গঙ্গার ঘাট, জ্বলন্ত চিতা, সরু তস্য সরু গলি, প্রতিটা রাস্তার মোড়ে মোড়ে ছোট বড় প্রাচীন মন্দির। ভারতের এই শহরে গেলে মনে হয় সময় যেন থমকে গিয়েছে। এতক্ষণে নিশ্চয়ই বুঝতেই পেরেছেন, কথা হচ্ছে কাশীর বিষয়ে। তবে সারা বছর এক রকম, কাশীর অন্য রূপ দেখা যায় হোলির সময়। আসল হোলির পাঁচ দিন আগেই একাদশী তিথিতে এখানে শুরু হয়ে যায় রঙের উৎসব। অবশ্য সেই হোলির রং ধূসর। চিতাভস্ম দিয়ে পালিত হয় মাসান হোলি।
শ্মশানে পোড়া মৃতদেহের ছাইয়ের সঙ্গে মেশানো হয় আবির এবং গোলাপের পাপড়ি। সেই হোলি খেলার জন্য দূরদুরান্ত থেকে কাশীতে এসে হাজির হন সাধু-সন্ন্যাসী, অঘোরী, নাগা সাধুরা। কেন ছাই দিয়ে খেলা হয় হোলি, তার পিছনেও রয়েছে ব্যাখ্যা। এখানে হোলি খেলার সঙ্গে জড়িয়ে রয়েছে শিব-পার্বতীর। বিশ্বাস, শিবগণের সঙ্গে এই দিন ছাই দিয়ে হোলি খেলায় মেতে ওঠেন স্বয়ং ভোলেনাথ।
প্রাথমিকভাবে, মাসান হোলি শুধুমাত্র সাধু, অঘোরী এবং আধ্যাত্মিক সাধকদের মধ্যেই সীমাবদ্ধ ছিল। একটা সময়ে নাগা সাধু এবং অঘোরীরাই মৃত ব্যক্তির ভস্ম নিয়ে মাসান হোলি খেলতেন। বাকিরা খুব একটা এই হোলি খেলায় অংশ নিতেন না। যদিও এখন সাধুদের সঙ্গে সাধারণ মানুষ সেই খেলায় অংশ নেন। ছাইয়ের সঙ্গে ওড়ে আবিরও। যদিও শাস্ত্র মতে সকলের এই হোলি খেলা উচিত নয়। কেন জানেন? কারা এই হোলি খেলতে পারেন?
কথিত, যেহেতু অঘোরী এবং নাগা সাধুরা দীর্ঘ সাধনার পরে নিজেদেরকে জাগতিক এবং পার্থিব বস্তুর মায়া থেকে বিচ্ছিন্ন করতে সক্ষম হন, তাই মাসান হোলির আকারে ভগবান শিবের সঙ্গে হোলি খেলার অনুমতি পেয়েছিলেন তাঁরাই। সময়ের সঙ্গে সঙ্গে মাসান হোলি এখন একটি ট্রেন্ডে পরিণত হয়েছে। সকলে অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করেন এই হোলির জন্য।
একসময় ঘনিষ্ঠ এবং কিছু নির্বাচিত ব্যক্তিদের দ্বারা পরিচালিত হলেও আজ এই হোলিতে ভিড় জমান বহু পর্যটক। কারও কারও মতে এমন্টা কাম্য নয়, এটা অশুভ লক্ষণ। মাসান হোলি আবার রংভরী হোলি নামো পরিচিত কোথাও কোথাও। শাস্ত্র মতে কারা এই হোলিতে অংশ নিতে পারেন?
এক কথায় বলকে ছাত্র, বৃদ্ধ, বিবাহিত ব্যক্তি, শিশু এবং সেই সব ব্যক্তি যাঁরা তাদের পার্থিব ও বস্তুগত আকাঙ্ক্ষা ত্যাগ করতে পারেননি তাঁদের মাসান হোলি খেলা উচিত নয়। শাস্ত্রজ্ঞদের মতে, শ্মশানের ছাই সকলের খেলা করার জিনিস নয়। অকারণে শ্মশানে প্রবেশ করাও উচিত নয়। শাস্ত্রজ্ঞরা বলছেন এমনকি পর্যাপ্ত জ্ঞান এবং নিয়মকানুন না জানা থাকলে মাসান হোলি দেখাও উচিত নয়।
কথিত, শিব অন্যান্য দেবতাদের সঙ্গে রংভরী হোলি খেলার পর, দেখেন তাঁর শশ্মানবাসী শিবগণ মুখ কালো করে দাঁড়িয়ে আছে। তখন তাঁদের দুঃখনাশের জন্য মণিকর্ণিকা ঘাটে এসে নিজের ছাই ভস্ম মেখে মেতে ওঠেন হোলি খেলায়। সেই থেকেই বিশ্বাস এই হোলিতে অংশ নেন ভূতপ্রেতরাও।
বিশ্বাস ধন-সম্পদ এবং পার্থিব বস্তুর মায়া ছেড়ে তবেই রংভরী হোলিতে অংশ নেওয়া উচিত। তাও এই হোলি সম্পর্কে সঠিক নিয়মকানুন জানার পরেই।