AQI
Sign In

By signing in or creating an account, you agree with Associated Broadcasting Company's Terms & Conditions and Privacy Policy.

McCluskieganj: শাল-মহুয়া, অ্যাংলো-ইন্ডিয়ান ছোঁয়া! দু’দিনের ছুটিতে ঘুরে আসুন ভারতের ‘মিনি ইংল্যান্ড’ থেকে

এই শহরের সঙ্গে বিদেশ যোগ রয়েছে। পড়শি রাজ্যের রাজধানী রাঁচি থেকে প্রায় ৪০ মাইল উত্তর-পশ্চিমে অবস্থিত। নিরিবিলিতে সবুজের মাঝে মহুয়ার গন্ধে মাতাল হতে চাইলে দু-দিনের জন্য ঘুরে আসতে পারেন এই জায়গা থেকে। এখানকার আবহাওয়া শীত প্রেমীদের জন্য বেশ মনোরম।

McCluskieganj: শাল-মহুয়া, অ্যাংলো-ইন্ডিয়ান ছোঁয়া! দু'দিনের ছুটিতে ঘুরে আসুন ভারতের 'মিনি ইংল্যান্ড' থেকে
| Updated on: Jul 22, 2024 | 4:50 PM
Share

ডক্টর মধুসূদন সাহা, পর্যটক

ঝাড়খন্ডে শাল-সেগুন-মহুয়া ঘেরা পাহাড়ের কোলে ছোট্ট শহর ম্যাকলাস্কিগঞ্জ। কিন্তু সেই শহরের সঙ্গে ওতপ্রোতভাবে জড়িয়ে বাঙালি! কী ভাবে? সেই গল্পে পরে আসছি। আগে বরং টুক ঘুরে আসা যাক জঙ্গলে ঘেরা ম্যাকলাস্কি সাহেবের ডেরা থেকে।

নাম শুনে নিশ্চয় বুঝতে পারছেন, এই শহরের সঙ্গে বিদেশ-যোগ রয়েছে। পড়শি রাজ্যের রাজধানী রাঁচি থেকে প্রায় ৪০ মাইল উত্তর-পশ্চিমে অবস্থিত এই জনপদ। নিরিবিলিতে সবুজের মাঝে মহুয়ার গন্ধে মাতাল হতে চাইলে দু-দিনের জন্য ঘুরে আসতে পারেন এই জায়গা থেকে। এখানকার আবহাওয়া শীত প্রেমীদের জন্য বেশ মনোরম। শীতের সময় পারদ নামে ১.৫ ডিগ্রি সেলিসয়াস পর্যন্ত। গরমের সময় শহরাঞ্চেলর দাবদাহ থেকে বাঁচতে ঘুরে আসতেই পারেন। তবে বর্ষায় এক অন্য রূপ দেখবেন। সোঁদা গন্ধ, শাল বন, টিনের চালে ঝমঝম বৃষ্টির শব্দ এক অন্য মায়ার সৃষ্টি করে।

এক কালে অ্যাংলো-ইন্ডিয়ান বসতি ছিল এই শহরে। তাঁদের হাতেই তৈরি। সময়টা ১৯৩৩ সাল। কলকাতা নিবাসী অ্যাংলো-ইন্ডিয়ান, জমি-বাড়ির ব্যবসায়ী আর্নেস্ট টিমোথি ম্যাকলাস্কি, মহারাজা উদয় প্রতাপ নাথ শাহ দেও-এর কাছ থেকে কিনে নিলেন প্রায় ১০ হাজার একর জমি। কিন্তু অত জমি হবে কী? সমগোত্রীয় অ্যাংলো-ইন্ডিয়ানদের আবেদন জানালেন সবুজে ঘেরা প্রকৃতির কোলে পাহাড়ি পরিবেশে নিজেদের এক ‘হোমল্যান্ড’ গড়ে তোলার। এর পর তৈরি হল ‘কলোনাইজেশন সোসাইটি অফ ইন্ডিয়া’, হল জমি বন্টন। ১০ বছরে ৪০০ জন সাহেব ঘাঁটি গাড়লেন বর্তমানের ম্যাকলাস্কিগঞ্জে। থাকার জন্য বানালেন ‘কোঠি’। আর এভাবেই গড়ে উঠল ‘ভারত কা ছোটা ইংল্যান্ড'(ঝাড়খন্ড সরকার এই আখ্যাই দিয়েছে)।

