ঊনবিংশ শতকের এক প্রখ্যাত ভারতীয় বাঙালি যোগসাধক, দার্শনিক ও ধর্মগুরু হিসেবে পরিচিত শ্রীরামকৃষ্ণ দেবের আজ ১৮৭ত জন্মতিথি পালন করা হচ্ছে বেলুর মঠে।
প্রতি বছর ৪ মার্চ বেলুড় মঠে শ্রী শ্রী রামকৃষ্ণ দেবের জন্মতিথি পালন করা হয়। বৃহস্পতিবার বেলুড় মঠের পক্ষে সাধারণ সম্পাদক স্বামী সুবীরানন্দের স্বাক্ষরিত এক নির্দেশে জানানো হয়েছে, শুক্রবার সকাল সাড়ে ৬টা থেকে বেলা সাড়ে ১১টা ও বিকাল সাড়ে ৩টে থেকে সাড়ে ৫টা পর্যন্ত ভক্ত ও সাধারণের জন্য মঠ খোলা থাকবে। তবে করোনার কারণে আগামী ১৩ মার্চ, রবিবার সাধারণ উৎসব ও মেলা অনুষ্ঠিত হবে না। ওইদিন বেলুড় মঠ বন্ধ রাখা হবে বলেও জানানো হয়েছে।
ফাল্গুন অথবা মাঘ মাসের শুক্লপক্ষের দ্বিতীয়া তিথিকে রামকৃষ্ণের আবির্ভাব দিবস হিসেবে ধরা হয়। রামকৃষ্ণ পরমহংস গ্রামীণ পশ্চিমবঙ্গের এক দরিদ্র বৈষ্ণব ব্রাহ্মণ পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন। দক্ষিণেশ্বর কালীবাড়িতে পৌরোহিত্য গ্রহণের পর বঙ্গীয় তথা ভারতীয় শক্তিবাদের প্রভাবে তিনি কালীর আরাধনা শুরু করেন। তার প্রথম গুরু তন্ত্র ও বৈষ্ণবীয় ভক্তিতত্ত্বজ্ঞা এক সাধিকা। পরবর্তীকালে অদ্বৈত বেদান্ত মতে সাধনা করে নির্বিকল্প সমাধি লাভ করেন রামকৃষ্ণ। অন্যান্য ধর্মীয় মতে, বিশেষত ইসলাম ও খ্রিস্টীয় মতে সাধনা তাকে “যত মত, তত পথ” উপলব্ধির জগতে উন্নীত করে। ঊনবিংশ ও বিংশ শতাব্দীর হিন্দু নবজাগরণের অন্যতম পুরোধাব্যক্তিত্ব। তার শিষ্যসমাজে, এমনকি তার আধুনিক ভক্তসমাজেও তিনি ঈশ্বরের অবতাররূপে পূজিত হন। প্রথাগত দৃষ্টিভঙ্গিতে অশিক্ষিত হলেও রামকৃষ্ণ বাঙালি বিদ্বজ্জন সমাজ ও শিক্ষিত মধ্যবিত্ত সম্প্রদায়ের সম্ভ্রম অর্জনে সক্ষম হয়েছিলেন। ১৮৭০-এর দশকের মধ্যভাগ থেকে পাশ্চাত্যশিক্ষায় শিক্ষিত বুদ্ধিজীবীদের নিকট তিনি হয়ে ওঠেন হিন্দু পুনর্জাগরণের কেন্দ্রীয় চরিত্র। তৎসঙ্গে সংগঠিত করেন একদল অনুগামী, যাঁরা ১৮৮৬ সালে রামকৃষ্ণের প্রয়াণের পর সন্ন্যাস গ্রহণ করে তার কাজ চালিয়ে যান। এঁদেরই মধ্যে প্রধান ছিলেন স্বামী বিবেকানন্দ। রামকৃষ্ণ আন্দোলন ভারতের অন্যতম নবজাগরণ আন্দোলনরূপে বিবেচিত হয়।
আরও পড়ুন: Hindu Temple: হিন্দু মন্দিরে প্রবেশের আগে ঘণ্টা কেন বাজানো হয়? এর পেছনে রয়েছে যুক্তিযুক্ত কারণ