিক হতেই পারে। এর ফলে ঘাবড়ে যাবেন না। যদি কোনও অংশে রঙ অতিরিক্ত পড়ে যায় বা নকশা বেঁকে যায়, তা হলে ঘাবড়াবেন না। একটি স্প্রে বোতলে জল নিয়ে ভুল অংশে স্প্রে করে সেই জায়গাটা মুছে ফেলতে পারেন এবং আবার শুরু করতে পারেন। ছোট ভুলগুলি আঙ্গুল বা চামচের উল্টোদিক দিয়ে সহজেই ঠিক করা যায়।
প্রথমবার রঙ্গোলি তৈরির অভিজ্ঞতা নিঃসন্দেহে উত্তেজনাপূর্ণ হয়। এই বছর দিওয়ালিতে আপনি যে রঙ্গোলি তৈরি করবেন, তা হয়তো কোনও পেশাদার শিল্পীর মতো নিখুঁত হবে না, কিন্তু তাতে আপনার পরিবারের প্রতি ভালবাসা এবং উৎসবের আনন্দ মিশে থাকবে। মনে রাখা ভাল, রঙ্গোলির উদ্দেশ্য নিখুঁত শৈল্পিকতা নয়, বরং আনন্দ, স্বাগত এবং শুভ বার্তা ছড়িয়ে দেওয়া। তাই আত্মবিশ্বাসের সঙ্গে রঙ্গোলি বানানো শুরু করুন।