কলকাতা: ক্রিকেট খেলার জেদ মনের মধ্যে নিয়ে অনেক তরুণ ক্রিকেটার বাড়ি ছাড়েন। কিন্তু তাঁদের মধ্যে সকলে সফল হতে পারেন না। আবার কেউ কেউ হয়ে ওঠেন রিয়েল লাইফের হিরো। তেমনই এক হিরোর গল্প আজ আপনাদের শোনাব। মাত্র ৮ বছর বয়সে বাড়ি ছেড়েছিলেন আশুতোষ শর্মা (Ashutosh Sharma)। চোখে ছিল ক্রিকেটার হয়ে ওঠার একরাশ স্বপ্ন। কিন্তু স্বপ্ন শুধু দেখলেই তো হয় না, তা পূরণ করার জন্য অনেক কাঠখড় পোড়াতে হয়। বছর ২৫ এর আশুতোষকে সেটাই করতে হয়েছিল। অনেকটা পথ পেরিয়ে সাফল্য মুঠোয় এসেছে আশুোষের। একসময় বলবয় থেকে শুরু করে আম্পায়ারিং কী করেননি! এখন প্রীতির সংসারে আশার আলো নিয়ে হাজির হয়েছেন ওই তরুণ ক্রিকেটার।
দুবাইতে হওয়া মিনি নিলামে ২০ লক্ষ টাকা দিয়ে পঞ্জাব কিংস কিনেছে আশুতোষকে। মধ্যপ্রদেশের এই ক্রিকেটার এখন রেলের হয়ে খেলেন। আইপিএলে তিনি সুযোগ পাবেন কিনা, তা নিশ্চিত নয়। কিন্তু একাধিক তারকা ক্রিকেটারদের সান্নিধ্যে থাকতে পারবেন, তাঁদের কাছ থেকে দেখে অনেক কিছু শেখার সুযোগ পাবেন। এটাই খুশি করছে আশুতোষকে। শুধু তাই নয়, পঞ্জাব কিংসে আশুতোষ পাবেন নিজের আদর্শ ক্রিকেটারের কাছে শেখার সুযোগ।
মধ্যপ্রদেশের ছোট্ট একটা শহর রৎলামে বাড়ি আশুতোষের। তাঁর আদর্শ ক্রিকেটার সঞ্জায় বাঙ্গার। কয়েকদিন আগে মুম্বইয়ে প্রস্তুতি শিবিরে সঞ্জয়ের সঙ্গে দেখা হয়েছে আশুতোষের। অবশ্য সেটা তাঁর সঙ্গে আশুতোষের প্রথম সাক্ষাৎ নয়। বছর ১২ আগে সঞ্জয়ের সঙ্গে তাঁর দেখা হয়েছিল। একটি পুরনো ছবি নিজের মোবাইল থেকে সঞ্জয়কে দেখান আশুতোষ। পঞ্জাব কিংস সেই ভিডিয়ো শেয়ার করেছে সোশ্যাল মিডিয়া সাইট X এ। সেই সময় আশুতোষ ছিলেন বলবয়। আর তখন সঞ্জয় আইপিএলের পুরনো ফ্র্যাঞ্চাইজি কোচি টাস্কার্সের সঙ্গে যুক্ত ছিলেন। সেই সুবাদেই সঞ্জয়ের সঙ্গে ২০১১ সালে প্রথম বার দেখা হয়েছিল আশুতোষের। তাঁর কথায়, ‘বাঙ্গার স্যারের সঙ্গে প্রথম দেখা হওয়ার দিনটা আজও আমার মনে রয়েছে। তখন আমার বয়স ১০ কী ১১ ছিল। আমি তাঁর কাছে আমার ব্যাটিং কী ভাবে উন্নত করতে পারি সেই বিষয়ে জানতে চেয়েছিলাম। এখন আমার স্বপ্নপূরণ হয়েছে। আমি পঞ্জাব কিংস টিমে সুযোগ পেয়েছি। এ বার তিনি আমাকে কোচিং করাবেন।’
মাত্র ৮ বছর বয়সে বাড়ি ছেড়ে বেরিয়েছিলেন আশুতোষ। আসলে রৎলামে সেভাবে ক্রিকেটের প্রশিক্ষণের তেমন সুযোগ সুবিধা নেই। তাই ইন্ডোরে মধ্যপ্রদেশ ক্রিকেট অ্যাসোসিয়েশনের আবাসিক অ্যাকাডেমিতে আশুতোষকে তাঁর বাবা ভর্তি করে দিয়েছিলেন। পুরনো দিনের কথা মনে করে আশুতোষ বলেন, ‘যখন আমি বাড়ি ছেড়েছিলাম, সেই সময় আমার কাছে যথেষ্ট টাকা ছিল না। একটা ক্রিকেট ক্যাম্পে গিয়ে আমি আম্পায়ারিং করতাম। তার থেকে দুপুরের খাওয়ার একটা ব্যবস্থা হয়ে যেত। এবং আমার পরিবারের সামর্থ্য ছিল অত্যন্ত সীমিত। তার ফলে যা চাইতাম, তার সব পেতাম না। আমি যে অসুবিধার সম্মুখীন হতাম, সে কথা আমার বাড়িতে জানাতাম না। আমার পরিবারকে আমার জন্য চিন্তা করতে দিতে চাইতাম না।’
মধ্যপ্রদেশের হয়ে অনূর্ধ্ব-১৬ ও অনূর্ধ্ব-১৯ টিমে খেলেছেন আশুতোষ। চলতি বছরে তাঁর রেলওয়েজের জার্সিতে রঞ্জি অভিষেক হয়েছে। এখনও অবধি তিনি ৪টি প্রথম শ্রেণির ম্যাচ খেলেছেন। তাতে করেছেন ২৬৮ রান। সর্বাধিক ১২৩ রান। রয়েছে ১টি সেঞ্চুরি ও ১টি হাফসেঞ্চুরি।