কলকাতা: শুধু বিজেপি নয়, বাংলায় এসে সমান তালে তৃণমূলকেও আক্রমণ করেছেন ত্রিপুরার প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী মানিক সরকার। ২৪ ঘণ্টা পর বিজেপিকে আক্রমণ করতে গিয়ে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দোপাধ্যায় সেই বাম নেতার উক্তিই উল্লেখ করলেন।
বিজেপি বিরোধিতায় ত্রিপুরার কথা উদাহরণ হিসেবে উল্লেখ করেছিলেন মানিক সরকার। বুধবারই বাংলায় এসে সেকথা বলেছেন তিনি। বিজেপি সরকার ক্ষমতায় আসার পর ত্রিপুরায় কি পরিস্থিতি হয়েছে, সেই বর্ণনাই দিয়েছিলেন। বৃহস্পতিবার কসবার গীতাঞ্জলি স্টেডিয়ামে দলের তফসিলি জাতি–উপজাতি সম্মেলনে বক্তব্য রাখতে গিয়ে মমতা, মানিক সরকারের বক্তব্যকেই বাংলার মানুষের কাছে উদাহরণ হিসেবে উপস্থাপন করেন। বলেন, “মানিক বাবু বলে গেছেন ত্রিপুরায় গিয়ে দেখে আসুন মানুষের কি হাল করেছে। রিকশাওয়ালা-ঠেলাওয়ালার উপর অত্যাচার চলছে।” শিক্ষকদের পরিস্থিতির কথাও এদিন উল্লেখ করেন তিনি।
আরও পড়ুন: আগামী জুলাইয়েই রাজ্যে জয়েন্ট পরীক্ষা, ঘোষণা বোর্ডের
মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের দাবি, ১০ হাজার শিক্ষককে স্থায়ী করার প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল ত্রিপুরার বিজেপি সরকার, কিন্তু তা করার বদলে তাদের ছেঁটে ফেলেছে। অথচ বাংলায় শিক্ষকদের বেতন বন্ধ হয়নি। মুখ্যমন্ত্রী উল্লেখ করেন, করোনা পরিস্থিতির মধ্যেও এরাজ্যে শিক্ষকদের বেতন নিয়ে কোনও সমস্যায় পড়তে হয়নি।
মমতার কথায়, ‘এক সময় ত্রিপুরার মানুষ বলত সিপিএম আসিয়া ত্রিপুরা দিল ভাসাইয়া, আর এখন বলে বিজেপি আসিয়া ত্রিপুরা দিল ভাসাইয়া।’ ওখানকার বহু মানুষ ভয়ে এখানে এসে থাকেন বলেও দাবি করেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।
আরও পড়ুন: নজরে সংখ্যালঘু ভোট ব্যাঙ্ক, আব্বাসের সঙ্গে জোট করতে হাইকম্যান্ডকে চিঠি মান্নানের
পূর্ব বর্ধমানের সভা থেকে মানিক বাবু বলেছিলেন, ‘বিজেপি প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল আরও ভাল ত্রিপুরা তৈরি করবে। কিন্তু এখন কি হল! মানুষ ১০০ দিনের কাজও পাচ্ছেন না। দেশে শুধু সম্পত্তি বেড়েছে আদানি ও আম্বানীদের। আরও বলেন, ত্রিপুরার বিজেপি সরকারকে দেখে শিক্ষা নিক বাংলা।’ একই ‘ভুল’ যেন পশ্চিমবঙ্গবাসী না করেন, সাবধানবাণী দেন তিনি।
মানিক সরকারই তৃণমূলকেও আক্রমন করে গিয়েছেন বুধবার। বলেছেন, “ত্রিপুরায় যেমন বিজেপি মণ্ডলের লোকেরা ১০০ দিনের কাজের টাকা লুট করছে, বাংলায় তৃণমূল সরকারও তাই করেছে।” ত্রিপুরার মানুষ ‘সোনার ডিমের জন্য হাঁস মেরে ফেলেছি’ বলে আক্ষেপ করেছেন বলে মন্তব্য করেন সে রাজ্যের প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রীর।
মমতার অভিযোগ, ‘ত্রিপুরায় কংগ্রেসের লোক ভাঙিয়ে সরকার গড়েছিল বিজেপি। এখানেও তৃণমূল কংগ্রেসের কিছু লোক ভাঙিয়ে সেরকম ধান্দা করছে। কিন্তু এখানে ওই কটা গদ্দারকে নিয়ে কিছু করতে পারবে না ওরা।’ মমতার দাবি, বাংলার মানুষ বিজেপিকে হাড়ে হাড়ে চেনে।
এদিন মমতা আরও বলেন,‘আর ৪–৫ দিন পরই ভোটের দিন ঘোষণা হবে। এখন এত চাইলে হবে না। কয়েকটা বিজেপি আর কয়েকটা সিপিএমের লোকের কথা শুনে এরকম করে কোনও লাভ নেই। ভোটের আগে ব্ল্যাকমেল করবেন না।’ নিজেই প্রশ্ন তোলেন, ‘কী দেওয়া হয়নি বলুন তো? সবুজসাথী, কন্যাশ্রী, স্বাস্থ্যসাথী, বিনামূল্যে রেশন থেকে সব সুবিধাই পাচ্ছে রাজ্যবাসী। এরপরও ভোটের আগে যা ইচ্ছা কেন চাওয়া হচ্ছে? এতেও যদি আমাকে পছন্দ না হয়, তাহলে আমায় ভোট দেবেন না। বাকিদের ভোটেই আমাদের সরকার তৈরি হয়ে যাবে।’