বাঁশের (Bamboo) তৈরি যে কোনও জিনিস আপনি সহজেই পেয়ে যাবেন হস্তশিল্পের মেলায়। কিন্তু যদি বাঁশের তৈরি গ্রামের মধ্যে কয়েকটা দিন নিরিবিলিতে কাটাতে চান, তাহলে আপনাকে যেতে হবে ত্রিপুরায় (Tripura)। ত্রিপুরায় তৈরি হল ভারতের প্রথম বাঁশের উদ্যান (Park)। রাজ্যের ইকো-ট্যুরিজমকে (Eco-Tourism) আরও উন্নত করতে এবং উত্তর-পূর্ব অঞ্চলের শিল্পে উন্নতি ঘটাতে ‘বাঁশ গ্রাম’ তৈরি করা হল ত্রিপুরায়।
টাইমস অফ ইন্ডিয়ার একটি প্রতিবেদন থেকে জানা গিয়েছে, যাঁরা যোগাসন করতে ভালবাসেন, যাঁরা প্রকৃতিপ্রেমী সেই ধরনের পর্যটকদের দৃষ্টি আকর্ষণ করতে এই বাঁশ গ্রাম তৈরি করা হয়েছে। এবং আশা করা হচ্ছে যে এতে লাভবান হবে ত্রিপুরার পর্যটন শিল্প। এরই সঙ্গে ভারত পেয়ে গেল তার প্রথম বাঁশের তৈরি উদ্যান।
ভারত ও বাংলাদেশ সীমান্তের ঠিক পাশে পশ্চিম ত্রিপুরার কাতলামারায় তৈরি করা হয়েছে এই বাঁশের তৈরি উদ্যানটি। প্রায় ৯ একর জমির ওপর তৈরি হয়েছে এই বাঁশের উদ্যানটি। বাম্বু আর্কিটেক ও বিশেষজ্ঞ মান্না রায়ের নেতৃত্বে তৈরি করা হয়েছে এই বাঁশ গ্রাম। জানা গিয়েছে, ইতিমধ্যেই দেশ জুড়ে বহু পরিবেশবিদ ও প্রচুর পর্যটকদের সাড়া পাওয়া গেছে। তার মধ্যে রয়েছে বিদেশি পর্যটকও।
সর্বশেষ রিপোর্ট অনুযায়ী জানা গিয়েছে এই বাঁশ গ্রামের মধ্যে রয়েছে একটি যোগাসন কেন্দ্র, খেলার মাঠ, বেশ কয়েকটি পুকুর, বাঁশের তৈরি সেতু, বাঁশের তৈরি কটেজ ইত্যাদি। যেহেতু এই উদ্যানের উদ্দেশ্য পরিবেশের সঙ্গে মানুষের যোগসূত্র স্থাপন করা, তাই এই সমগ্র উদ্যানটি সবুজে ঘেরা। রয়েছে প্রচুর পশু-পাখিও। বিভিন্ন পরিবেশ-বান্ধব উপযোগিতা এবং সুবিধাও রয়েছে এখানে। এই ক্ষেত্রে জেনে রাখা ভাল যে, ত্রিপুরার বাঁশ বেতের কারুকার্য নজরকাড়া। এই রাজ্যে বর্তমানে ২১ প্রজাতির বাঁশ পাওয়া যায়।
এই উদ্যানে বেড়াতে এলে আপনি দেখতে পারেন ১৪টিরও বেশি প্রজাতির বাঁশ। এছাড়াও এখানে রয়েছে বিভিন্ন ধরনের ভেষজ উদ্ভিদ ও ফুলের গাছ, যা আয়ুর্বেদিক শাস্ত্রে বিশেষ ভাবে ব্যবহার করা হয়। এখানেই শেষ নয়, টাইমস অফ ইন্ডিয়াকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে মান্না রায় জানিয়েছেন, এই বাঁশ গ্রামে দ্রুত তৈরি হতে চলেছে একটি জাদুঘরও। আধুনিকতার যুগে ধীরে ধীরে বিলুপ্তের ধরে বাঁশের তৈরি বিভিন্ন জিনিস। একটা সময় ভারতের বিভিন্ন গ্রামে বাঁশের তৈরি বাসন থেকে আসবাবপত্র ব্যবহার করা হত, এখন সেগুলো বিপন্নের পথে। এই ধরনের বাঁশের তৈরি সমস্ত ধরণের অপ্রচলিত, বিপন্ন, পুরানো এবং নতুন জিনিস প্রদর্শিত হবে বাঁশ গ্রামের জাদুঘরে।
কিন্তু এই বাঁশ গ্রাম তৈরি মূল উদ্দেশ্যটা কি শুধুই পর্যটন শিল্পকে ত্বরান্বিত করা? এই বিষয়ে মান্না রায় জানান যে, বাঁশ গ্রাম তৈরির পিছনে মূল ধারণা হল প্রকৃতির কোনও রকম ক্ষতি না করে স্থানীয় এবং গ্রামীণ সম্পদগুলি সঠিক এবং কার্যকরভাবে ব্যবহার করা। লক্ষ্য হল স্থানীয়ভাবে উপলব্ধ সম্পদকে ব্যবহার করে বাঁশ গ্রামকে একটি বিশ্বমানের মেডিকেল-কাম-ইকো পর্যটন কেন্দ্রে পরিণত করা। এই কারণে তিনি এখনও পর্যন্ত এই উদ্যানের উন্নয়নে ৬০ লক্ষ টাকা বিনিয়োগ করেছেন এবং সরকার বা কোনও ব্যাঙ্কের কাছ থেকে কোনও টাকা নেননি।
আরও পড়ুন: এক সময় ধনকর ছিল স্পিতি ভ্যালির ‘রাজধানী’! এখন কেমন আছে সেই গ্রাম?