রূপং দেহি, জয়ং দেহি, যশো দেহি দ্বিষো জহি — ভক্তি ভরে, শুদ্ধ চিত্তে দেবীর আরাধনায় মগ্ন হন অনেকেই। ভারতের বিভিন্ন জায়গায় দেব-দেবীর একাধিক মন্দির রয়েছে। মা দুর্গারও একাধিক মন্দির রয়েছে ভারতে। পড়শি দেশেও রয়েছে এক অতিপ্রাচীন দেবী দুর্গার মন্দির। ১০০, ২০০ বা ৫০০ নয়, প্রায় ৮০০ বছরের পুরনো সেই মন্দির। যা এখনও স্বমহিমায় রয়েছে বাংলাদেশে। এই প্রতিবেদনে তুলে ধরা হল ঢাকার ঢাকেশ্বরী মন্দিরের মাহাত্ম। বাংলাদেশের জাতীয় মন্দির হিসেবে স্বীকৃতি পেয়েছে ঢাকার এই ঢাকেশ্বরী মন্দির। এও বলা হয় দেবীর নাম অনুসারে বাংলাদেশের রাজধানী ঢাকার নামকরণ করা হয়েছিল।
বাংলাদেশের জাতীয় মন্দির ঢাকেশ্বরী মন্দিরের ইতিহাস —
এই মন্দিরের ইতিহাস সম্পর্কে নানান গল্প শোনা যায়। শোনা গিয়েছে, সেন রাজবংশের রাজা বল্লাল সেন ঢাকায় এই মন্দিরটি প্রতিষ্ঠা করেছিলেন। এই মন্দির নিয়ে নানা কথা প্রচলিত রয়েছে। কথিত আছে রাজা বিজয় সেনের স্ত্রী পুণ্যস্নানের জন্য লাঙ্গলবন্দে গিয়েছিলেন। সেখান থেকে রানী ফেরার পথে জঙ্গলে এক পুত্র সন্তানের জন্ম দেন। তিনি বল্লাল সেন। পরবর্তীতে বল্লাল সেন যখন নিজের জন্মস্থানকে মহিমান্বিত স্থান বলে উল্লেখ করতে চেয়েছিলেন, তাই সেখানে মন্দির স্থাপন করেছিলেন। আবার এও কথিত আছে যে, বল্লাল সেন একবার স্বপ্ন দেখেছিলেন যে, জঙ্গলের নীচে একটি দেবীর মূর্তি ঢাকা রয়েছে পাতায়। সেই মূর্তি সেখান থেকে উদ্ধার করে ঢাকেশ্বরী মন্দির নির্মান করেন রাজা। দেবীর মূর্তি জঙ্গলে ঢাকা অবস্থায় পেয়েছিলেন বলে দেবীর নাম হয় ‘ঢাকা + ঈশ্বরী’ বা ‘ঢাকেশ্বরী।’
বাংলাদেশের সবচেয়ে পুরনো মন্দিরের একটি এই ঢাকার ঢাকেশ্বরী মন্দির। ১৯৯৬ সালে ঢাকেশ্বরী মন্দিরকে বাংলাদেশের জাতীয় মন্দির হিসেবে ঘোষণা করা হয়। ঢাকা শহরের পলাশী ব্যারাক এলাকায় অবস্থিত দেবী দুর্গার এই মন্দির। অরফানেজ রোড, চকবাজারে রয়েছে ঢাকার ঢাকেশ্বরী মন্দির। দেবীর ভক্তরা যতদিন এই মন্দিরে যাবেন, তিনি যেন ততদিনই বিরাজমান থাকবেন। এত পুরনো মন্দির, কিন্তু রক্ষণাবেক্ষণে ত্রুটি রাখেনি বাংলাদেশ সরকার। তাই এখানে যতদিন ভক্ত সমাগম হবে, ততদিনই অক্ষত থাকবে এই মন্দির।
মন্দিরের ভেতরের প্রবেশ করার পরই পড়ে একটি দূর্গমন্ডপ। মূল মন্দিরের চত্বরে রয়েছে একটি শিবমন্দির। সেখানে শ্বেত শিবলিঙ্গ রয়েছে। এ ছাড়াও এক জায়গায় পরপর চারটি শিব মন্দির। অপর এক প্রবাদ অনুযায়ী দেবী সতীর দেহের ৫১টি খণ্ড যে সব জায়গায় পড়েছিল, সেগুলি পীঠস্থান হিসেবে পরিচিত। প্রচলিত বিশ্বাস অনুযায়ী সতীর মুকুটের মণি ওই ঢাকেশ্বরী মন্দিরের জায়গায় পড়েছিল। তাই এটা উপপীঠ বলা হয়।
ঢাকার ঢাকেশ্বরী মন্দিরের পুজোর সময়সূচি —
সেখানকার এক পুরোহিতের কথায়, সকাল ৭টায় পুজো হয়। তারপর মন্দিরের গেট খোলা হয়। দুপুর ১২.৩০ অন্নভোগ দেওয়া হয়। দুপুর ১২.৩০ থেকে ১টা অবধি মন্দির বন্ধ থাকে। অন্নভোগ বের হওয়ার পর তা ভক্তদের মধ্যে বিতরণ করা হয়। ২টো অবধি মন্দির খোলা থাকে। দুপুর ২ থেকে বিকেল ৪টে অবধি দেবী শয়নে থাকেন। এরপর বিকেল ৪-রাত ৯টা অবধি মন্দির খোলা থাকে।
মন্দিরে রয়েছে দেবীর অষ্টধাতুর মূর্তি। বাংলাদেশ সরকারের তত্ত্বাবধানে এই মন্দির পরিচালিত হয়। দেবীকক্ষের বাঁমদিকে মহাদেবের মূর্তি রয়েছে। ডানদিকে নারায়ণের বিগ্রহ। পাশে শিবলিঙ্গ ও সন্তোষী মাতার বিগ্রহ। মন্দিরের দেওয়ালে হনুমান ও শ্রীরামচন্দ্রর ছবি খোদাই রয়েছে। মূল মন্দিরের সামনে রয়েছে বিশাল বড় নাটমন্দির। তার পাশেই রয়েছে ভোজনালয়। অবাক করার মতো তথ্য এই যে, ঢাকার ঢাকেশ্বরী মন্দিরে দেবীর মূল মূর্তি আর নেই। কলকাতার কুমোরটুলিতে রয়েছে ঢাকার ঢাকেশ্বরী মন্দিরের আসল দেবীর মূর্তি।