ভারতের প্রতিটি রাজ্যের কিছু বৈশিষ্ট্য রয়েছে, যার দ্বারা সেই রাজ্য পরিচিত। ঠিক যেমনটা রয়েছে কেরালার ক্ষেত্রে। কেরালাকে বলা হয় ‘স্পাইস গার্ডেন অফ ইন্ডিয়া’, অর্থাৎ মশলার বাগান। পশ্চিমঘাট পর্বতমালায় অবস্থিত কেরালা একটি উপকূলীয় রাজ্য এবং দেশের অন্যতম পরিষ্কার রাজ্য হিসাবে স্থান পেয়েছে। এর সুন্দর সৈকত, সমৃদ্ধ সংস্কৃতি এবং ঐতিহ্য ছাড়াও, এখানে উৎপাদিত মশলা রাজ্যের আরেকটি বাহক।
সারা বিশ্বে মশলার জন্য ভারত খুব জনপ্রিয়। আমরা বলতে পারি যে মশলার উপর ভারতের একচেটিয়া অধিকার রয়েছে কারণ কেরালা বিভিন্নতা এবং গুণগত দিক দিয়ে মশলা উৎপাদন করে। স্বাদ নির্বিশেষে, এটি কেরালার মানুষকে জীবিকা নির্বাহ করতে সহায়তা করে। এই রাজ্যে রয়েছে ‘স্পাইস ট্রেড হাব’ যেখান থেকে মশলা রপ্তানি করা হয়। কেরালা ভারতের মশলা বাগান হিসাবে পরিচিতির পিছনে এই কারণগুলোই মূলত রয়েছে।
কেরালার এই মশলা উৎপাদনের পিছনে রয়েছে এই রাজ্যের অনুকূল জলবায়ু। কেরালার আদ্র জলবায়ু এবং এখানকার লোমি মাটি বা অ্যালুয়াল মাটি কেরালাকে আরও মশলায় সমৃদ্ধ করে তুলেছে। কেরালা ইদুক্কি এবং ওয়ানাড নামক এই দুই জায়গায় সবচেয়ে বেশি মশলা চাষ ও রপ্তানি হয়। কেরালা রাজ্যে গ্রীষ্ম ও বর্ষা হচ্ছে দুটি প্রধান ঋতু। আর গ্রীষ্মকালই এই মশলার জন্য আদর্শ।
কেরালায় মশলা ব্যবসার ইতিহাস প্রায় ৩০০০ খ্রিষ্টপূর্ব। তখনও কেরালা এলাচ, কালো মরিচের মত ইত্যাদির এক্সোটিক এবং সুগন্ধি মশলার প্রধান রপ্তানিকারক ছিল। সেই সময় মিশর এবং ব্যাবিলন হল মধ্যপ্রাচ্যে ভারতীয় মশলার জন্য প্রথম আমদানিকারক এবং তখন থেকে শুরু হয় মশলার ব্যবসা।
পরবর্তীকালে আরবরা মিডল ইস্টের দেশগুলোতে ভারতীয় মশলা আমদানি শুরু করেন এবং এই মশলা বিক্রির ব্যবসায় পা রাখেন। খ্রিষ্টপূর্ব যুগের শেষে, কেরালা থেকে রপ্তানি করা এই মশলাগুলি মিশরীয়রা তাদের বাণিজ্যের মাধ্যমে গ্রিকদের কাছে পৌঁছে নিয়ে যায়। এই বিনিময় বিখ্যাত স্পাইস বাণিজ্য রুট প্রতিষ্ঠা করে। এটি এমন একটি পথ ছিল যা গ্রেকো-রোমান বিশ্বকে এশিয়ার সাথে এবং আরও স্পষ্টভাবে ভারতের সাথে সংযুক্ত করেছিল।
খ্রীষ্টীয় যুগের শুরুর আগে, আদা, এলাচ, দারুচিনি, কালো মরিচ এবং হলুদের মতো ভারতীয় মশলাগুলি ইতিমধ্যে ‘পূর্বমশলা’ নামে পশ্চিমা বিশ্বে বিখ্যাত হয়ে গিয়ে ছিল। তারপরই দ্রুত শুরু হয় আরবদের কেনাবেচা। তারা সরাসরি কেরালা থেকে আরব দেশগুলিতে মশলার ব্যবসা শুরু করে।
এরপরেই ১৪৯৮ সালে কালিকট বন্দরে আসেন পর্তুগিজ দার্শনিক ভাস্কো দা গামা। এরপরই ধীরে ধীরে জনপ্রিয়তা লাভ করতে শুরু করে কেরালার এই মশলা শিল্প। সমুদ্রপথ আবিষ্কারের পর পর্তুগিজ ডাচ নাবিক এবং ব্যবসায়ীরা ভারতে আসেন নিজেদের দেশে এই মশলা রপ্তানির জন্য।
আরও পড়ুন: কাশ্মীরের অফবিট জায়গায় ঘুরতে যেতে চান? তাহলে বাদ দেবেন না যেন ইউসমার্গকে!
আরও পড়ুন: এডমন্ড হিলারির পথে বাইক ছুটিয়ে গঙ্গা বাঁচানোর ডাক!