Mahalaya 2022: সামনেই মহালয়া, দুর্গাপুজোর আগে বাঙালিদের কাছে কেন এত গুরুত্বের, জানা আছে?

Durga Puja in Bengal: শাস্ত্র অনুযায়ী এই দিনটি পিতৃপক্ষের অবসান বলে মানা হয়। তাই এদিন ভোরবেলা তর্পন, শ্রাদ্ধ করে পূর্বপূরুষদের আত্মার শান্তি কামনা করা হয়। কিন্তু কেন এত গুরুত্বপূর্ণ, তা জেনে নিন এখানে...

Mahalaya 2022: সামনেই মহালয়া, দুর্গাপুজোর আগে বাঙালিদের কাছে কেন এত গুরুত্বের, জানা আছে?
Follow Us:
| Edited By: | Updated on: Sep 22, 2022 | 6:05 AM

পিতৃপক্ষের অবসান, দেবীপক্ষের আগমন। মহালয়ার মধ্য দিয়েই শুরু দেবীপক্ষ। তাই হিন্দু ধর্মে মহালয়ার বিশেষ তাৎপর্য রয়েছে। আগামী ২৬ সেপ্টেম্বর সোমবার থেকে শুরু হতে চলেছে শারদীয়া নবরাত্রি। অন্যদিকে মহালয়া হচ্ছে সর্বপিতৃ অমাবস্যার দিনে অর্থাৎ ২৫ সেপ্টেম্বর রবিবার। নবরাত্রি ও পিতৃপক্ষের সময়কালকে মহালয়া বলা হয়। এই সময় দেবী দুর্গার আগমনের জন্য পূজা দেন অধিকাংশ। অন্যদিকে পিতৃপুরুষদের প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে জল দিয়ে প্রণাম করে, সংসারে সুখে থাকার প্রার্থনা করা হয়। বহু শতাব্দী ধরে ভারতীয় সংস্কৃতিতে রয়েছে মহালয়া গুরুত্ব। তবে এই বিশেষ পুজো বাংলাতেই বিশেষ চল রয়েছে। বাঙালিদের কাছে এই মহালয়ার দিনটি শুভ বলে মনে করা হয় না। শাস্ত্র অনুযায়ী এই দিনটি পিতৃপক্ষের অবসান বলে মানা হয়। তাই এদিন ভোরবেলা তর্পন, শ্রাদ্ধ করে পূর্বপূরুষদের আত্মার শান্তি কামনা করা হয়। কিন্তু কেন এত গুরুত্বপূর্ণ, তা জেনে নিন এখানে…

মহালয়া কী?

বাংলার মাটিতে যেভাবে দুর্গাপূজার গুরুত্ব রয়েছে, ঠিক সেভাবেই মহালয়াও পালিত হয় ব্যাপক আড়ম্বরে। বাংলায় সবাই মহালয়ার জন্য অপেক্ষা করেন কারণ এখানে দেবী দুর্গাকে কন্যা রূপে মানা হয়। এই দিনে দেবী দুর্গার প্রতিমা আঁকা হয়, তার চোখ তৈরি করা হয় এবং প্রতিমাসহ মণ্ডপ সাজানো হয়। দেবী দুর্গার প্রতিমা তৈরির কারিগররা আগে থেকেই কাজ শুরু করলেও মহালয়ার দিন প্রতিমাকে চূড়ান্ত রূপ দেন। আর এটাই প্রথা হয়ে আসছে বহু যুগ ধরে। মহালয়ার দিনে পিতৃপক্ষ শেষ হয় এবং এই দিন থেকে দেবীপক্ষ শুরু হয়। পিতৃপক্ষের মত, দেবীপক্ষও ১৫ দিনের, যার মধ্যে ১০ দিন নবরাত্রির এবং দেবীপক্ষের ১৫তম দিনে অর্থাৎ শারদ পূর্ণিমায় লক্ষ্মী পূজার মাধ্যমে শেষ হয়।

