
কোনও কিছুই মেয়েদের জন্য অসম্ভব নয়। দুবারের গিনেস ওয়ার্ল্জ রেকর্ডধারী সুফিয়া খান সম্প্রতি হিমালয়ান আল্ট্রা রান অভিযান সম্পন্ন করেছেন। মানালি থেকে লেহ পর্যন্ত শুধুমাত্র দৌড়েই বিশ্বের প্রথম দৌড়বিদ হিসেবে রেকর্ড গড়েছেন তিনি। গত ১ অক্টোবর, মানালি থেকে লেহ পপ্যন্ত ৪৮০ কিমি দৌড়ে প্রথম মহিলা রানার হয়ে ফের একবার গিনেস বুক অফ ওয়ার্ল্ড রেকর্ডের তালিকায় নাম লেখালেন সুফিয়া।
হিমালয়ান আল্ট্রা রান অভিযানটি প্রায় ১৫৬ঘণ্টার মধ্যে সম্পন্ন করেছেন। বিশ্বের অন্যতম চ্যালেঞ্জিং ও সর্বোচ্চ হাইওয়ের মধ্যে দিয়ে অতিক্রম করেছেন তিনি। চরম আবহাওয়ার সঙ্গে লড়াই করে পাঁচটি প্রধান পাস অতিক্রম করেছেন তিনি। দৌড়ের পথে তাপমাত্রা কখনও মাইনা, পাঁচ ডিগ্রি পর্যন্ত নেমে গিয়েছিল বলে জানা গিয়েছে।
বিশ্বরেকর্ড করা এই প্রথম নয় সুফিয়ার। এটি তার তৃতীয় ম্যারাথন রেকর্ড ব্রেকিং রান। এর আগে কন্যাকুমারী থেকে কাশ্মীর পর্যন্ত দৌড়েছিলেন তিনি। এছাড়া দিল্লি-চেন্নাই-কলকাতা-মুম্বই এই চারটি প্রধান মেট্রোকে সংযুক্ত করে একটি নেটওয়ার্কের মতো রাস্তা তৈরি করে দৌড় দিয়েছিলেন সুফিয়া। তাঁর কথায়, ”এই ম্যারাথন দৌড়ের শেষে অবিশ্বাস্য লেগেছিল। কারণ বিশ্বের সবচেয়ে রুক্ষ ভূখণ্ডগুলির মধ্যে এটি অন্যতম কঠিনতম যাত্রা। তিনি জানিয়েছেন, এই কঠিন যাত্রাপথটি শেষ করতে পেরে নিজেই অবাক হয়ে গিয়েছিলাম। প্রশিক্ষণ পর্বের সময় আমি এটা আদৌও করতে পারব কিনা সংশ. ছিল। তবে যা ভেবেছিলাম, তার থেকেও যাত্রার পথ ছিল বেশ কঠিন।”
প্রশিক্ষণ কেমন নিয়েছিলেন
মাত্র ২০ দিনের একটি অনুশীলনের মাধ্যমে পাহাড়ের বিভিন্ন অংশে দৌড়ে প্রশিক্ষণ নিয়েছিলেন। এছাড়া টপোগ্রাফি বোঝার চেষ্টা করা, কতটা উচ্চটায় উঠে বিশেষ করে অক্সিজেনের মাত্রা হ্রাসের সঙ্গে খাপ খাওয়া যায়, তার একটি টানা প্রশিক্ষন নিতে হয়েছিল তাঁকে। ভারতীয় সেনা কর্মকর্তা ও স্থানীয়দের সঙ্গে কথা বলে আবহাওয়া ও পরিস্থিতি বোঝার চেষ্টা করেছিলেন। আর তখনই বুঝতে পেরেছিলেন এই রুটটি কতটা চ্যালেঞ্জিং।
কঠিন প্রস্তুতি নেওয়া সত্ত্বেও পরিকল্পনা অনুযায়ী সবকিছু ঠিকঠাকও হয়নি। প্রথম ধাপে রোটাং পাসেই ছিল বিরাট চ্যালেঞ্জ। তুষারপাত ও পাহাড়ি রাস্তার ধুলো-নুড়ির মধ্যে দিয়ে হেঁটে যেতে হয়েছিল। এমনকি একসময় তার অক্সিজেন স্যাচুরেশন লেভেল ৫৬-এ নেমে এলে অজ্ঞান হয়ে যান সুফিয়া। তারপর তাঁর দল তাঁকে উদ্ধার করে চিকিত্সা শুরু করে ও টানা তিন-চার ঘণ্টা ঘুমানোপ পর ফের অভিযান শেষ করার লক্ষ্যে সারা রাত দৌড়েছিলেন।
তাঁর কথায়, ”আমি পাহাড়ের রঙ বদলাতে দেখেছি। মুখে-হাতে তুষারপাত অনুভব করেছি, প্রতি কিমি পর পর প্রকৃতির অজানা পরিবর্তন দেখেছি নিজের চোখে। হিমালয়ের প্রকৃতির বিষ্ময়ে এখনও তিনি অভিভূত।”
প্রসঙ্গত, ২০১৭ সালে এয়ালাইন ইন্ডাস্ট্রিকে ১০ বছর কঠিন নাইট শিফটে কাজ করার পর তিনি ফিটনেসের জন্য দৌড় শুরু করেছিলেন। এরপর ম্যারাথন, আল্ট্রা ম্যারাথন দৌড় শুরু করেন। তবে এখানেই থেমে থাকেননি তিনি। আরও দৌড়ের জন্য খিদে বেড়ে যায়। তাই মানসিক ও শারীরিক শক্তি বৃদ্ধির জন্য যোগব্যায়াম ও প্রাণায়াম শুরু করেন। ২০২৪ সালে সুফিয়া বাসুধৈব কুটুম্বকম (বিশ্ব একটি পরিবার)-এর বার্তা সারা বিশ্বের কাছে ছড়িয়ে দিতে বদ্ধপরিকর। তার আগে আরও মাইলের পর মাইল অনেক দৌড় করার স্বপ্ন পূরণ করা বাকি!
আরও পড়ুন: Travel: বরফে ঢাকা পড়ল উত্তর ভারতের হিমালয়ের রাজ্যগুলি! একসঙ্গে বন্ধ করা হল বিভিন্ন পর্যটন কেন্দ্র
আরও পড়ুন: Lakshadweep: করোনার জেরে হানিমুনে যাননি এখনও! একসঙ্গে সময় কাটাতে ঘুরে আসুন লাক্ষাদ্বীপে