AQI
Sign In

By signing in or creating an account, you agree with Associated Broadcasting Company's Terms & Conditions and Privacy Policy.

একাধারে সফল ডায়েটিশিয়ান, অন্য দিকে মায়ের দায়িত্ব, শাশ্বতীর লড়াইয়ের গল্প অনুপ্রেরণা যোগাবে

শাশ্বতী পেশায় ডায়েটিশিয়ান। মাস্টার্স ও বিএড শেষ করার পরে কলকাতার একটি নামী হেলথ্ কেয়ার সংস্থায় ডায়েটিশিয়ান পদে ৭ বছর কাজ করেন তিনি। ক্লিনিকের বাইরে থাকা রোগীদের ভিড়ই বলে দিত শাশ্বতীর জনপ্রিয়তা

একাধারে সফল ডায়েটিশিয়ান, অন্য দিকে মায়ের দায়িত্ব, শাশ্বতীর লড়াইয়ের গল্প অনুপ্রেরণা যোগাবে
Saswati Paul Saha Image Credit: We Make Us
| Edited By: | Updated on: May 13, 2023 | 7:53 PM
Share

রোজকার ব্যস্ততার চাপে হোক, কিংবা রুটিনমাফিক জীবনযাপনের অভাব, খাওয়া-দাওয়ায় অনিয়মের কারণে অজান্তেই শরীরে বাসা বাঁধছে বিভিন্ন রোগ। ওয়ার্ক-লাইফ ব্যালান্সে কার্যত ঘেঁটে ফেলা দৈনন্দিন জীবনযাত্রার ফাঁকে খেয়াল থাকে না ভাল-মন্দের। পাল্লা দিয়ে বাড়তে থাকে ওজন। সঙ্গে মানসিক অবসাদ। বিগত ১০ বছর ধরে মানুষের শারীরবৃত্তিয় এই সমস্যাগুলি থেকে সমাধানের পথ দেখাচ্ছেন শাশ্বতী পাল সাহা

শাশ্বতী পেশায় ডায়েটিশিয়ান। মাস্টার্স ও বিএড শেষ করার পরে কলকাতার একটি নামী হেলথ্ কেয়ার সংস্থায় ডায়েটিশিয়ান পদে ৭ বছর কাজ করেন তিনি। ক্লিনিকের বাইরে থাকা রোগীদের ভিড়ই বলে দিত শাশ্বতীর জনপ্রিয়তা। মসৃণভাবে চলা এই জীবনযাপনে হঠাৎই বাঁধ সাধে অতিমারি। ২০২০ সালে করোনার চোখরাঙানিতে গোটা বিশ্ব যখন উত্তাল, তখন সেই অনিশ্চয়তার রেশ পড়ে শাশ্বতীর জীবনেও। বাড়িতে একরত্তি শিশুকে রেখে, বাইরে বেরিয়ে কাজ করা তখন কার্যত অসম্ভব হয়ে দাঁড়ায়। কোভিড আক্রান্তের সংখ্যা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে সন্তানকে ঘিরে চিন্তার কালো মেঘ বাড়তে থাকে শাশ্বতীর জীবনে। অবশেষে বন্ধ করতে হয় ক্লিনিকের কাজ। 

