দীপাবলি 2025
মন্ত্র
॥ॐ শ্রী মহালক্ষ্ম্যাই বিদ্মহে বিষ্ণু পত্ন্যাই ধীমহি তন্নো লক্ষ্মী প্রচোদয় ॐ॥
অর্থ: "ওম, আমরা দেবী মহালক্ষ্মীর ধ্যান করি। আমরা ভগবান বিষ্ণুর পত্নী লক্ষ্মীর ধ্যান করি। মা লক্ষ্মী আমাদের প্রেরণা দেয় ও মনকে আলোকিত করে, ওম।" এই মন্ত্রটি দেবী লক্ষ্মীর আশীর্বাদ, অনুপ্রেরণার জন্য ও যাতে মা লক্ষ্মীর আমাদের পথ দেখান সেই কারণেই জপ করা হয়। এই মন্ত্র তাঁর সম্পদ, সমৃদ্ধি ও ঐশ্বরিক করুণার মতো বিষয় পাওয়ার জন্যও পাঠ করা হয়।
প্রবন্ধ
খবর
দীপাবলি ও লক্ষ্মী-গণেশ পুজো
সনাতন ধর্মের দুটি উৎসবের মধ্যে অন্যতম হল দীপাবলি। আর এই উৎসবের বিশেষ তাৎপর্য রয়েছে। দীপাবলীতে শুধুমাত্র মা লক্ষ্মীর পুজো করা হয়, এমন নয়। এই উৎসবে কুবের ও স্বাস্থ্যের দেবতা ধন্বন্তরির পুজো করা হয়। অকাল মৃত্যু থেকে রক্ষা পাওয়ার জন্য এই সময় যমের পুজোও করা হয়। এবার আপনি প্রশ্ন করতে পারেন যে দীপাবলি প্রথম কবে, কেন উদযাপিত হয়েছিল ও তার শাস্ত্রীয় প্রমাণ কী? এই প্রশ্নের সঠিক কোনও উত্তর না থাকলেও স্কন্দ পুরাণ ও পদ্ম পুরাণে দীপাবলির একাধিক উল্লেখ রয়েছে। শ্রীমদ্ভগবত গীতা ও মনুস্মৃতিতেও দীপাবলি নিয়ে বেশ প্রমাণ পাওয়া যায়। তবে এই সব গ্রন্থগুলোয় দীপাবলির তাৎপর্য, তা উদযাপনের পদ্ধতি ও দীপাবলি থেকে কী কী উপকার সয়, সেই সম্পর্কে লেখা রয়েছে।
কিন্তু ইতিহাসের কতটা গভীরে রয়েছে দীপাবলির শিকড়?
দীপাবলি উদযাপনের সবচেয়ে পুরাতন উল্লেখ পাওয়া যায় বাল্মিকি রামায়ণে। এখানে মহর্ষি বাল্মীকি লিখছেন লঙ্কা জয়ের পর কার্তিক মাসের অমাবস্যা তিথিতে রামচন্দ্র অযোধ্যায় ফিরছিলেন। অযোধ্যা পৌঁছানোর আগে ভাই ভরতের কাছে রামের ফিরে আসার খবর নিয়ে যান হনুমান। এই খবর পেয়েই গোটা অযোধ্যা শহরকে আলোয় সাজিয়ে তোলার কথা বলেন ভরত। রামচন্দ্রের আগমনের খবরে অযোধ্যাবাসী এতই খুশি হয়েছিলেন যে ভরত যতটা বলেছিলেন, তার চেয়েও বেশি করে তাঁরা সাজিয়ে ফেলেছিলেন তাঁদের প্রাণের অযোধ্যাকে।
দীপাবলির দিন মা লক্ষ্মী ও ধন্বন্তরি সমুদে থেকে আবির্ভূত হয়েছিলেন
বাল্মীকি রামায়ণের কাহিনী অনুযায়ী মানুষ শুধু ঘর নয়, উঠোনও আলোকিত করে তুলেছিল। একই ভাবে স্কন্দ পুরাণ ও শিব পুরাণে সমুদ্র মন্থনের কথা উল্লেখ রয়েছে। এই দুই পুরাণ অনুযায়ী সমুদ্র মন্থনের ফলে সমুদ্রের নীচে থেকে অনেক রত্ন উঠে এসেছিল। আর সব শেষে হাতে অমৃতের পাত্র নিয়ে আবির্ভূত হন ভগবান ধন্বন্তরী। তাঁকে স্বাস্থ্যের দেবতা হিসাবে মানা হয়। মা লক্ষ্মীও আবির্ভূত হন। সমুদ্র মন্থনের ফলে উঠে আসা রত্ন অর্থাৎ, মা লক্ষ্মীকে পাওয়ার জন্য দেবতা ও অসুরদের মধ্যে যুদ্ধ শুরু হয়। কিন্তু মা লক্ষ্মী সেই সময় নারায়ণকে বেছে নিয়েছিলেন। আর সেই কারণেই দীপাবলির সগের দিন ধন্বন্তরীর পুজো করা হয় ও তারপর দেবী লক্ষ্মীর পুজোর করা হয়।
দীপালির দিনই রাজা বলীকে সুতল লোক দেওয়া হয়েছিল