পালামৌ পাহাড়ের কোলে সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে ৪৫০ মিটার উচ্চতায় অবস্থিত এই শহরের পাশ দিয়ে কুলকুল করে বয়ে গিয়েছে ডুগডুগি নদী। স্থানীয়রা বলেন এটাই নাকি দামোদর নদের উৎসস্থল। দেখতে যেতে পারেন ঝুনঝুনিয়া ঝর্ণা। বর্ষাকালে নাকি ডুগডুগি এবং ঝুনঝুনিয়া, দু-জনের উচ্ছাস দেখার মতো।

চারিদিকের চরম ধর্মীয় আগ্রাসনের মধ্যে ‘সর্ব-ধর্ম-সমন্বয়ের’ স্মারক হিসেবে, বিশাল বটগাছের পাশে একই সাথে দাঁড়িয়ে আছে মন্দির-মসিজদ-গুরদ্বারা। রয়েছে ১৯৪০ সালে ব্রিটিশদের তৈরি একটি চার্চ। রয়েছে বন উঁচু-পাহাড়ের মাঝে আদিবাসীদের কবরস্থান। হরেক পাখি আর আম, জাম, পেয়ারা, লিচুর মতো রকমারি ফলের গাছ। চোখে পড়বে বেশ কিছু প্রজাতির প্রজাপিতও। ট্রেনে করে গেলে গিয়ে নামতে পারবেন ম্যাকলাস্কিগঞ্জ স্টেশনে। প্রকৃতি এবং পরিবেশের সঙ্গে মানানসই ছোট স্টেশন। বাইরে বেরিয়ে আসলেই লাল কাঁকড়ের মেঠো পথ, শাল-মহুয়ার বোন!

তবে এককালে সাহেবদের কল্যাণে গমগম করলেও, বর্তমানে অবহেলার কারণে ধুঁকছে বুদ্ধদেব গুহ-মহাশ্বেতা দেবীদের সাধের ম্যাকলাস্কিগঞ্জ। ঐ যে প্রথমে বলেছিলাম পড়শি রাজ্যের এই শহরের সঙ্গে পুরনো বাঙালি যোগ রয়েছে। এখানে আছে সাহিত্যিক বুদ্ধদেব গুহর বাড়ি। অবশ্য দেখভালের অভাবে তা এখন ভগ্নপ্রায়। এখানকার আরেক বাড়ি ‘ম্যাক গার্ডেন’-এ বসেই তিনি লিখেছিলেন ‘একটু উষ্ণতার জন্য’। সেই বাড়ি বর্তমানে একটি গেস্ট হাউস। ম্যাকলাস্কিগঞ্জের ওপর লেখা এক হিন্দি উপন্যাসের বাংলা অনুবাদ করেছিলেন মহাশ্বেতা দেবী। আবার এখানেই ‘মার্ডার ইন দ্য গুঞ্জ’ সিনেমার শুটিং করেন অপর্ণা সেনের কন্যা তথা পরিচালক, অভিনেত্রী কঙ্কনা সেন শর্মা।

তবে অ্যাংলো-ইন্ডিয়ান সম্প্রদায়ের হাতে এই শহর গড়ে উঠলেও দ্বিতীয় বিশ্ব যুদ্ধের পরপরই এখান থেকে পাততাড়ি গোটায় তারা। শেষ ২০-২৫ বাসিন্দাও ধীরে ধীরে সব বিক্রি করে চলে গিয়েছে। তবে ‘ডন বস্কো’ স্কুলের কাছে এখনও বেশ কিছু ‘ওল্ড ইংলিশ ম্যানশন’ ইতিহাসের দলিল হয়ে দাঁড়িয়ে আছে।

কী ভাবে যাবেন: কলকাতা থেকে ট্রেন ধরে চলে যান রাঁচি। সেখান থেকে গাড়িতে ঘন্টা ২ পাড়ি দিলেই পৌঁছে যাবেন ম্যাকলাস্কিগঞ্জ। রাঁচি থেকে দূরত্ব ৬৪ কিলোমিটার। অথবা ট্রেনে করে প্রথমে পাটনা গিয়ে সেখান থেকে আবার ট্রেনে করে যেতে পারেন। পূর্বমধ্য রেলওয়ের পাটনা-বরকাকানা রুটে পড়ে ম্যাকলাস্কিগঞ্জ স্টেশন। হাওড়া থেকে সরাসরি একটি ট্রেন আছে।

কোথায় থাকবেন: রেল স্টেশন থেকে একটু দূরে জঙ্গেলর মধ্যে গড়ে উঠেছে বেশ কিছু আরামদায়ক রিসোর্ট, ইকোভিলেজ, কান্ট্রি কটেজ, এস্টেট ইত্যাদি।