World Toilet Day 2021: সচেতনতা সঙ্গে ইতিহাস; ভারতেই রয়েছে সুলভ শৌচালয় মিউজিয়াম
এই শৌচালয় নিয়ে সমাজে সচেতনতার অভাব নেই। এই সচেতনতা গড়ে তোলার ক্ষেত্রে সিনেমা অবধি তৈরি হয়েছে ভারতে। তার সঙ্গে সরকারি পদক্ষেপ তো রয়েছেই। তবে সচেতনতার থেকেও এক ধাপ এগিয়ে ভারতে রয়েছে সুলভ ইন্টারন্যাশনাল মিউজিয়াম অফ টয়লেট।
আজ বিশ্ব টয়লেট দিবস। আর এই টয়লেট স্বাস্থ্যের একটি অবিচ্ছেদ্য অংশ। ভারতের মত দেশে ‘শৌচালয়’ বেশ আলোচিত একটি বিষয়। ভারতের বহু গ্রামাঞ্চলে মানুষ শৌচালয় থাকা সত্ত্বেও ব্যবহার করেন না, আবার কারোর বাড়িতেই শৌচালয়ই নেই। তাই এই শৌচালয় নিয়ে সমাজে সচেতনতার অভাব নেই। এই সচেতনতা গড়ে তোলার ক্ষেত্রে সিনেমা অবধি তৈরি হয়েছে ভারতে। তার সঙ্গে সরকারি পদক্ষেপ তো রয়েছেই। তবে সচেতনতার থেকেও এক ধাপ এগিয়ে ভারতে রয়েছে সুলভ ইন্টারন্যাশনাল মিউজিয়াম অফ টয়লেট।
ভারতের শৌচালয় গড়ে তোলা এবং সেটি ব্যবহার করা নিয়ে যে সব সচেতনতা রয়েছে, তার যদি ইতিহাস খুঁজে দেখতে হয়, তাহলে এখানে আপনি তা পাবেন না। তবে এখানে আপনি বিশ্বের সেই সব শৌচালয়ের গল্প খুঁজে পাবেন, যা নিয়ে সমাজে আলোচনা হয় না। এই মিউজিয়াম সমাজের সামনে তুলে ধরে ৪৫০০ বছর পুরনো শৌচালয়ের ইতিহাস। দেশের রাজধানী দিল্লি শহরে অবস্থিত এই সুলভ ইন্টারন্যাশনাল মিউজিয়াম অফ টয়লেট।
সবচেয়ে মজার বিষয় হল, এই মিউজিয়ামে রয়েছে ফ্রান্সের এক রাজার গল্প। ফ্রান্সের রাজা ছিলেন লুইস চতুর্দশ, যিনি কোষ্ঠকাঠিন্যের সমস্যায় ভুগতেন। তাই তাঁর সিংহাসনের নীচে তৈরি করা হয়েছিল একটি কোমড। তিনি ছিলেন এক অদ্ভুত রাজা, যিনি প্রাইভেসি বজায় রেখে খাবার খেতেন এবং প্রকৃতির ডাকে সাড়ার দেওয়ার কৃতকর্মগুলি করতেন জনসমক্ষে। তাঁর এই অদ্ভুত কোমড সহ সিংহাসনের প্রতিরূপ রয়েছে দিল্লির সুলভ জাদুঘরে।
এই জাদুঘরের প্রতিষ্ঠাতা হলেন বিন্দেশ্বর পাঠক। পেশায় তিনি একজন সমাজ কর্মী। সারা বিশ্বের অধ্যক্ষ এবং পেশাদারদের সহায়তায় তিনি জাদুঘরটি প্রতিষ্ঠা করেন। এই জাদুঘরটি তৈরির পিছনে মূল উদ্দেশ্য হল বিশ্বজুড়ে শৌচালয়ের উন্নয়নে ঐতিহাসিক প্রবণতাগুলিকে শিক্ষিত করে তোলা এবং সেগুলিকে অন্বেষণ করা। আরেকটি মূল উদ্দেশ্য হল সানিটাইজেশন ব্যবস্থা।
স্যানিটেশন একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়, যা বোঝায় যে একটি সমাজ কতটা সভ্য। দুঃখজনক হলেও এটাই বাস্তব যে, ভারতের বেশিরভাগ অংশে খোলা জায়গায় শৌচকর্ম করা হয়, কিন্তু এক সময় ভারতীয়রাই শৌচালয়ের পথপ্রদর্শকদের ছিল। মহেঞ্জো-দারোর খননকার্য থেকে সেই নিদর্শনই পাওয়া গেছে। সেখানে পরিবারে সাধারণ স্নানাগার এবং ব্যক্তিগত শৌচালয়ের অস্তিত্ব পাওয়া গেছে।
শৌচালয় ব্যবহারের একটি দীর্ঘ ইতিহাস আছে, সম্ভবত রোমান সাম্রাজ্যের চেয়েও পুরানো। এই জাদুঘরে সিন্ধু সভ্যতা থেকে শুরু করে কালানুক্রমিক ভাবে শৌচালয়ের ব্যবহারের অভ্যাসকে একটু অন্যভাবে প্রতিস্থাপন করা হয়েছে। রসিকতার মাধ্যমে টয়েলেট ব্যবহারে ইতিহাসকে মানুষের সামনে তুলে ধরেছে এই জাদুঘর।
ভারতের মত দেশে যেখানে শৌচালয় তৈরি ও ব্যবহার করা নিয়ে একাধিক সচেতনতা মূলক প্রোগ্রাম করা হয়, সেখানে এই জাদুঘর মানুষের সামনে তুলে ধরেছে অত্যাধুনিক ব্যবস্থা। যার মধ্যে একটি হল বায়োগ্যাস জেনারেটরের সঙ্গে সংযুক্ত একটি পাবলিক টয়লেট এবং বর্জ্য জল পরিশোধন ব্যবস্থা। এখানে দেখানো হয়েছে কীভাবে বায়োগ্যাস জেনারেটর বর্জ্যকে সার এবং শক্তিতে পরিণত করে।
এছাড়াও এই মিউজিয়ামে রয়েছে কোমড এবং টয়লেটের আধুনিক মডেল ও মেশিন। তারই মধ্যে একটি হল ভারতীয় শৌচালয়। দেখতে তো ভারতীয় শৌচালয়ের মতোই কিন্তু এখানে বর্জ্য ফ্লাশ করার জন্য সাধারণ প্রয়োজনীয় জলের মাত্র এক-ষষ্ঠাংশ প্রয়োজন। অর্থাৎ জল কম অপচয় হবে এই মডেলে। এই জাদুঘরে প্রবেশের জন্য কোনও অনুমতি ফি-এর প্রয়োজন নেই।
আরও পড়ুন: এশিয়ার সবচেয়ে পরিষ্কার গ্রামের স্বচ্ছ নদী! এখন ভাইরাল নেটদুনিয়ায়