অক্টোবর মাস মানেই উত্সবের মাস। হিন্দু ক্যালেন্ডারে আশ্বিন মাসে বেশ কয়েকটি উত্সব রয়েছে, যা গ্রেগরিয়ান ক্যালেন্ডারেও সেপ্টেম্বর/অক্টোবরের সঙ্গে অনেক মিল পাওয়া যায়। আশ্বিনের সময়, লোকেরা দেবীপক্ষ উদযাপন করে, যা নবরাত্রি নামে পরিচিত, বাঙালিদের কাছে দেবী দুর্গা হিসেবে পূজিত হোন। তবে দুর্গাপুজো ৯ দিন ধরে পালিত হয় না। নবরাত্রির শেষ পাঁচ দিন দুর্গাপূজা উত্সব পালিত হয়। এর পরেই বিজয়া দশমী (সারা দেশে যা দশেরা নামে বিখ্যাত), সরস্বতী পূজা (দক্ষিণ ভারতে), বাল্মীকি জয়ন্তী, মীরাবাই জয়ন্তী, কারওয়া চৌথ এবং আরও বেশ কয়েকটি সর্বভারতীয় এবং আঞ্চলিক উৎসব পালিত হয়।
২০২১ সালের অক্টোবরে সমস্ত উত্সব এবং গুরুত্বপূর্ণ তারিখগুলি নোট করে রাখুন…
শারদীয়া নবরাত্রি (৭ অক্টোবর থেকে ১৪ অক্টোবর)
আশ্বিন মাসে অমাবস্যার পর দেবীপক্ষ শুরু হয় এবং দশমীর শুভ দিন থেকে এক দিন আগে নবমীতে শেষ হয়। নয় দিন ব্যাপী এই উৎসব, যা নবরাত্রি নামে পরিচিত। নারী শক্তি বা শক্তির প্রতীক হিসেবে দেবী দুর্গাকে উত্সর্গ করে পূজো করা হয়।
দুর্গাপূজা (১১ অক্টোবর থেকে ১৫ অক্টোবর)
দেবীপক্ষের ষষ্ঠী তিথি থেকে শুরু হয় এবং বিজয়া দশমীর মধ্য দিয়ে শেষ হয় দুর্গাপুজো। ওড়িশা, পশ্চিমবঙ্গ, ত্রিপুরা এবং অসমে মাতৃদেবীর ভক্তরা এই উৎসবটি পাঁচ দিন ধরে খুব ধুমধাম এবং উত্সাহের সঙ্গে উদযাপন করেন।
দক্ষিণ ভারতে সরস্বতী পূজা এবং আয়ুধা পূজা (১৪ অক্টোবর)
দেবীপক্ষের সময় নবমী তিথিতে,দক্ষিণ ভারতের বেশিরভাগ অঞ্চলে সরস্বতী পূজা করা হয়। বিদ্যার দেবী সরস্বতীকে শ্রদ্ধা জানানোর জন্য এই দিনটিকে আদর্শ বলে মনে করা হয়। এটি ছোট বাচ্চাদের জন্য শিক্ষার সূচনা করার জন্য নিখুঁত দিন হিসাবে পালন করা হয়। আর এই ঐতিহ্যকে বিদ্যারামভাম বলা হয়। তবে বাঙালিদের সরস্বতী পুজো পালিত হয় অন্য় সময়ে। মজার ব্যাপার হল, এই দিনেই অস্ত্র, যন্ত্র, মেশিন এবং অন্যান্য যন্ত্রপাতি পূজা করা হয় আর এই আচার অনুষ্ঠানকে অযুধা পূজা হিসাবে জনপ্রিয়।
বিজয়া দশমী বা দশেরা এবং মহীশুর দশেরা (১৫ অক্টোবর)
বিজয়া দশমীতে অসুর-রাজা রাবণের উপর শ্রী রামের বিজয়ানুষ্ঠান এবং মহিষাসুর বধের মাধ্যমে এই দিনটিকে পালন করা হয়। এই দিনটি শুভ দিন বলে বিশ্বাস করা হয় কারণ সত্যের জয় এবং মিথ্যা ও অশুভের উপর শুভর প্রতীক হিসেবে ধরা দেয়।
