
এই পৃথিবীতে কেউ যদি একবারও না থেমে না বিশ্রাম নিয়ে অক্লান্ত পরিশ্রম করে নিজের কাজটি করে চলে সেটি হল একমাত্র আপনার হার্ট। এক দিনে প্রায় ১০০,০০০ বার পাম্প করে আমাদের হার্ট। অথচ সেই হার্টের যত্ন নেওয়ার পরিবর্তে আমরা এমন কিছু কাজ করে বসি যে তাতে আখেড়ে ক্ষতি হয় আমাদের হার্টের।

হ্যাঁ, সিগারেট বা মদের নেশা, অস্বাস্থ্যকর খাওয়া দাওয়া, অনিয়ন্ত্রিত জীবনযাপন তো আছেই তবে এই প্রতিবেদনে বলব অন্য একটা অভ্যাসের বিষয়ে। সেটি হল ডাক্তারি পাশ না করেও যখন তখন ডাক্তার সাজার শখ। ভারতের সামগ্রিক স্বাস্থ্য চ্যালেঞ্জগুলির মধ্যে একটি বড় সমস্যা হল ডাক্তারের পরামর্শ ছাড়াই যখন তখন ছোটোখাট সমস্যায় নিজেরাই ওষুধ খেয়ে নেওয়া।

যার ফলে কখনও সরাসরি কখনও পরোক্ষ ভাবে ক্ষতিগ্রস্থ হয় আমাদের হার্ট। এমনকি রোজের খাওয়ার তালিকায় এমন বেশ কিছু সাধারণ ওষুধ আছে যা প্রভাবিত করে আমাদের হার্টকে। কী কী সেই ওষুধ?

পেইনকিলার (NSAIDs) - ডাইক্লোফেনাক (Diclofenac), আইবুপ্রোফেন (Ibuprofen), ও নিমেসুলাইড (Nimesulide)—এই ধরনের ওষুধ ব্যথা, জ্বর ও প্রদাহ কমানোর জন্য ব্যাপকভাবে ব্যবহৃত হয়। কিন্তু অনেকেই জানেন না, এসব ওষুধ দীর্ঘদিন বা বেশি মাত্রায় খেলে আপনার হার্টের উপর কুপ্রভাব ফেলতে পারে। বিশেষজ্ঞদের মতে এই ওষুধগুলি দীর্ঘমেয়াদে খেলে উচ্চ রক্তচাপ, এমনকি হার্ট অ্যাটাক বা স্ট্রোকের ঝুঁকি বাড়তে পারে। বিশেষ করে যাঁদের হার্টে সমস্যা আছে তাঁদের তো আরও বেশি করে সচেতন হওয়া প্রয়োজন।

ডিকনজেস্ট্যান্টস (নাক খোলার ওষুধ) - মৌসুমি ঠান্ডা লাগা , সর্দি ও ফ্লুর জন্য ফেনাইলএফ্রিন (Phenylephrine) ও স্যুডোইফেড্রিন (Pseudoephedrine) জাতীয় ওষুধ বহুল ব্যবহৃত হয়। তবে এই ওষুধ রক্তনালীগুলোকে সংকুচিত করে, যার ফলে হার্ট রেট ও রক্তচাপ বেড়ে যেতে পারে। Annals of Emergency Medicine-এর একটি রিপোর্ট অনুসারে, এইসব ওষুধ হার্টকে অতিরিক্ত উত্তেজিত করে তুলতে পারে। ফলে হার্ট অ্যাটাক বা সেই সংক্রান্ত জটিলতা বাড়তে পারে।

ডায়াবেটিসের ওষুধ - টাইপ ২ ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে ব্যবহৃত পিওগ্লিটাজোন (Pioglitazone) জাতীয় কিছু ওষুধ শরীরে জল ধরে রাখে (fluid retention), অর্থাৎ ফ্লুয়িড জমতে থাকে। যা কিছু ক্ষেত্রে হার্ট ফেলিওরের কারণ হতে পারে। যাঁদের হার্টের সমস্যা আগে থেকেই রয়েছে, তাঁদের জন্য এই ওষুধ বিশেষভাবে ঝুঁকিপূর্ণ। এই কারণে যাঁরা ডায়াবেটিসের ওষুধ খাচ্ছেন, তাঁদের উচিত চিকিৎসকের পরামর্শ অনুসারে নিয়মিত হার্টের খেয়াল রাখা।

বিশেষ কিছু অ্যান্টিবায়োটিক - অ্যাজিথ্রোমাইসিন (Azithromycin) ও ক্ল্যারিথ্রোমাইসিন (Clarithromycin)—এই দুই অ্যান্টিবায়োটিক শ্বাসযন্ত্র বা অন্যান্য ব্যাকটেরিয়াজনিত সংক্রমণের জন্য দেওয়া হয়। বিশেষ করে মৌসুমি ঠান্ডা লাগাতে সারাতে অ্যাজিথ্রোমাইসিনের কোর্স করাটা খুবই সাধারণ বিষয়। অনেকে চিকিৎসকের পরামর্শ না নিয়েই এটি খেয়ে ফেলেন। কিন্তু হয়তো এটা জানেন না যে এই অ্যান্টিবায়োটিক হার্টের সাধারণ কার্যকলাপে প্রভাব ফেলতে পারে, ফলে হার্টবিট অনিয়মিত হয়ে পরে। এর ঝুঁকি আরও বাড়ে কোন ওষুধের সঙ্গে খাওয়া হচ্ছে তার উপর। যদিও সকলের জন্য বিপজ্জনক নয়, তবে যাঁদের আগে থেকেই হার্টে সমস্যা রয়েছে বা একাধিক ওষুধ খান, তাঁদের ক্ষেত্রে সাবধানতা প্রয়োজন।

এগুলির সঙ্গেই রয়েছে কিছু অ্যান্টি ডিপ্রেশন ওষুধ। কর্টিকোস্টেরয়েড জাতীয় ওষুধ যা শরীরে হরমোনের ভারসাম্যহীনতা নিয়ন্ত্রণে ব্যবহার করা হয়। অনেকেই আজকাল দ্রুত রোগা হওয়ার জন্য নানা স্টেরয়েড বা অনান্য ড্রাগ নেন। তাও ভয়ানক হয়ে উঠতে পারে। তাই নিজে ডাক্তারি না করে সুস্থ থাকতে হলে যে কোনও ওষুধ শুরু করার আগে চিকিৎসকের পরামর্শ নিন। সচেতনতাই হল সুস্থ থাকার চাবিকাঠি।