
মহম্মদ সামি। নামটা মনে পড়তেই চোখের সামনে ভেসে আসে নানা মুহূর্ত। সোজা সিম, পিচে পড়েই ইন কিংবা আউট সুইং। কখনও ব্যাটের কানায় লেগে উইকেটের পিছনে। কখনও আবার অফস্টাম্পের সামান্য বাইরে পড়ে উইকেট ছিটকে দেওয়া! বলের রং লাল হোক কিংবা সাদা, ফরম্যাট-টুর্নামেন্ট যাই হোক, এমন দৃশ্য দেখতেই অভ্যস্ত ভারতীয় ক্রিকেট প্রেমীরা। বিশ্ব ক্রিকেটে বর্তমানে যত পেসার রয়েছেন, পারফেক্ট সিম পজিশন বলতে যা বোঝায়, সেটা রয়েছে সামিরই। কিন্তু এ বার কী হল! সেই সামি, নেই সামি?
ইন্ডিয়ান প্রিমিয়ার লিগ শেষেই ইংল্যান্ড সফরে যাবে ভারতীয় ক্রিকেট দল। মনে হতেই পারে, আইপিএলের সঙ্গে এই সফরের কী সম্পর্ক? একটা ফ্র্যাঞ্চাইজি ক্রিকেট, আর একটা দেশের জার্সিতে। আরও পার্থক্য রয়েছে। টেস্ট দীর্ঘ ফরম্যাট, আইপিএল টি-টোয়েন্টি। ইংল্যান্ডে লাল বলের ক্রিকেট, আইপিএলে সাদা বলের। সব মেনে নিয়েও কেমন একটা অস্বস্তির পরিবেশ তৈরি হয়েছে।
সামির আইপিএল পারফরম্যান্স কেন এবার এত গুরুত্ব দিয়ে ভাবা হচ্ছে? প্রতিদ্বন্দ্বিতা অনেক বেশি। জসপ্রীত বুমরা রয়েছেন। মহম্মদ সিরাজ দুর্দান্ত বোলিং করছেন। তরুণদের মধ্যে অর্শদীপ সিং, খলিল আহমেদরাও। তেমনই প্রসিধ কৃষ্ণর কথা ভুললে চলবে না। টেস্টে সীমিত সুযোগে পারফর্ম করেছেন প্রসিধ। আইপিএলেও ধারাবাহিক ভালো খেলছেন। তা হলে কি সামির জায়গা নিয়ে সন্দেহ রয়েছে? হয়তো না! কিংবা হ্যাঁ!
না কেন? মহম্মদ সামির মতো অভিজ্ঞ পেসারকে ইংল্যান্ডের মতো গুরুত্বপূর্ণ সিরিজে অবশ্যই চাই। সে কারণেই তাঁকে বাদ দিয়ে ইংল্যান্ড সফরের দল তৈরি হবে, এমনটা কল্পনার বাইরে। এবার হ্যাঁ কেন? সানরাইজার্স জার্সিতে মহম্মদ সামির সেই ধার খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না। ২০১৮ সালের পর আইপিএল কেরিয়ারে সামির ইকোনমি কখনও ডাবল ডিজিটে ছিল না। যেটা এবার রয়েছে। এখনও অবধি ৯ ম্যাচ খেলেছেন। উইকেট নিয়েছেন ৬টি। সবচেয়ে চিন্তার ইকোনমি। সেটি ১১-এর বেশি! সামির থেকে যা অপ্রত্যাশিত। চোটের কারণে আইপিএলের গত মরসুমে খেলতে পারেননি। তার আগের চার মরসুম দুর্দান্ত কেটেছে। বিশেষ করে গুজরাট টাইটান্সের হয়ে।
মনে হতেই পারে, আইপিএলের পারফরম্যান্স দিয়ে সামিকে বিচার করা কি ঠিক হবে? তা কখনোই নয়। কিন্তু সামি শেষ টেস্ট কবে খেলেছিলেন মনে পড়ে? গুগল করার প্রয়োজন নেই, বলেই দেওয়া যাক। ২০২৩ সালের জুন মাসে গত বিশ্ব টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপ ফাইনালে। সে বছর ঘরের মাঠে ওয়ান ডে বিশ্বকাপের পরই চোটের কারণে দীর্ঘ সময় মাঠের বাইরে ছিলেন। গত বছর ঘরের মাঠে বাংলাদেশ, নিউজিল্য়ান্ড এবং অস্ট্রেলিয়ায় বর্ডার-গাভাসকর ট্রফিতেও পাওয়া যায়নি। লাল-বলের ক্রিকেটে খেলেছেন গত রঞ্জি ট্রফিতে। তাও সব ম্যাচে পাওয়া যায়নি। আর রঞ্জি ট্রফির প্রতিপক্ষ এবং ইংল্যান্ডের মাটিতে ইংরেজ ব্যাটারদের সঙ্গেও গুলিয়ে ফেললে চলবে না।
আইপিএলের আগেই চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফি জিতেছে ভারত। আর তাতে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রয়েছে সামির। কিন্তু আইপিএলে তাঁর লাইন-লেন্থ, ইকোনমি, উইকেট নেওয়ার দক্ষতা, সবই স্ক্যানারে। হাতে গোনা কয়েকটি ম্যাচ সামির সামনে। এটাই যেন সামির কাছে ছন্দে ফেরার সুযোগ। ভারতীয় ক্রিকেট প্রেমীরা সেই অপেক্ষাতেই। কারণ, সামিকে ছাড়া ইংল্যান্ড সফরের দল কোনওভাবেই কল্পনায় আসে না। কিন্তু সেরা ছন্দের সামিকেও প্রয়োজন।