In Depth, Mohammed Shami: সুন্দর সফর থেকে ‘সাফার’, মহম্মদ সামির প্রত্যাবর্তন যেন প্রথম হাঁটতে শেখা…

Mohammed Shami Comeback Story: আবারও অপেক্ষা। তবে এই প্রত্যাবর্তন যেন প্রথম বার হাঁটতে শেখার মতোই। বেশ কয়েকবার হোঁচট, উঠে দাঁড়ানো, আবারও মরিয়া চেষ্টা, হোঁচট...চেষ্টা। ঘরোয়া ক্রিকেটে হলেও জাতীয় দলে ফেরার আগে পর্যন্ত পুরোপুরি যেন 'কামব্যাক'ও বলা যাচ্ছে না...।

In Depth, Mohammed Shami: সুন্দর সফর থেকে 'সাফার', মহম্মদ সামির প্রত্যাবর্তন যেন প্রথম হাঁটতে শেখা...
Image Credit source: X, TV9 Bangla Graphics
Follow Us:
| Updated on: Nov 21, 2024 | 5:21 PM

পেরিয়ে গিয়েছে গোটা একটা বছর। কিন্তু ক্ষত এখনও অক্ষত। ঘরের মাঠে ওয়ান ডে বিশ্বকাপে অল্পের জন্য ট্রফি হাতে তোলা হয়নি রোহিতদের। তবু ওই সফর অন্যতম সেরা অধ্যায় হয়ে থাকবে ভারতীয় ক্রিকেটে। টানা দশ ম্যাচ জিতে ফাইনাল! যা আগে কখনও হয়নি। এমন অকল্পনীয় সাফল্যে বিশেষ অবদান ছিল মহম্মদ সামির। তাঁকে ঠিক কী বলা যায়? বিশ্বকাপ স্পেশালিস্ট? বললে কি ভুল হবে? লাল-বলেও একইরকম স্পেশাল সামি। বিশ্বকাপ ট্রফি দেশে রাখতে না পারার মাঝে আরও একটা অস্বস্তির শুরু হয়েছিল ফাইনালের পর। সুন্দর সফরের পর মহম্মদ সামির ‘সাফার’। ভেঙে বললে, যন্ত্রণাযাপন!

ওয়ান ডে বিশ্বকাপের শুরুতে কাটাতে হয়েছিল বেঞ্চে। এটা যেন ভারতীয় ক্রিকেটে রীতি হয়ে দাঁড়িয়েছিল। ক্যাপ্টেন-কোচ বদলালেও ধারা অব্যহত। সামির প্রথম ওয়ান ডে বিশ্বকাপ ২০১৫ সালে। অস্ট্রেলিয়া ও নিউজিল্যান্ড যুগ্ম আয়োজক ছিল। সে বারও হাতে গোনা ম্যাচ খেলার সুযোগ পেয়েছিলেন সামি। তাতেও দুর্দান্ত পারফরম্যান্স। ২০১৯ সালেও একই ঘটনা। সামি অটোমেটিক চয়েস নন। কিন্তু চকিত সুযোগেই তাক লাগানো পারফরম্যান্স, এমনকি বিশ্বকাপের মঞ্চে হ্যাটট্রিকও করেছিলেন।

রীতি বজায় ছিল গত বিশ্বকাপেও। প্রথম চার ম্যাচ বেঞ্চেই। মহম্মদ সামি কত বড় টিম প্লেয়ার, তাঁর অভিব্যক্তি, শরীরীভাষা, সতীর্থদের সাফল্যে উচ্ছ্বাসের মাধ্যমেই বুঝিয়ে দিয়েছেন। বাংলাদেশ ম্যাচে হার্দিক পান্ডিয়ার চোটে একাদশে এন্ট্রি সামির। তারপর, সুন্দর সফর। বিশেষ করে ইংল্যান্ডের বিরুদ্ধে। মাত্র ২২৯ রান করেছিল ভারত। ওই ম্যাচ ১০০ রানে জেতা যাবে, ভারতের অতি বড় সমর্থকও কল্পনা করেননি। কিন্তু জসপ্রীত বুমরার সঙ্গে সামিও যে ছিলেন! বিশ্বকাপ স্পেশালিস্ট কি এমনিই? চার উইকেট নিয়েছিলেন সামি। ‘বিধ্বংসী’ ব্যাটিং লাইন আপ নিয়েও ১২৯ রানেই অলআউট ইংল্যান্ড।

আর ওয়াংখেড়েতে নিউজিল্যান্ডের বিরুদ্ধে সেমিফাইনাল! সোশ্যাল মিডিয়ায় ট্রেন্ডিং ছিল ‘সামি-ফাইনাল’। সাত উইকেট! বিশ্বকাপের মঞ্চে! সাত ম্যাচে ২৪টি উইকেট নিয়েছিলেন। শরীরের উপর কতটা প্রেসার পড়েছিল, সে সময় বোঝা যায়নি। বিশ্বকাপের পরই হাঁটুর চোট ধরা পড়ে। একের পর এক সিরিজ মিস করেন সামি। অস্ত্রোপচার হয়, রিহ্যাব পর্বও শুরু হয়। ক্রাচ হাতে হাঁটার ছবি সোশ্যাল মিডিয়ায় পোস্ট করতেই সকলে অপেক্ষা শুরু করেন সামির প্রত্যাবর্তনের। কিন্তু সেই অপেক্ষা যেন অনন্ত! কয়েক দিনের বিরতিতে ভিডিয়ো। মহম্মদ সামি নেটে বোলিং করছেন। তার কয়েক দিনের ব্যবধানে নেটে বিধ্বংসী ব্যাটিংয়ের ভিডিয়ো। সব যখন ঠিক হওয়ার পথে নতুন চোট।