মাইসুরুতে বিজয়া দশমী উদযাপন একটি অসাধারণ দৃশ্যে দেখা যায়। একটি প্রাচীন ঐতিহ্য, যেখানে হাজার হাজার দর্শকদের আকর্ষণীয়। নবরাত্রির প্রথম দিনে উৎসব শুরু হয় এবং বিজয়া দশমীর দিন পর্যন্ত চলে। রাস্তায় শোভাযাত্রা বের করা হয় এবং প্রধান আকর্ষণ হল স্বর্ণ মণ্ডপে বসা চামুণ্ডেশ্বরী দেবীর মূর্তি।
ইন্দিরা একাদশী ও পাপনকুশা একাদশী (২ অক্টোবর এবং ১৬ অক্টোবর)
আশ্বিনে পালন করা এই একাদশী ব্রত। কৃষ্ণপক্ষ (চাঁদের ক্ষয়প্রাপ্ত পর্ব) কে ইন্দিরা একাদশী বলা হয়। আশ্বিন মাসের শুক্লপক্ষের একাদশীর দিনে, ভগবান বিষ্ণুর ভক্তরা দিনব্যাপী উপবাস রাখেন, পূজা করেন এবং মোক্ষলাভের জন্য তাঁরা আশীর্বাদ প্রার্থনা করেন।
মিলাদ-উন-নবী (১৯ অক্টোবর)
মিলাদ-উন-নবী বা ঈদ-ই-মিলাদ মহানবী হযরত মুহাম্মদের জন্মদিন পালন করা হয়। তিনি ইসলামী বর্ষপঞ্জির তৃতীয় মাস রবিউল আউয়ালের দ্বাদশ দিনে মক্কায় জন্মগ্রহণ করেন।
কোজাগরী পূর্ণিমা ( ১৯ অক্টোবর)
আশ্বিনের পূর্ণিমা দিনটি শারদ বা কোজাগরী পূর্ণিমা নামেও পরিচিত। এই দিনে, ভক্তরা দিনব্যাপী উপবাস রাখেন। পূর্ব ভারতে বাসিন্দারা বিশ্বাস করেন এই শুভ দিনে লক্ষ্মীর আরাধনা করলে গৃহে সমৃদ্ধি ও শান্তি বিরাজ করে।
বাল্মীকি জয়ন্তী এবং মীরাবাই জয়ন্তী (২০ অক্টোবর)
মহান সংস্কৃত লেখক মহর্ষি বাল্মীকি এবং কবি মীরাবাইয়ের জন্মবার্ষিকী এই দিনে পালন করা হয়। প্রাচীন ভারতের অন্যতম মহাকাব্য রামায়ণ রচনার জন্য বাল্মীকিকে স্মরণ করা হয। অন্যদিকে মীরাবাই শ্রীকৃষ্ণের প্রতি তাঁর পরম ভক্তির জন্য পরিচিত।
বক্রতুণ্ড সংকুষ্টি চতুর্থী (২৪ অক্টোবর)
ভগবান গণেশের ভক্তরা প্রতি চতুর্থী তিথি, কৃষ্ণপক্ষ (চাঁদের ক্ষয়প্রাপ্ত পর্যায়) -এ সংকুষ্ঠি ব্রত পালন করেন। কার্তিক মাসের সংষ্কৃতি, কৃষ্ণপক্ষ (পূর্ণিমান্ত ক্যালেন্ডার অনুযায়ী), তাকে বলা হয় বক্রতুন্ড সংকুষ্টি চতুর্থী ব্রত। ভক্তরা দিনভর উপবাস রাখেন এবং সন্ধ্যায় চাঁদ দেখার পরই উপবাস ভঙ্গ করেন।
কারওয়া চৌথ (২৪অক্টোবর)
এই দিনে, বিবাহিত মহিলারা তাঁদের স্বামীর সুস্থতা ও দীর্ঘায়ু জীবনের জন্য প্রার্থনা করেন। এর জন্য সারাদিন ধরে উপবাস রাখেন। অবিবাহিত মেয়েরা তাঁদের পছন্দের জীবনসঙ্গী পেতে এই ব্রত পালন করেন। সন্ধ্যার পর, চাঁদ দেখে পূজা করার পর, মহিলারা তাঁদের উপবাস ভঙ্গ করেন।
আরও পড়ুন: Navratri: সারা বছর স্বাভাবিক থাকলেও নবরাত্রির দিনগুলিতে এই মন্দিরের দেবীমূর্তির আকার বৃদ্ধি পায়!