
বিনোদনের ক্রিকেট। ক্রিকেটের বিনোদন। ইন্ডিয়ান প্রিমিয়ার লিগ শুধু তাই নয়। নতুন ক্রিকেটারদের উত্থানের মঞ্চও। ভারত এবং বিশ্ব ক্রিকেটের অনেক তারকার জন্ম দিয়েছে আইপিএল। এই কথা গুলো বড্ড শোনা লাগতে পারে। সেটাই স্বাভাবিক। আরও একটা নাম চেনা লাগবে। সাই সুদর্শন। তাঁর পরিচিতিটা এখন আর শুধু আইপিএলেই সীমাবদ্ধ নয়। বিশ্ব ক্রিকেটে কিছুটা পরিচিতি হয়েছে, তবে এটুকু বলা যায় এবারের আইপিএলের পর টেস্ট ক্রিকেটের মঞ্চ তাঁর জন্য পাকা। একটা চোটই যেন এই টিকিটের প্রথম ধাপ।
ফিরে যেতে হবে একটু পিছনের দিকে। ইন্ডিয়ান প্রিমিয়ার লিগে ২০২২ সালে দুই নতুন টিমের অভিষেক হয়। লখনউ সুপার জায়ান্টস এবং গুজরাট টাইটান্স। অভিষেক মরসুমেই চ্যাম্পিয়ন হয়েছিল টাইটান্স। সে সময় ব্যাটিং আক্রমণে শুভমন গিল, ম্যাথিউ ওয়েড, ডেভিড মিলার, হার্দিক পান্ডিয়ার মতো বড় বড় নাম। তরুণ ক্রিকেটার সাই সুদর্শন স্কোয়াডে থাকলেও অপরিচিত মুখ। সকলের সুযোগ পাওয়ার কথাও নয়। অবশেষে তৃতীয় ম্যাচে সুযোগ পান সাই। ৩৫ রান করলেও স্ট্রাইকরেট মাত্র ১১৭-এর মতো। সব মিলিয়ে সেবার ৫ ম্যাচে সুযোগ পেয়েছিলেন। করেছিলেন ১৪৫ রান। স্ট্রাইকরেট ১২৭-এর মতো। টি-টোয়েন্টির মতো বলা যায় না।
ঘরোয়া ক্রিকেটে পারফর্ম করলেও ২০২৩ সালের আইপিএলে টাইটান্স একাদশে নিশ্চিত ছিলেন না সাই সুদর্শন। সে বার টাইটান্সে যোগ দিয়েছেন কেন উইলিয়ামসন। প্রথম ম্যাচে প্রথম একাদশে ছিলেন না সাই। প্রত্যাশিতই। তাঁকে ওয়েটিং লিস্টে খুব বেশিক্ষণ থাকতে হয়নি। সে বারের টুর্নামেন্টের প্রথম ম্যাচ। চেন্নাই সুপার কিংসের বিরুদ্ধে ম্যাচ। প্রথমে ব্যাট করে চেন্নাই। কিন্তু এই ইনিংসেই টাইটান্সের একটা বড় ক্ষতি হয়। বাউন্ডারি লাইনে ফিল্ডিংয়ের সময় চোট লাগে কেন উইলিয়ামসনের। তখনও চোট কতটা গুরুতর, আন্দাজ করা যায়নি। টাইটান্সের ব্যাটিং শুরুর সময়ও না।
ওপেনিংয়ে নামেন ঋদ্ধিমান সাহা ও শুভমন গিল। চতুর্থ ওভারে ঋদ্ধি ক্যামিও ইনিংস খেলে আউট। হঠাৎ দেখা যায়, সাই সুদর্শন নামছেন। জানানো হয়, কেন উইলিয়ামসনের পরিবর্তে ইমপ্যাক্ট প্লেয়ার হিসেবে নামছেন সাই। সেই শুরু। আর পিছন ফিরে তাকাতে হয়নি। সে মরসুমে ৮ ম্যাচে সুযোগ পেয়েছিলেন। ৩৬২ রান করেন সাই। স্ট্রাইকরেট প্রায় ১৪২! তিনটি হাফসেঞ্চুরি। একটি ৯৬ রানের ইনিংস। সেটিও এসেছিল ফাইনালের মঞ্চে। ম্যাচটা শেষ বলে হারলেও সাইয়ের ইনিংস টার্নিং পয়েন্ট হয়ে দাঁড়িয়েছিল।
আইপিএল, ঘরোয়া ক্রিকেট, ভারতের যুব দল, সিনিয়র টিমের হয়ে সীমিত সুযোগ। কাউন্টি ক্রিকেটেও খেলেছেন। যেটুকু সুযোগ পেয়েছেন, তিন ফরম্যাটেই নজর কেড়েছেন। এবারের আইপিএলেও একের পর এক সুদর্শন ইনিংস। ইংল্যান্ড সফরে প্রত্যাশিত ভাবেই ভারত এ-দলেও সুযোগ পেয়েছেন। টেস্ট স্কোয়াডে সুযোগ সময়ের অপেক্ষা। এ মরসুমে ১২ ম্যাচে ৬১৭ রান! ৫টি হাফসেঞ্চুরি। আর দিল্লি ক্যাপিটালসের বিরুদ্ধে ১০৮ রানের ইনিংসে টেস্টের একাদশেও যেন জায়গা নিশ্চিত করে নিয়েছেন। যিনি টি-টোয়েন্টির গতিময় ক্রিকেটে এত সুন্দর ব্যাটিং করেন, টেস্টে সময় নিয়ে আরও ভালো ইনিংস যে খেলতে পারবেন, এটুকু ভরসা করাই যায়।
রোহিত শর্মার অবসরে টেস্ট ক্রিকেটে ওপেনিং স্লটে এমনই একজন তো চাইছিলেন গম্ভীর! কিংবা বিরাটের চার নম্বর জায়গাও মন্দ নয়। টপ ফোরে ব্যাটিংয়ের অভিজ্ঞতা রয়েছে। ইংল্যান্ডের বিরুদ্ধে টেস্ট স্কোয়াডে যেমন থাকবেন, একাদশেও তাঁর জায়গা যে নিশ্চিত, এটা অনুমান করতে আর কোনও ভুল হয় না। এখন শুধুই অপেক্ষা, ছন্দ ধরে রাখার।