Saswati-Paul-Saha-Healthy-Life-With-Saswati

Saswati Paul Saha

আসলে অতিমারির সময়টা সকলের জীবনেই কালো অধ্যায় হিসাবে থেকে গিয়েছে। করোনার সময় মানুষ শুধুমাত্র ঘরবন্দিই হয়ে পড়েননি, সেই সঙ্গে শারীরিক ও মানসিকভাবে বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছিলেন। সেই সময় বহু পুরনো রোগী শাশ্বতীর সঙ্গে যোগাযোগ করতেন। প্রত্যেকের মুখে ছিল একটাই কথা— ‘নতুন কিছু শুরু করুন ম্যাডাম।’ কথাগুলো যেন ক্রমাগত শাশ্বতীর মাথায় ঘোরাফেরা করতে থাকে। সেই মতো মাঠেও নেমে পড়েন তিনি। সঙ্গে ছিল তাঁর স্বামীর সহযোগিতা। এই প্রসঙ্গে শাশ্বতী জানান, “সেই সময় আমার কাছে একটা বিষয় পরিষ্কার ছিল যে অতিমারি রুখতে গেলে মানুষের ইমিউনিটি তৈরি করাটা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। তা ছাড়া সারাদিন বাড়িতে বসে থাকায় কম শারীরিক পরিশ্রমের ফলে বহু মানুষের শরীরে বিভিন্ন রোগ বাসা বাঁধছে। ওজন বেড়ে যাচ্ছে। শ্বাসকষ্ট হচ্ছে। তখনই আমার মাথায় আসে অনলাইনের কথা। সেই সময় রোগীদের কাছে পৌঁছে যেতে অনলাইনের থেকে ভাল মাধ্যম কিছু হতে পারত না।”

সেই শুরু। তার পরে আর পিছনে ঘুরে তাকাতে হয়নি শাশ্বতীকে। ২০২১ সালে একটি ফেসবুক পেজ শুরু করেন শাশ্বতীকে। নাম দেন ‘হেলদি লাইফ উইদ শাশ্বতী।’ অতিমারির সময় শরীরে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ানোর জন্য বিভিন্ন টিপস, ডায়েট সলিউশন ইত্যাদি পোস্ট করতে থাকেন সেই পেজটিতে। বিভিন্ন ভিডিয়ো ও পোস্টের মাধ্যমে এই বিষয়গুলি জানাতেন তিনি। ধীরে ধীরে মানুষ তা সাদরে গ্রহণ করেন। বাড়তে থাকে ফলোয়ার্স। বিভিন্ন প্রান্ত থেকে মানুষ শাশ্বতীর সঙ্গে যোগাযোগ করতে থাকেন ডায়েট সংক্রান্ত বিষয়ে পরামর্শ নেওয়ার জন্য।

Saswati-Paul-Saha-1

Saswati Paul Saha

খুব অল্প সময়েই শাশ্বতী ফের ফিরে আসেন স্বমহিমায়। তাঁর দেওয়া পথ্যে উপকৃত হন বহু মানুষ। পরিসংখ্যাও দারুন। ইতিমধ্যেই প্রায় ৬০০০-এরও বেশি মানুষ যোগাযোগ করেছেন শাশ্বতীর সঙ্গে। দেশ পেরিয়ে বিদেশেও পরিচিতি পেয়েছেন তিনি। এ বিষয়ে প্রশ্ন করা হলে তিনি খানিকটা আবেগপ্রবণ হয়ে পড়েন। বলেন, “এত ভালবাসা আর এত পরিচিতি যে আমি পাব, তা আমি কখনই ভাবিনি।”

আসলে শাশ্বতীর এই সম্পূর্ণ যাত্রার নেপথ্যে রয়েছেন তাঁর মা — শিপ্রা পাল। শাশ্বতীর মা—ই শাশ্বতীর অনুপ্রেরণা। তাঁর থেকেই শাশ্বতী শিখেছেন কী ভাবে মানুষের পাশে দাঁড়াতে হয়। তাঁর দেখানো পথ অনুসরণ করেই বহু মানুষের জীবন বদলে দিয়েছেন তিনি। শাশ্বতী নিজেও মা। তাই তিনি মাতৃস্নেহে রোগীদের পাশে দাঁড়ান। এ বিষয়ে তাঁকে প্রশ্ন করা হলে তিনি বলেন, “আমিও একজন মা। যে ছোট শিশুকে সামলে কোভিডে ঘরবন্দি হয়ে মায়ের দায়িত্ব পালনের সঙ্গে সঙ্গে নিজের স্বপ্নকে বাঁচিয়ে রাখার আপ্রাণ চেষ্টা চালিয়ে গিয়েছি। যা আমাকে কখনও হারতে দেয়নি। আর আমার এই হার না মানা জেদের নেপথ্য নায়িকা আমার মা। তাঁর জন্যেই আমি আজ এতটা পথ অতিক্রম করতে সক্ষম হয়েছি।”

