সারা ভারত যখন দশেরাতে মেতে ওঠে, তখন বাঙালিরা মেতে ওঠে সিঁদুর খেলায়। দুর্গা পুজোর শেষ দিন দশমী। দশমীর দিন মায়ের বিদায়ের মধ্যে দিয়ে সমাপ্ত হয় দুর্গা পুজো। তাই দশমী মানেই মন খারাপ। এবার মাকে বিদায় দেওয়ার পালা। উমা তাঁর বাপের বাড়ি ছেড়ে পুনরায় পাড়ি দেন কৈলাসে। এই দিন মাকে বরণের পর শুরু হয় সিঁদুর খেলা। একের পর এর মহিলা মাকে বরণ করার পর তাঁর সিঁথিতে ও পায়ে সিঁদুর ছুঁইয়ে দেন। তারপর নিজের মধ্যে মেতে ওঠেন সিঁদুর খেলায়। মন খারাপের মাঝে হাসি মুখে সিঁদুর খেলা ও মিষ্টিমুখে বিদায় জানানো হয় মাকে। শুরু হয় অপেক্ষা আরও একটা বছরের।
মহাষষ্ঠী থেকে মহানবমী আমরা ‘মহা’ এবং ‘শুভ’ কথাটা উচ্চারিত করি। কিন্তু দশমীর দিন ‘বিজয়া দশমী’র শুভেচ্ছা জানাই। বিজয়ার দিনে এই যে সিঁদুর খেলায় আমরা বাঙালিরা মেতে উঠি। বিজয় দশমীর দিন মহিলারা লাল পার সাদা শাড়ি পরে সিঁদুর খেলায় মেতে ওঠেন। এর মাধ্যমে তাঁরা স্বামীর মঙ্গল কামনা করেন। কিন্তু এই রীতির ইতিহাস এবং তাৎপর্য কি জানেন?
পৌরাণিক কাহিনী অনুযায়ী, আশ্বিন মাসের শুক্লপক্ষের দশমী তিথিতে বাপের বাড়ি ছেড়ে মা দূর্গা পাড়ি দেন কৈলাসে স্বামীর কাছে। এই কারণেই এই তিথিকে ‘দশমী’ বলা হয়। কিন্তু দশমী বিজয়া কেন বলা হয় তার ব্যাখ্যাতেও উঠে আসবে পৌরাণিক কাহিনি। পুরাণে মহিষাসুর-বধ কাহিনিতে কথিত রয়েছে যে মহিষাসুরের সঙ্গে মা দুর্গার নয় দিন নয় রাত্রি যুদ্ধ হওয়ার পর দশম দিনে বিজয় লাভ করেন দেবী দুর্গা। নারী শক্তির এই জয় লাভকেই ‘বিজয়া’ বলে ব্যাখ্যা করা হয়েছে। অন্যদিকে শ্রীচণ্ডীর কাহিনি অনুযায়ী, দেবী আবির্ভূত হন আশ্বিন মাসের কৃষ্ণাচতুর্দশীতে এবং মহিষাসুরকে বধ করেন শুক্লপক্ষের দশমীতে। তাই দশমীতে এই বিজয়কেই বিজয়া দশমী চিহ্নিত করা হয়।
বাঙালিদের মধ্যে সিঁদুর খেলার ইতিহাস এখনও সঠিক ভাবে জানা যায়নি। তবে জনপ্রিয় ফর্কলোর অনুসারে, গৃহিণীদের মধ্যে বনহোমি চালু করার জন্য জমিদার বাড়ির দুর্গা পূজায় ২০০ বছর আগে এই সিঁদুর খেলার উৎসব শুরু হয়েছিল। আরেকটি অন্য তত্ত্ব অনুসারে, সিঁদুর খেলার এই ঐতিহ্য দুর্গা পূজার মতই পুরানো। ধারণা করা হয়ে এই রীতি প্রায় ৪০০ বছর পুরানো। সাধারণভাবে প্রচলিত বিশ্বাস অনুযায়ী, যদি কোনও মহিলা সঠিক রীতি মেনে সিন্দুর খেলা খেলেন, তবে তিনি কখনই বিধবা হবেন না, যেহেতু হিন্দু বিবাহ রীতিতে সিঁদুরদান একটি লৌকিক আচার।
আরও পড়ুন: দেবী দুর্গার বাহন সিংহ-ই কেন? রয়েছে এক আশ্চর্য কাহিনি
আরও পড়ুন: মহানবমীতে দেবীর এই রূপ সিদ্ধি দান করেন; জানুন মহানবমীর নির্ঘণ্ট
আরও পড়ুন: রাবণ সম্পর্কে কিছু অজানা তথ্য, যা অনেকেরই জানা নেই