নৈনিতাল থেকে বেরিয়ে গাড়ি ছুটছে দ্রুত গতিতে। চারিদিকে শুধুই পাইন আর দেবদারুর মেলা। তারই মাঝে মাঝে উঁকি দিচ্ছে হিমালয়ের চূড়া। তারপর হঠাৎ যে কখন নদী পিছু নিয়েছে, বোঝা যায়নি। আর এই লুকোচুরিতেই আপনি পৌঁছে যাবেন রানির দেশে, অর্থাৎ রানিখেতে।
নৈনিতাল থেকে মাত্র ৬০ কিলোমিটার দূরত্বে অবস্থিত রানিখেত। সবুজে মোড়া ছোট্ট জনপদ। যদিও এই সুবজের টানেই ছুটে আসে ভ্রমণ পিপাসুরা। যদি রানিখেতের সৌন্দর্য বর্ণনা করতেই হয়, তবে একটু পিছনে ফিরে তাকানো ভাল। রানিখেত একটি ক্যান্টনমেন্ট টাউন। যতদূর জানা যায়, ব্রিটিশ সাম্রাজ্যে সিমলাকে শীতকালীন রাজধানীর তকমা দেওয়ার আগে রানিখেতের কথাও বিবেচনা করা হয়েছিল। যদিও অনেকের ধারণা, কোনও রানির এই সবুজে ঘেরা জায়গাটি ভাল লেগে যায়, তাই তাঁর সম্মানে জায়গার নাম হয় রানিখেত।
যদি অ্যাডভেঞ্চারের খোঁজে থাকেন, তাহলে রানিখেতে একটা রাত না থাকলেও চলে যায়। তবে আপনি যদি একান্তে ছুটি কাটাতে চান, তাহলে আপনাকে নিরাশ করবে না রানিখেত। এখানে থাকার জন্য হোটেল ও হোমস্টে দুই-ই রয়েছে। একধারে গল্ফ গার্ডেন আর একধারে পাইনের বন, আর তারই মাঝে রয়েছে ফুলের মেলা। যতদূর চোখ যায়, দেখা মেলে সবুজ ঘন তৃণভূমির, যা গিয়ে মিশেছে নীল দিগন্তে। যদি আকাশ পরিষ্কার থাকে, এরই মাঝে ধরা দেয় পঞ্চচুল্লি। দেবতার ভূমি উত্তরাখণ্ড- কিন্তু রূপের রানি এই শৈলশহর।
তবে এই দেবতার সব রূপ যদি একসঙ্গে দেখতে চান, তাহলে ভরসা আলমোড়া। রানিখেত থেকে দেড় ঘণ্টার পর আলমোড়া। নিরিবিলি, শান্ত- কোনও শব্দই আলমোড়ার সঙ্গে খাপ খায়নি। এটি পাহাড়ের ওপর গড়ে ওঠা রীতিমতো একটি ‘শহর’, যেখান থেকে এক সঙ্গে দেখা যায় নন্দাদেবী, পঞ্চচুল্লি, নন্দকোট, চৌখাম্বার শৃঙ্গ।
আলমোড়ার সঙ্গে নিবিড় যোগ রয়েছে বাঙালি জাতির। এই আলমোড়াতে বসেই কবিগুরু লিখেছিলেন, ‘এই মাটিতে রইল তাহার বিস্মিত প্রণাম’। এখানে এসেছিলেন স্বামী বিবেকানন্দও। পাহাড়ের গায়েই রয়েছে রামকৃষ্ণ মিশন। তবে পাহাড়ি সরলতার মাঝেও বেশ ঘিঞ্জি এই আলমোড়া।
অ্যাডভেঞ্চার হোক বা অ্যাধাত্মিক ট্যুর- সব দিক দিয়েই ফিট আলমোড়া। আলমোড়া শহর থেকে বেড়িয়ে দেড় ঘণ্টার দূরত্বে রয়েছে জাগেশ্বর ধাম। ২৫০০ বছরের পুরনো শিব মন্দির। যদিও এখানে মন্দিরের সংখ্যা ছোট-বড় মিলিয়ে ১২৪টি। স্থাপত্যের দিক দিয়ে বহু গল্প জড়িয়ে রয়েছে এই মন্দিরগুলির সঙ্গে। আর যদি এই জায়গার প্রাকৃতিক দৃশ্য বর্ণনা করা হয়, তাহলে শব্দ কম পড়বে। পাইন বনের মধ্যে, এক নদীর তীরে অবস্থিত জাগেশ্বর ধাম। একটা দিন অনায়াসে কেটে যেতে পারে জাগেশ্বরে।
সূর্য ওঠার সঙ্গে সঙ্গেই ব্যস্ততা দেখে দেয় আলমোড়া শহরে। বেলা বাড়ার সঙ্গে ছাদে রোদ পোহানোর আসর বসে বাড়িতে-বাড়িতে। আর কখন যে হিমালয়ের শীত জাপটে ধরে, বোঝা যায়। তবে এই শৈল শহরের সূর্যাস্ত আপনার মনে দাগ কাটতে বাধ্য। সূর্য কখন যে পঞ্চচুল্লির পিছনে বিদায় নেবে, চোখের পলকে তা ধরা দেবে না। তবে আকাশে যে রঙ ছেড়ে যাবে, তা ক্যানভাসের চেয়ে কম কিছু নয়। তারপর নীচের শহর ঝলমলিয়ে উঠবে বৈদ্যুতিন আলোয়। এভাবেই দিন শেষ হবে আলমোড়ায়।