কেবল বাংলা নয় ভারতের নানা প্রান্তে পালিত হয় এই হোলি। শান্তিনিকেতন, বৃন্দাবন থেকে মথুরা, রঙের উৎসবে মেতে ওঠে সকলেই। কেবল দেশ নয়, বিদেশেও বহু জায়গায় পালিত হয় হোলি। আবিরের রঙে রঙীন হয়ে ওঠে চারপাশ।
তবে ভারতে এমন এক শহর আছে যেখানে হয় অন্য হোলি। সেটা হল বেনারস। ভারতের সবচেয়ে পুরনো শহরগুলির তালিকায় একদম উপরের দিকে রয়েছে কাশীর নাম। চিতার পোড়া ছাই দিয়ে সাধু-সন্ন্যাসীরা হোলি খেলেন এখানে। প্রধান হোলির পাঁচদিন আগে একাদশী তিথিতে শুরু হয়ে যায় বিশেষ হোলি। কাশীর মানুষের কাছে এই হোলির পোশাকি নাম 'রংভরী হোলি'।
বিশ্বাস এই দিন মিলন হয় শিব-পার্বতীর। সাধু-সন্ন্যাসীদের সঙ্গে একই সাথে শোভাযাত্রায় অংশ নেন তাঁরা। এদিন হোলি খেলায় মেতে ওঠেন ভূত, প্রেতরাও।
ঠিক কত বছর আগে এই হোলি খেলা শুরু হয়েছিল তা সঠিক বলা যায় না। প্রায় হাজার হাজার বছরের পুরনো প্রচলিত প্রথা হিসাবে হোলি খেলা হয় এই সময়ে। দূরদুরান্ত থেকে ছুটে আসেন নাগা সাধু, অঘোরী, সন্ন্যাসীরা।
রাস্তা জুড়ে শোভাযাত্রা বার করে ছাই দিয়ে হোলি খেলতে খেলতে এগিয়ে যান সকলে। কারও হাতে বিশাল ত্রিশূল, কারও হাতে ডমরু। গায়ে সকলের ছাই-ভস্মে ভর্তি। নেশায় টকটকে লাল চোখ। পরনে রক্ত বস্ত্র, কেউ কেউ আবার উলঙ্গ। কার গলায় মুণ্ডমালা।
বেনারসের মণিকর্ণিকা আর হরিশচন্দ্র ঘাটে জড়ো হন সকলে। পাশে দাউ দাউ করে জ্বলছে চিতা। তারই মাঝে দাঁড়িয়ে হাজার হাজার মানুষ ছাই নিয়ে মত্ত হোলি খেলায়। ভাববেন না মাসান হোলি মানে স্রেফ চিতা ভস্ম। সঙ্গে মেশানো থাকে আবির, গোলাপের পাপড়িও। সঙ্গে চলে শিবের উপাসনা আর মন্ত্রোচ্চারণ। সেই অদ্ভুত দৃশ্য না দেখলে বিশ্বাস হয় না। এ যেন এক অদ্ভুত জগৎ। এই হোলি সকলের প্রিয় মাসান হোলি।
সাধু-সন্ন্যাসীরা বলেন এই দিন শিব-পার্বতী এবং শিবগণ অর্থাৎ ভূত, প্রেত সকলে অংশ নেন বলেই রং নেয় হোলি খেলা হয় চিতাভস্ম দিয়ে। সাধকরা বলেন, পার্থিব বস্তুর মায়া ত্যাগ করতে না পারলে, এই হোলিতে অংশ নেওয়া উচিত নয়। তাতে হিতে বিপরীত হতে পারে।