মহালয়ার গুরুত্ব

মহালয়া মানেই বাঙালিদের কাছে নস্টালিয়া। কারণ এদিন সেই পুরনো রেডিয়ো বের করে বীরেন্দ্রভদ্রের মহিষাসুরমর্দিনি শোনার পালা। তবে এখন আর রেডিয়োতে নয়, মোবাইল চালালেই সেই কন্ঠ শোনা যায়। মহালয়া বাঙালির উৎসব হলেও সারা দেশে পালিত হয়। কথিত আছে যে মহালয়ার দিনে মহিষাসুর নামে অসুরকে বধ করার জন্য দেবী দুর্গাকে আবাহন করা হয়েছিল। মহালয়া অমাবস্যার সকালে, পূর্বপুরুষরা পৃথিবীকে বিদায় নেন এবং সন্ধ্যায় দেবী দুর্গা, তার যোগিনী, দুই কন্যা, লক্ষ্মী-সরস্বতী,পুত্র গণেশ এবং কার্তিকের সঙ্গে পৃথিবীতে আসেন। এরপর নয় দিন ঘরে ঘরে অবস্থান করে ভক্তদের প্রতি কৃপা বজায় রাখেন। বাংলায় দুর্গাপূজা বহু প্রতীক্ষিত এবং এই দিনে শিশুদের কাছে দেবী দুর্গার পৌরাণিক কাহিনি সুরে সুরে শোনানো হয়।

দেবীকে বাংলায় কন্যা রূপে মানা হয়

নবরাত্রির নয় দিনে পার্বতী তাঁর শক্তি ও নয়টি রূপ নিয়ে তাঁর মর্ত্যে বাপের বাড়িতে আসেন অর্থাৎ পৃথ্বীলোক। দেবী তার সঙ্গী যোগিনীদের সঙ্গে আসেন। সঙ্গে থাকেন দুই কন্যা ও দুই পুত্র। পৃথ্বী হলেন দেবী পার্বতীর মামা এবং মাতা নবরাত্রির নয় দিনে তার মাতৃগৃহে আসেন। মনে করা হয়, পৃথিবীতে থাকাকালীন তিনি মানুষের দুঃখ-কষ্ট দূর করেন এবং অসুরের মত অশুভ যা শক্তি রয়েছে, তা ধ্বংস করেন। মাতা পার্বতী হিমালয়ের কন্যা এবং হিমালয় ছিলেন পৃথিবীর রাজা, তাই বাংলায় মহালয়ার দিনে দেবীকে কন্যা রূপে ডেকে কন্যা পুজো ও ভোজের আয়োজন করা হয়। মাতা পার্বতী জগৎপিতা ভোলেনাথের সঙ্গে বিবাহ হয়েছিল বলে তাঁকে জগৎ মাতা বলা হয়।

মহালয়ার দিনে দেবী স্বামীর ঘর থেকে বিদায় নেন

পৌরাণিক কাহিনি অনুযায়ী, মহালয়ার দিন,দেবী পার্বতী কৈলাস পর্বত থেকে মাতৃগৃহে আসার জন্য রওনা দেন। তাই মহালয়ার দিনে দেবীর অভ্যর্থনায় পূজা করা হয় এবং স্বাগত জানানোর জন্য বিশেষ প্রার্থনা করা হয়। পরের দিন অর্থাৎ নবরাত্রি থেকে দেবী ঘরে ঘরে প্রবেশ করে থাকেন। দেবী যখনই নবরাত্রির সময় মর্ত্যে আসেন, তখন তিনি অন্য রূপে বিরাজ করেন। এ বার সোমবার থেকে শুরু হচ্ছে শারদীয়া নবরাত্রি, তাই এ বার হাতিতে চড়ে পৃথিবীতে আসবেন দুর্গা।

পিতৃপক্ষের অবসান

মহালয়াকে পিতৃপক্ষের শেষ দিন হিসেবে চিহ্নিত করা হয়। এই তিথিকে সর্বপিতৃ অমাবস্যাও বলা হয়। এই দিনে স্বর্গীয় সব পূর্বপুরুষদের শ্রাদ্ধ করা হয়, তর্পণ নিবেদন করে আত্মার শান্তি কামনা করা হয়। এর সঙ্গে মহালয়া অমাবস্যার দিনে পূর্বপুরুষদের কাছে সমস্ত ভুল স্বীকার করে কৃপা বজায় রাখার প্রার্থনা করা হয়। ওই একই সন্ধ্যায় পৃথিবীতে দেবী দুর্গার আগমনের জন্য প্রার্থনা করা হয়। মহালয়ার দিনে দেবী দুর্গা পৃথিবীতে প্রথম পা রাখেন। অশুভ বলে মনে করা হলেও এই সময়ে শুরু হওয়া যে কোনও কাজ সর্বদা ফলদায়ক বলে বিবেচিত হয়।