পেসাররা বরাবরই চোটপ্রবণ হন। তিন ফর্ম্যাটে দীর্ঘ সময় খেলা চালিয়ে যাওয়া সহজ নয়। রিহ্যাব যখন শেষের পথে, সামির হাঁটু ফুলে গিয়েছিল। লকডাউনের একটি ঘটনা মনে পড়ছে। ভারতের এক তারকা পেসার শেয়ার করেছিলেন। লকডাউনে ক্রীড়াবিদরা নিজেদের ফিট রাখতে নানা ভাবে প্রস্তুতির মধ্যে থাকার চেষ্টা করেছিলেন। কিন্তু বোলারদের পক্ষে পুরোটা সম্ভব নয়। সাধারণ হাঁটাচলা করা, দৌড়নোর সময় পায়ে চাপ পড়েই। কিন্তু ফুল রান আপে বোলিংয়ের সময় যে চাপ পড়ে, তা জগিংয়ে কিংবা ট্রেডমিলে দৌড়ে পুষিয়ে দেওয়া সম্ভব নয়।

ঘরের মাঠে বাংলাদেশের বিরুদ্ধে দু-ম্যাচের টেস্ট সিরিজ খেলেছিল ভারত। প্রথম ম্যাচ ছিল বেঙ্গালুরুতে। রিহ্যাব পর্ব ঠিকঠাক হওয়ায় বাংলাদেশ টেস্ট শেষ হতেই বেঙ্গালুরুর নেটে প্রায় ঘণ্টা দেড়েক বোলিং করেন মহম্মদ সামি। তখনও অবধি প্রত্যাশা ছিল নিউজিল্যান্ড সিরিজ না হলেও অস্ট্রেলিয়া সফরে শুরু থেকেই পাওয়া যাবে সামিকে। কিন্তু তাতেও জোরালো ধাক্কা। রিহ্যাব পর্বে হয়তো বাড়তি চাপের কারণেই হাঁটু ফুলে গিয়েছিল। নতুন করে রিহ্যাব শুরু করতে হয়। অপেক্ষা বাড়ে। সেরেও ওঠেন। কিন্তু ফিটনেসের প্রমাণ দিতে হবে। ঘরোয়া ক্রিকেটই উপায়।

রঞ্জি ট্রফিতে তিনি যে খেলবেন এবং ফিটনেসের প্রমাণ দেবেন, টুর্নামেন্ট শুরুর আগেই জানিয়ে দিয়েছিলেন। রঞ্জি ট্রফি শুরু হতেই ফের অপেক্ষা। ওয়ার্কলোড ম্যানেজে বিশ্রাম আর চোট সারিয়ে ফেরা এক নয়। ঘরের মাঠে কেরল ম্যাচে খেলার কথা ছিল সামির। তাতেও দেখা মেলেনি। প্রথম পর্বের শেষ দুটি ম্যাচ ছিল কর্নাটক ও মধ্যপ্রদেশের বিরুদ্ধে স্কোয়াডে ছিলেন না বাংলার পেসার। বেঙ্গালুরুতে ম্যাচ শেষে সতীর্থদের সঙ্গে দেখা করেন। শেষ মুহূর্তে মধ্যপ্রদেশ ম্যাচে স্কোয়াডে যোগ করা হয় সামিকে। প্রতিযোগিতা মূলক ম্যাচে প্রত্যাবর্তনেই সাত উইকেট। ব্যাট হাতেও অবদান রাখেন। মরসুমের প্রথম জয় ছিনিয়ে নেয় বাংলা। সৈয়দ মুস্তাক আলি টি-টোয়েন্টির জন্য বাংলার ঘোষিত স্কোয়াডেও রয়েছেন সামি। শুধু অপেক্ষা, অস্ট্রেলিয়া সফরের ডাকের।

একটা বছর অনেক অনেকটা সময়। চোট থাকলে কী আর করা যাবে! কোনও বিতর্ক নয়, তবে কিছু প্রশ্ন যেন ভিড় করে। সামি কি আরও আগে ফিট হতে পারতেন? জাতীয় ক্রিকেট অ্যাকাডেমির মেডিক্যাল টিম কি সর্বস্ব দিয়েছিলেন সামিকে ফিট করে তুলতে? রিহ্যাব শেষ হওয়ার পর কেন নতুন করে সমস্যা হল! বোর্ডের তরফে সরকারি ভাবে তাঁর কোনও মেডিক্যাল আপটেড কেন দেওয়া হয়নি! আসলে এই প্রশ্নগুলো যেন অরণ্যে রোদনের মতো। জবাব খুঁজে পাওয়া যাবে না।

পারথে প্রথম টেস্টে তাঁকে পাওয়া যাবে না ঠিক। অ্যাডিলেডে গোলাপি বলে দিন-রাতের টেস্টের আগে কি সামিকে অস্ট্রেলিয়া সফরের স্কোয়াডে যোগ করা হবে? আবারও অপেক্ষা। হয়তো। রোহিত শর্মার সঙ্গে একই বিমানে পাড়ি দেবেন সামি! তবে এই প্রত্যাবর্তন যেন প্রথম বার হাঁটতে শেখার মতোই। বেশ কয়েকবার হোঁচট, উঠে দাঁড়ানো, আবারও মরিয়া চেষ্টা, হোঁচট…চেষ্টা। ঘরোয়া ক্রিকেটে হলেও জাতীয় দলে ফেরার আগে পর্যন্ত পুরোপুরি যেন ‘কামব্যাক’ও বলা যাচ্ছে না…।