বর্তমান সমাজে বিপত্তারিণী পুজো নিয়ে পৌরাণিক কাহিনি অনুপ্রাণিত করবে আপনাকেও!
স্বর্গ-মর্ত্য নির্বিশেষে সমগ্র সৃষ্টিতে দুর্গতি দূর করে শান্তি আনেন তিনি। নারদীয় পুরাণে তাই বিষ্ণুকে সর্বশক্তিমান এবং দুর্গাকে সর্বশক্তিময়ী বলা হয়েছে।
প্রভু জগন্নাথ এখন রয়েছেন মাসির বাড়িতে। তিনি নিজগৃহে ফিরবেন উলটো রথের দিন। জগন্নাথদেবের এই রথ থেকে উলটো রথযাত্রার মধ্যে পুজো করা হয় বিপত্তারিণী দেবী চণ্ডীর। এই সময়ের মধ্যে মঙ্গল বা শনিবারে হয় এই পুজো।রথযাত্রার দিন দেবী দুর্গার কাঠামো পুজোর রীতি যেমন সারা দেশে প্রচলিত তেমনি প্রচলিত বিপত্তারিণী চণ্ডীর আরাধনা। দেবী বিপত্তারিণীর রূপের সঙ্গে দেবী সংকটতারিণী বা মাতা সংকটার সাদৃশ্য রয়েছে। কোথাও তিনি শঙ্খ-চক্র-শূল ও অসিহস্তা স্বর্ণবর্ণা ত্রিনয়না, আবার কোথাও তিনি খড়গ-শূল-বরাভয়ধারিণী লোলজিহ্বা ঘোরকৃষ্ণা। বিপত্তারিণীর পুজো করলে সমস্ত বিপদ থেকে মুক্ত পাওয়া যায়, এমনটাই বিশ্বাস মানুষের ৷
ভগবান কৃষ্ণই প্রভু জগন্নাথ রূপী সর্বশক্তিমান। সৃষ্টি পালনের শক্তি তাতে প্রধান রূপে বিরাজ করে। আবার সকল দৈবীরূপী শক্তিময়ী দেবী চণ্ডীর হাতে অসুর, দৈত্য, দানব প্রভৃতির বিনাশ হয়। স্বর্গ-মর্ত্য নির্বিশেষে সমগ্র সৃষ্টিতে দুর্গতি দূর করে শান্তি আনেন তিনি। নারদীয় পুরাণে তাই বিষ্ণুকে সর্বশক্তিমান এবং দুর্গাকে সর্বশক্তিময়ী বলা হয়েছে। বৈদিক যুগে এই সময়েই ভগবান বিষ্ণু ও গৌরীর পুজো প্রচলিত ছিল। সেই ঐতিহ্য মেনে রথের পরেই বিপত্তারিণী চণ্ডীর পুজো চলে আসছে। মহাভারতে যুদ্ধের পূর্বে পাণ্ডবদের বিপদ নাশ ও নিজের বৈধব্য প্রতিরোধের জন্য দ্রৌপদী গৌরীর আরাধনা করেছিলেন এবং যুদ্ধ শেষে স্বামীর জীবন রক্ষায় তাঁদের হাতে ১৩টি লাল সুতো বেঁধে দিয়েছিলেন।
আজও তাই বিপত্তারিণী পুজো শেষে রক্ত সূত্রের ত্রয়োদশ গ্রন্থিযুক্ত ডোর ধারণ করা হয়।মার্কণ্ডেয় পুরাণে রয়েছে এই পুজোর বিধি বিধান। সেখানে ১৩টি ফল, ১৩টি ফুল, ১৩টি পান সুপারি ও ১৩টি নৈবেদ্য দানের কথা বলা হয়েছে। সনাতন শাস্ত্রে ১৩ সংখ্যাটি যে অশুভ নয় তাও এর থেকে প্রমাণিত হয়।
পৌরাণিক কাহিনি
পুরাণের এই ঘটনার পটভূমি মল্লভূম রাজবংশ ৷ দোর্দণ্ডপ্রতাপ মল্লরাজারা সপ্তম শতাব্দী থেকে অষ্টাদশ শতাব্দী পর্যন্ত একটানা বিষ্ণুপুর শাসন করেছিলেন। সেই মল্লভূম রাজবংশেরই এক রাজার পত্নী ছিলেন অত্যন্ত ধর্মপরায়ণা ৷ এক মুচিনীর সঙ্গে তাঁর ছিল ভীষণ সখ্যতা ৷ সেই মুচিনীরা গোমাংস খেতেন ৷ একদিন রাজরানির ভীষণ কৌতূহল হল, গোমাংস কেমন হয় তা তিনি নিজের চোখে দেখবেন ৷ মুচিনীটিকে সে কথা বলতেই সে তো ভয়ে জড়সড়। ধার্মিক মহারাজ পরম শুদ্ধাচারী। যদি জানতে পারেন, মৃত্যুদণ্ড অবধারিত। কিন্তু তৎসত্ত্বেও রানি খুবই জোড় করায় মুচিনী রাজি হল।
কথামতো একদিন সে যত্নসহকারে গোমাংস রেঁধে লুকিয়ে রাজবাড়িতে রানিমাকে দিয়ে গেল। রানি তো গোমাংস মুখেও তুলবেন না ৷ দেখবেন শুধু ৷ ইতিমধ্যেই কীভাবে যেন রাজার কানে এই কথাটা তুলে দিলেন কোনও এক রাজকর্মচারী ৷ ক্রোধে অগ্নিশর্মা হয়ে রাজা অন্দরমহলের দিকে ছুটে এলেন ৷ রানি তো ভয়েই আধমরা ৷ কীভাবে লুকাবেন নিষিদ্ধ বস্তুটি? আঁচলের তলায় লুকিয়ে ফেললেন পাত্রসমেত মাংসটি ৷ আর চোখ বুঝে মা দুর্গাকে ডাকতে লাগলেন তাঁকে এই বিপদ থেকে মুক্ত করার জন্য ৷মা দুর্গা সেই ডাক শুনলেন ৷ রাজা ঘরে এসেই রানির আঁচল টেনে ছিঁড়ে দিলেন ৷ কিন্তু আঁচলের নীচ থেকে বেরিয়ে এল একথালা রক্তজবা ফুল ৷ এমন কাণ্ড করার জন্য অনুতপ্ত রাজা রানির কাছে ক্ষমাপ্রার্থনা করলেন ৷ শরণাগতবৎসলা মা তখন আবির্ভূত হয়ে রানিকে কানে কানে বললেন “ভয় নাই, আমি নিষিদ্ধ মাংসকে পুষ্পে পরিণত করিয়াছি।” এরপর থেকেই শুরু হল মা বিপত্তারিণীর আরাধনা ৷
আরও পড়ুন: Jagannath Rath Yatra 2021: পুরীর রথযাত্রার ইতিহাস, মাহাত্ম্য ও বিশেষ আচার-রীতি জেনে নিন একনজরে