অনেক ছোট বয়সে বাবাকে হারান শাশ্বতী। মা শিপ্রা পাল তখন সংসার সামলাতেন। বহু কষ্ট করে তিনি বড় করেছেন শাশ্বতীকে। এত অনিশ্চয়তার মধ্যেও ঘুরে দাঁড়িয়েছেন শাশ্বতী। ছোট থেকে মেধাবী ছিলেন তিনি। বড় হয়ে যে মানুষের পাশে দাঁড়াবেন, সেই স্বপ্নও ছোট থেকেই দেখতেন শাশ্বতী। 

Saswati-Paul-Mother-Shipra-Paul

Saswati Paul and her Mother Shipra Paul

অতিমারি পর্ব কাটিয়ে বর্তমানে লেকটাউনে নিজস্ব চেম্বার রয়েছে শাশ্বতীর। অনলাইনের পাশাপাশি বহু মানুষ অফলাইনেও ভিজিট করেন। জীবনে চলার পথে শাশ্বতী আজ বহু মানুষের কাছে অণুপ্রেরণা। মা শিপ্রা পালও সগর্বে বলতে পারেন তাঁদের লড়াইয়ের কথা, ঘুরে দাঁড়ানোর কথা। সত্যিই তিনি রত্নগর্ভা। তবে, এখানেই শেষ নয়। শাশ্বতীর লক্ষ্য আরও বড়। জীবনের মঞ্চে আরও অনেকটা উঁচুতে যেতে চান তিনি। সঙ্গে সাধারণ মানুষের ভালবাসা তো রয়েছেই।

সদ্যোজাত মায়েদের জন্য বিশেষ কয়েকটি টিপস দিচ্ছেন শাশ্বতী

  • ২ থেকে ৪ ঘণ্টা অন্তর বুকের দুধ খাওয়ানোর ফলে সদ্যোজাত মায়েদের ডিহাইড্রেশন হতে পারে। তাই দিনে অন্তত ১০-১২ গ্লাস জল খেতে হবে।
  • অত্যাধিক চা-কফি খাওয়া চলবে না।
  • ব্রেকফাস্ট বাদ দেওয়া যাবে না। অন্তত ৩ বার পুষ্টিকর খাওয়া খেতে হবে। ডায়েটে রাখতে পারেন ফল, বাদাম, টোস্ট ইত্যাদি।
  • শিশুদের বিকাশের জন্য ক্যালসিয়াম গুরুত্বপূর্ণ। সেই খেয়াল রাখতে হবে মাকেও। শরীরে ক্যালসিয়াম বাড়াতে দুধ, দই, পনির, সবুজ শাক-সব্জি ইত্যাদি খাওয়া যেতে পারে।
  • বুকের দুধের উৎপাদন বাড়াতে মেথি, জিরা, শুকনো আদা, আজওয়াইন, বাজরা, ওটস, বাদাম, ইত্যাদি খাওয়া প্রয়োজন।

সন্তানসম্ভবাদের জন্য শাশ্বতীর টিপস —

  • পরিমাপমতো খাওয়ার খেতে হবে।
  • ফ্যাটজাতীয়, চিনি জাতীয় এবং স্ন্যাকস এড়িয়ে চলাই শ্রেয়। বরং সুষম খাদ্যগ্রহণ করুন।
  • স্বাস্থ্যকর খাওয়ার খেতে হবে। যেমন ওটমিল, ফলের চাট, স্যান্ডউইচ ইত্যাদি।
  • প্রচুর পরিমাণে ফল ও শাকসবজি অন্তর্ভূক্ত করতে হবে খাদ্য তালিকায়। চাল ও ময়দাজাতীয় খাবার বাদ দিন।
  • পরিষ্কার, পরিচ্ছন্ন থাকুন। ভাল ভাবে রান্না করা খাবার খান। কাঁচা খাবার না খাওয়াই শ্রেয়।