ভবিষ্য পুরাণে বলা হয়েছে রাজা বলীর ভক্তি ও বিশ্বাসে মুগ্ধ হয়ে ভগবান নারায়ণ তাঁকে সুতল লোক দিয়েছিলেন। হিন্দু ধর্ম অনুযায়ী সুতল লোক হল পাতাল লোকের একটি অংশ। যা অতল ও বিতল নামের দুটো লোকের নীচে অবস্থিত। তাঁরই আদেশে রাজা বলী সুতল লোকে গিয়েছিলেন ও সেখানে আলোর উৎসবের উদযাপন করেছিলেন। স্কন্দ পুরাণ, পদ্ম পুরাণ এবং ভবিষ্য পুরাণে আলোর উৎসবের অংশ হিসেবে বিভিন্ন ধরনের প্রদীপ জ্বালানোর কথা উল্লেখ করা রয়েছে। স্কন্দ পুরাণের বৈষ্ণব খণ্ডে কার্তিক মাসের মাহাত্ম্যের অধীনে লেখা রয়েছে দীপোৎসবের কথা। একই ভাবে ভবিষ্য পুরাণের উত্তরপর্বের ১৪০তম অধ্যায় ও পদ্ম পুরাণের উত্তরখণ্ডের ১২২তম অধ্যায়ে রয়েছে দীপোৎসবের সম্পূর্ণ বিবরণ। বলা হয়ে যে এই উৎসব সর্বজনীন কল্যাণ নিয়ে আসে।
দীপাবলীর আরও এক উদ্দেশ্য রয়েছে
আমাদের দেশ ভারতবর্ষ আসলে একটি কৃষিপ্রধান দেশ। এখানের প্রতিটা উৎসব জড়িয়ে রয়েছে কৃষিকাজের সঙ্গে। দীপাবলীর সময় সাধারণত কৃষকদের বাড়ি ভরে থাকে খরিফ শস্যে। ফলে, গোলা ভরা আনাজ থাকায় কৃষকরাও বেশ আনন্দে থাকে। একই সঙ্গে চলে নতুন ফসল বোনার পরিকল্পনাও। আর সেই কারণেই এই সময় মানুষ এই আনন্দের উৎসব উদযাপন করে। আবার দীপাবলির আরও একটি বাস্তব দিক হল বর্ষাকাল শেষ হওয়ার পর মশা ও পোকামাকড় বৃদ্ধি পায়। আর মানুষ প্রদীপ দিয়ে ঘর সাজালে সেই সব পোকামাকড় সেই আলোর প্রতি আকৃষ্ট হয় ও আগুনে পুড়ে মারা যায়।
দীপাবলী সম্পর্কিত প্রশ্নাবলী (FAQ)
- ২০২৫ সালের দীপাবলি কবে?
২০২৫ সালের ২০ অক্টোবর বিকাল ৩টে বেজে ৫২ মিনিট থেকে শুরু হবে অমাবস্যা তিথি। আর সেই কারণেই ওই দিনই উদযাপিত হবে দীপাবলি। ২১ অক্টোবল বিকাল ৫টা ৫৪ মিলিয়ে শেষ হয়ে যাবে এই তিথি।
- Laxmi Puja Muhurat 2025: লক্ষ্মী পুজো শুরুর শুভ মুহূর্ত কোনটি?
২০ অক্টোবর বিকাল ৫টা ৪৬ মিকিট থেকে রাত ৮টা ১৮ মিনিট পর্যন্ত চলবে প্রদোষ কাল। শাস্ত্র বলে, এই সময়টাই মা লক্ষ্মীর পুজোর জন্য বিশেষ উপযোগী। এই সময় পুজো করলে মা লক্ষ্মীর আশীর্বাদ পাওয়া যায়। মা লক্ষ্মী ও গণেশের পুজোর শুভ সময় হল সন্ধ্যা ৭টা ৮ মিনিট থেকে রাত ৮টা ১৮ মিনিট পর্যন্ত।
- Laxmi Puja Bhog: দীপাবলিতে মা লক্ষ্মীর জন্য কী কী নৈবেদ্য নিবেদন করা উচিত?
নৈবেদ্য হিসাবে চালের পায়েস, বাতাসা বা মিষ্টি ও লাড্ডু নিবেদন করা যেতে পারে।
- দীপাবলিকে আলোর উৎসব কেন বলা হয়?
অন্ধকার থেকে আলোয় রূপান্তরের প্রতীক হল দীপাবলি। আর সেই কারণেই একে আলোর উৎসব বলা হয়। এই উৎসব রাবণের উপর রামের বিজয়, খারাপের উপর ভালর বিজয় ও জ্ঞানের মাধ্যমে অন্ধকার থেকে আলোকবৃত্তে আসার প্রতীক। দীপাবলীতে ঘরবাড়ি ও আশেপাশের পরিবেশকে পবিত্র করতেই প্রদীপ জ্বালানো হয়। অন্ধকার দূর করে সুখ, সমৃদ্ধিকে নিয়ে আসার জন্যই আলো জ্বালানো হয় এই সময়। এই উৎসব জীবনে নতুন আনন্দ, উৎসাহ ও আশা নিয়ে আসে।
- দীপাবলীতে লক্ষ্মীপুজোর তাৎপর্য কী?
মা লক্ষ্মী হলেন ধন, সমৃদ্ধি এবং ঐশ্বর্যের দেবী। মনে করা হয়, তাঁর পূজা করলে ঘরে অর্থ ও সমৃদ্ধি আসে। হিন্দুধর্মে বিশ্বাস করা হয় যে দীপাবলির সময় দেবী লক্ষ্মী তাঁর ভক্তদের বাড়িতে আসেন। দেবী লক্ষ্মীকে আরাধনা করার জন্য মানুষ ভক্তিপূর্ণভাবে তাদের ঘর পরিষ্কার করে ও আলোকমালায় সাজিয়ে তোলে।